শিরোনাম
ঐক্য ও অস্তিত্বের প্রতীক শেখ হাসিনা
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:২৩
ঐক্য ও অস্তিত্বের প্রতীক শেখ হাসিনা
মুহাম্মদ সামাদ
প্রিন্ট অ-অ+

উনিশশো পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মম হত্যা করা হয়। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর আদরের দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। বাবা-মা-ভাইসহ স্বজন হারানোর অসহনীয় বেদনা বুকে নিয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে অর্ধ যুগের বেশি সময় কাটাতে হয় নির্বাসিত জীবন। বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে পাকিস্তানি চেতনায় ফিরিয়ে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধকে চিরতরে মুছে ফেলা। সেই লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মধ্যে দিয়ে সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও ছাত্র লীগসহ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার, নির্যাতন ও গুমখুনের নির্দয়তায় বাংলার আকাশবাতাস ভারী হয়ে চলছিল প্রতিদিন।


সেই দুঃসময়ে প্রধানত বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে গভীর রাতে রাতে ‘মুজিব হত্যার পরিণাম, বাংলা হবে ভিয়েতনাম’ শ্লোগান দিয়ে তাৎক্ষণিক মিছিলের করে প্রতিবাদের হতে থাকে। এই প্রতিবাদের কেন্দ্রে ছিল আমাদের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল। এভাবে, কয়েক বছরে সেই বর্বরতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব হলেও তা বারবার বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। কারণ, সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়ার রক্তচক্ষু, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও প্রলোভনের রাজনীতির পরিণতিতে আওয়ামী লীগে ঐক্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। মাতৃভূমির সেই ঘোরতর সংকটকালে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে আমাদের মুক্তির বারতা নিয়ে দেশে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।


বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ফিরে আসা শুধু নয়, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের প্রেক্ষাপট তৈরি হতে থাকে দলের ১৯৭৮ সালের সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশন থেকে, আর তা অনিবার্য হয়ে পড়ে ১৯৮১ সালের সম্মেলনে। ছাত্র লীগের একজন নগণ্য কর্মী হিসেবে দেখা এই দুটি সম্মেলনে উপস্থিত থাকার সৌভাগ্য, বিশেষত ১৯৮১ সালের সম্মেলনের স্মৃতির আলোকে শেখ হাসিনার ঐক্যের প্রতীক হয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে কিছু কথা এখানে নিবেদনের ইচ্ছা করি।


দুই.


১৯৭৫ থেকে ১৯৭৮, এবং ১৯৮০ সাল নাগাদ একদিকে নেতাকর্মীদের ত্যাগতিতিক্ষায় গড়ে ওঠা আন্দোলনের গতি বেগবান হয়, অন্যদিকে নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব বা উচ্চাভিলাসের কারণে দলীয় ঐক্যে সংকট দেখা দিতে থাকে। ১৯৭৮ সালের সম্মেলনে দেখেছি, সারা দেশে দল গোছানোর দায়িত্ব পালন করে দলের আহ্বায়ক ও সম্মেলনের সভাপতি বেগম জোহরা তাজউদ্দিন কিছুটা সামলে উঠলেও, শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর সহধর্মিণী বেগম আমেনা মনসুর তখনও বেদনাভারে কাতর, বিধ্বস্ত। তিনি কাতর কণ্ঠে দলের ঐক্য ধরে রাখার আকুল আহ্বান জানিয়ে বলেন- আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠান। ...এই প্রতিষ্ঠান বেঁচে থাকুক। সবার মধ্যে ঐক্য থাকুক, কোনো বিভেদ যেনো না আসে। তবে, নেতৃত্বের কোন্দল নিয়ে পত্র-পত্রিকায় তখন আওয়ামী লীগ ভেঙে যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। কাউন্সিলে আবদুল মালেক উকিল ও বঙ্গবন্ধুর বিশেষ স্নেহভাজন সদ্য কারামুক্ত আবদুর রাজ্জাককে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করে পূর্ণাঙ্গ নতুন কমিটি নির্বাচন করা হয়। কিন্তু, সম্মেলনের কয়েক মাসের মাথায় মিজানুর রহমান চৌধুরী তার অনুসারীদের নিয়ে পাল্টা কমিটি গঠন করেন এবং আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন। অর্থাৎ ঐক্যের সংকট ঘনিভূত হতে থাকে।


তিন.


এভাবে ভিতরে ভিতরে তখনকার রাজনৈতিক পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র; এবং নেতাকেন্দ্রীক কোন্দল-কলহে ত্রিধারায় বিভক্ত দলের ঐক্য টিকিয়ে রাখা দুরূহ হয়ে পড়ে। মূলত সভাপতি পদ নিয়ে দলে অনৈক্য চরমে পৌঁছে। এহেন পরিস্তিতিতে আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ১৯৮১ সালের সম্মেলন। বরাবরের মতোন হোটেল ইডেনে ১৯৮১ সালের ১৪-১৬ই ফেব্রুয়ারি তিনব্যাপী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। অফিস তখন ৯১/নবাবপুর থেকে ২৩/বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে এসেছে। দল তখন চরম আর্থিক সংকটে। আমি তখন নিয়মিত অফিসে যাই (৯১ নবাবপুরের অফিসে সৈয়দ ভাইয়ের ডিক্টেশনে আওয়ামী লীগের প্রেস রিলিজ থেকেই আমার হস্তাক্ষর পত্রিকায় মুদ্রিত হওয়া শুরু হয়)। নেতাদের মুখে বলাবলি করতে শুনেছি, সম্মেলনের সময় বঙ্গবন্ধু নেতাকর্মীদের কখনো না খাইয়ে ছাড়তেন না। তাই, ঐতিহ্য মেনে চলতে দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করা হয় সম্মেলন স্থলেই। দুপুরের পরে সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনের সময় সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হোটেল ইডেন আর ২৩/বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আমাদের সময় যাওয়া-আসা চলে। নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে কখনো আওয়ামী লীগ অফিসে, আবার কখনো নেতাদের বাসায় বাসায় দফায় দফায় মিটিং হয়। নেতারা আসেন। মিটিং করেন।


বের হওয়ার সময় আমরা উন্মুখ হয়ে ঘিরে ধরি। সব নেতাই পাশ কাটিয়ে চলে যান। অফিসে বসার জায়গা নেই। এভাবে ১৬ ফেব্রুয়ারি সারা দিন, সন্ধ্যা কেটে যায়। অফিসের সামনের রাস্তায় বসে নানান গুজব শুনি - দল ভাগ হয়ে যাচ্ছে। কখনো শুনি আবদুল মালেক উকিল, জোহরা তাজ উদ্দিন অথবা আবদুস সামাদ আজাদ সভাপতি আর আবদুর রাজ্জাক সেক্রেটারি। আবার সভাপতি ও সেক্রেটারি পদে ড. কামাল হোসেন আর তোফায়েল আহমেদেরও নাম কদাচিৎ শোনা যায়। হঠাৎ শোনা যায় দিল্লিতে টেলিফোনে বঙ্গবন্ধুকন্যাদের সঙ্গে কথা হচ্ছে; এবং মাঝে-মধ্যে শেখ হাসিনার নাম উল্লেখ করে তার মনোনীত সভাপতি আর সেক্রেটারির নাম প্রচার করা হয়। শেষ দিকে শুনতে থাকি- শেখ হাসিনাকে সভাপতি করার প্রস্তাব করা হয়েছে, তিনি কিছুতেই রাজি হচ্ছেন না। মনে সংশয় নিয়েও শেখ হাসিনার নাম সবার ভিতরে নতুন আশার সঞ্চার করে। অনেককে হাত তুলে আল্লাহ আল্লাহ করতে দেখেছি; যাতে তিনি রাজি হন, যাতে দল না ভাঙে। আমরা বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বসেই আছি। তখন গভীর রাত। হঠাৎ সবাই নড়েচড়ে ওঠলো- শেখ হাসিনা সভাপতি হতে রাজি হয়েছেন! আবদুর রাজ্জাক সেক্রেটারি। সে কী উল্লাস, সে কী উত্তেজনা, সে কী আনন্দের বন্যা! জয় বাংলা! জয় বঙ্গবন্ধু!


নেতারা হোটেল ইডেনে চলে গেলেন কাউন্সিলরদের কাছে। আমরা খুশিতে ‘শেখ হাসিনা এগিয়ে চলো, আমরা আছি তোমার সাথে/জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু/ মুজিব হত্যার পরিণাম, বাংলা হবে ভিয়েতনাম’ শ্লোগান দিতে দিতে যার যার হলে ফিরে আসি।


চার.


জার্মানি থেকে ব্রাসেলস হয়ে শেখ হাসিনা তখন দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ, ছাত্র লীগসহ সকল নেতা-কর্মীর ভিতরে গভীর উৎকণ্ঠা- কবে আসবেন সভানেত্রী? তিন মাস যেতে না যেতেই সারাদেশ আবার আনন্দে উথলে উঠলো- ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে প্রতিরাতে মিছিল চলছে। পোস্টার লাগানো হচ্ছে। সারা দেশ থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসছেন। আমাদের ছাত্র লীগের নেতাকর্মীরা হলে হলে মিছিলে যোগ দিচ্ছে। কলাভবনে, কার্জন হলে প্রতিদিন মিছিল হচ্ছে। অবশেষে, ১৭ই মে’র ভোরের আলো দেখলো বাংলাদেশ!


দুপুরে আসবেন শেখ হাসিনা। সকাল দশটার মধ্যে সকল হল থেকে মিছিলসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্রদের জমায়েত হলাম আমরা। জহুরুল হক হলের ছাত্র সংসদের ভিপি খলিলুর রহমান মোহনের নেতৃত্বে আমরা বটতলায় পৌঁছলাম। ছাত্র লীগের সভাপতি ওবায়দুল কাদের (আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক) ও সাধারণ সম্পাদক বাহলুল মজনুন চুন্নুর নেতৃত্বে ‘শেখ হাসিনার আগমন, শুভেচ্ছা স্বাগতম’ শ্লোগান দিতে দিতে আমরা বাসে করে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে (বর্তমানে হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর) রওয়ানা হলাম। সারাপথ সারি সারি বাস, গাড়ি আর মানুষের শ্লোগানে মুখরিত। দুপুরের আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে গেলো বিমানবন্দরে।


বেলা তিনটার দিকে শেখ হাসিনার বিমান বাংলাদেশের মাটি স্পর্শ করলো। আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তা ব্যুহ ভেদ করে জনতা ছুটে গেলো বিমানের রানওয়েতে। বিমানবন্দর থেকে রাজপথে এলো শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে বহনকারী মঞ্চসজ্জিত ট্রাক। সমানে পেছনে আনন্দে উদ্বেলিত লক্ষ জনতা। যৎসামান্য হাত নেড়ে অঝোর কান্নায় ভেঙে পড়লেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। আনন্দ-বেদনায় কান্নার রোল পড়ে গেলো বিশাল জনসমুদ্রে। একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে কান্না আর কান্না! সবাই চোখের জলে বরণ করলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদরের কন্যাকে। অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙে পড়লো বাংলার আকাশও। অশ্রুতে বৃষ্টিতে একাকার হয়ে গেলো বাংলার আকাশ বাতাস মাটি।


বৃষ্টিভেজা পথে এগিয়ে চললো বাংলার মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত বঙ্গবন্ধুর ১০ জানুয়ারির মতোন বঙ্গবন্ধুকন্যার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বাঁধভাঙা জনস্রোত। যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা পায়ে পায়ে পথ চলার এতোটুকু জায়গা নেই কোথাও! মুষলধারে বৃষ্টিতে ভিজে, ঝড়-বাদলে হেঁটে হেঁটে আমরা মানিক এভিনিউতে এলাম বঙ্গবন্ধুকন্যার ভাষণ শুনতে। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে তার কান্নাভেজা মৃদু কণ্ঠের ছোঁয়াচ পেলাম মাত্র, কিন্তু কথা বুঝতে হলো পরের দিনের পত্রিকা পড়ে: বাংলার জনগণের পাশে থাকার জন্য আমি এসেছি, মুক্তির সংগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আমি এসেছি- আমি আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ার জন্য আসিনি। আমি আপনাদের বোন হিসেবে, কন্যা হিসেবে এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আপনাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। ... বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতির জনকের হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। পিতামাতা, ছোট ভাই রাসেলসহ সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাঁদের ফিরে পেতে চাই। আমি বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালি জাতির আর্থসামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।


পাঁচ.


১৯৮১ সালের ১৭মে জাতির জনকের রক্তেভেজা বাংলার মাটিতে পা রেখে, মেঘলা আকাশের ছায়ায়, অশ্রুভরা ভালোবাসার সাগরে দাঁড়িয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা যে অঙ্গীকার করেছিলেন, দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে পঁচিশ সফল নেতৃত্ব দিয়ে বাংলার মানুষকে, আমাদেরকে, বাংলাদেশকে নিরলস নিষ্ঠায় সেই পথেই এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশে আজ সারা বিশ্বে উন্নয়নের অনুকরণীয় মডেল। প্রায় দেড় হাজার ডলার মার্কিন ডলার মাথাপিছু আয় নিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে চলেছে। বঙ্গোপসাগরে ৩৫০ নটিক্যাল মাইল জুড়ে আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত। বিচারহীনতার কলঙ্ক ঘুচিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। তাঁর অসম সাহসী ভূমিকার ফলেই একাত্তরের নরঘাতক যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাঁর অনমনীয় ও দৃঢ় অবস্থানের কারণে অন্যান্য পরাশক্তিসহ সম্প্রতি ব্রিটিশ সরকারকে মাঠপর্যায়ে জঙ্গীবাদ দমনে অধিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে একজন প্রকৃত বিশ্বনেতার ভূমিকাই ষ্পষ্ট করেছেন শেখ হাসিনা।


বর্তমান অস্থির ও বিপদসংকুল বিশ্বে গণতন্ত্র, শিক্ষা, শান্তি ও দারিদ্র্যহ্রাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘ, ইউনেস্কো, এফএওসহ বিভিন্ন বিশ্বসংস্থা কর্তৃক অসংখ্য পুরস্কার এবং সম্মাননা লাভ করেছেন। বিশ্বের ছয়টি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা এবং পরিবেশ উন্নয়নে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্যে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্যা আর্থ’ সম্মানে তাকে ভূষিত করা হয়েছে।


আমাদের মনে রাখতে হবে, জননেত্রী শেখ হাসিনার চলার পথ কখনো মসৃণ হয়নি। দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। রাস্তায় বসে বাবা-মা-ভাইদের জন্যে দোয়া ও মিলাদ পড়তে হয়েছে। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর কবর জিয়ারত করতে দেয়া হয়নি। সারা বিশ্বে মৃত্যুর ঝুঁকি মাথায় নিয়ে যারা রাজনীতি করছেন, তাদের মধ্যে হাতে গোনা একজন রাষ্ট্রনায়ক হলেন শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্রকারীরা ক্রমাগত তাকে হত্যার অপচেষ্টা করে চলেছে। ১৯৯৮ সালে কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা পেতে তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট রক্ত আর আগুনের নরককুণ্ড থেকে সৃষ্টিকর্তা তাঁকে নিজ হাতে তুলে এনেছেন। ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথা ১/১১-এর ষড়যন্ত্রকারীরা বাংলাদেশের গণমানুষের নেত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য মিথ্যা মামলায় কারাগারে নিক্ষেপ করেও তাঁর আলোর পথের যাত্রা স্তব্ধ করতে পারেনি। বাংলার মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি এগিয়ে চলেছেন অকুতভয়ে, দৃঢ়চিত্তে। মনে রাখতে হবে, শেখ হাসিনা আমাদের ঐক্য ও অস্তিত্বের প্রতীক।


লেখক: ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস)-এর উপাচার্য


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com