শিরোনাম
ভারত-পাকিস্তান নিয়ে আমরা কেন ঝগড়া করি
প্রকাশ : ২১ জুন ২০১৭, ১৫:৫৭
ভারত-পাকিস্তান নিয়ে আমরা কেন ঝগড়া করি
শেখ আদনান ফাহাদ
প্রিন্ট অ-অ+

ক্রিকেট খেলল পাকিস্তান ও ভারত। মাঠে ভালো খেলে জিতল পাকিস্তান, খারাপ খেলায় পরাজিত হয়েছে ভারত। পাকিস্তান বিজয়ের ট্রফি নিয়ে, ভারত পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে যার যার দেশে ফিরে গেছে।


ভারত-পাকিস্তান খেলা শেষ। কিন্তু কী দুর্ভাগ্য! আমাদের ''যুদ্ধ'' শেষ হচ্ছে না। ভারত-পাকিস্তান খেলা নিয়ে ফেসবুকে চলছে ভয়াবহ বাক্য ও ছবিযুদ্ধ। কেন হবে এমন? স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ৫০ বছর হতে চলল। এখনো কেন আমরা শতভাগ বাংলাদেশী বাঙালি হয়ে উঠতে পারব না? এখনো কেন নিজ দেশের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে শুধু বাংলাদেশকে আমরা ভালোবাসতে পারবনা? সমস্যা কোথায়?


১৮৫৭ সালের ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে সিপাহী-জনতার সম্মিলিত স্বাধীনতাযুদ্ধ সফল হলে তখনই আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেতাম। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে বাঙালি মুসলমান হাবিলদার রজব আলী ১৮৫৭ সালের ১৮ নভেম্বর তাঁর সাথী সিপাহীদের নিয়ে চট্টগ্রাম সেনাছাউনি ত্যাগ করে একের পর এক ট্রেজারি কব্জা করে, জেলখানায় আটক বন্দীদের মুক্ত এবং ব্রিটিশদের অস্ত্রাগারে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সীতাকুণ্ড ও পার্বত্য চট্টগ্রাম দিয়ে আগরতলা যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ত্রিপুরার তৎকালীন রাজা ইংরেজদের পক্ষ অবলম্বন করলে আমাদের বীর যোদ্ধারা সিঙ্গারবিল হয়ে মনিপুর গমন করেন। সেখানে যাত্রাপথে সিলেটের লাতু এলাকায় ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ হয়। সেখানে ইংরেজ সেনাপতি আর, বি বায়ঙ নিহত হন (বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, ইতিহাস ও সংবাদপত্র, ইমরান জাহান, পৃষ্ঠা-৩, বাংলা একাডেমি, ২০০৭-২০০৮)। কিন্তু সিলেট থেকে প্রেরিত বাড়তি ইংরেজ সৈন্যের সাথে আর পেরে ওঠেননি বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার রজব আলী ও তার সাথীরা।


যদি রজব আলীরা সেদিন সফল হতেন তাহলে ১৮৫৭ সালেই আমরা স্বাধীন হই। ১৯৪৭ সালে আমরা প্রথমবারের মতো ভারত থেকে স্বাধীন হলাম। ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ আন্দোলনের ওপর সওয়ার হয়ে আমরা পাকিস্তান রাষ্ট্রের অংশ অন্তর্ভুক্ত হলাম। পাকিস্তান আন্দোলন অনিবার্য করে তুলেছিল ব্রিটিশ শাসক এবং তাদের ঘনিষ্ঠ হিন্দু জমিদার শ্রেণি। বঙ্গবন্ধুর ''অসমাপ্ত আত্মজীবনী'' গ্রন্থটি পড়লে পাকিস্তান আন্দোলনের পটভূমি ক্লিয়ার হয়ে যাবে। ১৯৪৭-এর স্বাধীনতা যদিও অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের কাছে নিরর্থক বলে প্রতীয়মান হয়।


যদিও মুসলিম লীগের তৎকালীন প্রগতিশীল অংশের নেতৃবৃন্দ কলকাতা, দার্জিলিং, আসামের কাছাড়, করিমগঞ্জ, আর বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ড নিয়ে বাঙালিদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের সাম্প্রদায়িক হিন্দু এলিট শ্রেণি আর পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক মুসলিম এলিট শ্রেণি দিল্লিতে গোপন মিটিং করে রেডক্লিফ মিশনের যোগসাজশে আমাদের কলকাতা, দার্জিলিং, কাছাড়, করিমগঞ্জ ছেড়ে দিয়ে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র জন্ম দেয়।


যারা একথাগুলো শুনে চমকে উঠছেন তাদেরকে বলব বঙ্গবন্ধুর ‘'অসমাপ্ত আত্মজীবনী’' গ্রন্থটি ভালো করে পড়ার জন্য। বঙ্গবন্ধু (তৎকালীন মুজিব) নিজ লেখায় দুঃখ করে বলেছেন, তাদেরকে জানানোই হয়নি যে, দিল্লিতে এমন একটা মিটিং করে নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী ভারতবর্ষ ভাগ করা হচ্ছে! কলকাতার দাবি কোনোভাবেই ছাড়তে চাচ্ছিলেন না মুসলমানরা। কিন্তু বাঙালি মুসলমানদের জন্য ভাবতে বয়েই গেছে পাকিস্তানের মুসলিম লীগ লিডারদের! স্বার্থান্বেষী জিন্নাহ-নাজিমুদ্দিনরা ইন্ডিয়ার কাছে কলকাতাকে ছেড়ে দিলেন। কলকাতা পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হলে পাকিস্তানের অন্যান্য শহর করাচী, লাহোর গুরুত্ব হারাবে, তাই। অন্যদিকে ইন্ডিয়ার হিন্দু এলিটরা কলকাতা ছাড়লেন না। কলকাতা ছিল ব্রিটিশ আমলের রাজধানী, কলকাতা ছেড়ে দিলে তাদের আর থাকে কী? ১৯০৫ সালে যারা ‘বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ’ বলে কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন দিলেন, তারাই আবার ১৯৪৭ সালে আমাদের সাথে থাকতে চাইলেন না। বলাবাহুল্য ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতি হলেও দুটি পর্বেই পশ্চিমবঙ্গীয়রা অর্থনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক কারণে আমাদের অবস্থানের বিরোধিতা করল, যে ইতিহাস বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের অনেক ছেলে-মেয়ে জানেনই না। বলা উচিত, জানতে দেয়া হয় না।


এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার, তৎকালীন তরুণ মুজিব এবং অন্যান্য প্রগতিশীল মুসলিম লীগ নেতা এদেশের হিন্দু এবং অন্যান্য ধর্মের মানুষজনকে কখনোই আলাদা করে দেখেননি এবং সচেতনভাবে সকলের ধর্মীয় ও নাগরিক অধিকার সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার করেছেন এবং প্রকাশ্যে কাজও করেছেন। পাকিস্তান আমলে বাঙালি মুসলমানের সাথে বাঙালি হিন্দুদের সমস্যা যতখানি হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি হয়েছে বিহারী মুসলমানদের সাথে। পাকিস্তানী ও বিহারী মুসলিমদের সাথে বাঙালি মুসলমানদের যে কত বড় পার্থক্য রয়েছে সেটি আমরা পরবর্তীতে ১৯৫২, ১৯৬২, ১৯৬৯ এবং ১৯৭১ সালের গণতান্ত্রিক আন্দোলনসমূহে দেখেছি।


যাহোক, ভারত-পাকিস্তানের ঝানু রাজনীতিবিদের কাছে যৌথভাবে ধোঁকা খেয়ে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্তিআমাদের পূর্বপুরুষরা মেনে নিলেও পাকিস্তানের সাথে সংসার যে টিকবে না, তা লেখক-সাহিত্যিক এবং সমাজ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, গবেষকরা ১৯৪৭ সালের শুরু থেকেই বলেছেন। সাংবাদিক আব্দুল হক, ভাষাবিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ এনামুল হক, বহু ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রমুখ ভাষা এবং সংস্কৃতির প্রশ্নে পশ্চিম পাকিস্তানীদের নাক উঁচু ভাব এবং বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে পাকিস্তান যে টিকবে না সে ভবিষ্যৎবাণী বহুবার করেছেন।


এরপরের ইতিহাস আমাদের সকলের জানা। পাকিস্তানী শাসকরা রাষ্ট্রগঠনের দিকে মনোযোগ দিলেন, কিন্তু জাতিগঠন প্রক্রিয়া বন্ধ রাখলেন কিংবা পাঞ্জাবী বাদে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে অবজ্ঞা করলেন। পাকিস্তানের জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ হয়েও মাতৃভাষা ও রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে অবহেলিত হয়ে, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়ে বাঙালিরা বুঝে যায় এবং সিদ্ধান্ত নেয়, পাকিস্তানের সাথে আর থাকা যাবে না। সেই অনুধাবনই পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাস্তবায়িত হয়েছে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে।





লেখক : শেখ আদনান ফাহাদ


পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালির নিজস্ব রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সশস্ত্র বিপ্লবে ভারতের সরাসরি অংশগ্রহণ ছিল। পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর গণহত্যা থেকে বাঁচতে কোটি বাঙালি ভারতের আগরতলা, আসাম, মেঘালয়, কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ভারতে গিয়ে অস্ত্র ও যুদ্ধ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ভারতের হাজারের বেশি সৈন্য আমাদের স্বাধীনতার জন্য জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছেন। এজন্য আমরা ভারতের কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। কিন্তু সে সময়ের কৃতজ্ঞতার জন্য সারাজীবন গোলাম হয়ে থাকতে হবে? এটিই হল বর্তমানে এদেশের অধিকাংশ ছেলে-মেয়ের প্রশ্ন।


পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা, এদেশের ছোট একটি অংশের বেঈমানি এবং রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস ইত্যাদি বর্বর বাহিনী গঠন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয়কে কেন্দ্র করেই বদনকিতাবের (ফেসবুক) ভারত-পাকিস্তানকেন্দ্রিক ঝগড়া ঘুরপাক খাচ্ছে। একদল ভারত বলতে অজ্ঞান, আরেকদল ভারত বিষয়ে ভয়াবহ বিদ্বেষ প্রকাশ করছে। এবং এই সুযোগে এই দুই চরমপন্থী অংশটি হিন্দু ও মুসলমানকে নিজেদের দলে টানার ব্যর্থ চেষ্টা করছে। এদের মধ্যে এমনও আছে যে, ভারত-বাংলাদেশ খেলায় ভারতকে সাপোর্ট করবে বলে বদনকিতাবে পোস্ট দিচ্ছে। আরেকদল ভারতের বিরোধিতা করতে গিয়ে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের মধ্যে পার্থক্য ভুলে যাচ্ছে। এই দুই দলের একটাও একজন সাচ্চা বাংলাদেশী বাঙালির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। খেলা হয় ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে, ঝগড়া করছে আমাদের ছেলে-মেয়েরা। ভারতের পরাজয়ে এদেশের মুসলমানদের বা ভারতের মুসলমানদের কোনো দায় নাই।


খেলা হয়েছে মাঠে, ব্যাটে-বলের লড়াইয়ের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান ইস্যু এনে যারা ঝগড়া বাধিয়েছেন তারা নিঃসন্দেহে স্বার্থান্বেষী। কিন্তু এদেশে কেউ কেউ আছে, ভারত হেরে গেছে বলে পুরো মুসলমান সমাজকে গালিগালাজ করছে। এই সামান্য কয়েকজন চরমপন্থী ভুলে যাচ্ছে যে, এদেশের সমস্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাঙালি মুসলমান সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে।


অন্যদিকে ভারতের পরাজয়ের খুশিতে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এদেশের মুসলমানদের একটা অংশ ‘পাকিস্তান’ বলে স্লোগান দিতেও লজ্জা পাচ্ছে না। এখানেই আমাদের সমস্যা নিহিত। এই দেশদ্রোহী হিন্দু ও মুসলমানের সংখ্যাটি খুব কম, কিন্তু শোর তুলতে উস্তাদ। তবে এ কথা সত্য যে, সেদিন ভারত-পাকিস্তান খেলায় ভারতের পরাজয় কামনা করেছে, এমন বাংলাদেশীর সংখ্যাই বেশি। খুব স্বাভাবিকভাবেই সেদিন অধিকাংশ মানুষ ভারতের পরাজয় কামনা করেছে। কারণ, ভারত এর আগে সেমিফাইনালে আমাদেরকে হারিয়ে দিয়েছিল এবং ম্যাচ চলাকালীন ভিরাট কোহলির অশালীনভাবে জিহবা বের করে উদ্ধত আচরণের জন্য আমাদের দেশের মানুষের মেজাজ খারাপ ছিল।


কিন্তু ভারতের পরাজয় কামনা করা পাকিস্তানের বিজয় কামনা করা এক বিষয় নয়। অনেকে ফেসবুকে লিখেছে, ভারতের পরাজয়ে অনেক খুশি, কিন্তু খুশি প্রকাশ করতে বিব্রত হচ্ছেন, কারণ পাকিস্তান প্রতিপক্ষ। আমি নিজে লিখেছি, শত্রুর কাছে আমাদের বন্ধুর পরাজয়! ভারতের অনেক হিন্দু বন্ধু-বান্ধব পাকিস্তানের ভালো খেলার প্রশংসা করে বদনকিতাবে পোস্ট দিয়েছে। কিন্তু ইনারা হিন্দু ধর্মের বিধায় তাদেরকে রাজাকার বলার কোনো সুযোগ নাই। কিন্তু বাংলাদেশের যারা নিছক খেলার নামে পাকিস্তানের ভালো খেলার প্রশংসা করেছে সবাই রাজাকার বলে গালি খেয়েছে।


ভারত ইস্যুতে ন্যায্য কথা বললে আমাদের কিছু কিছু মানুষ পাকিস্তান ইস্যু নিয়ে আসে। পাকিস্তানকে আমরা তালাক দিয়েছি সেই ১৯৭১ সালে। এখন ২০১৭ সাল। এই সময় ভারত যদি আমাদের নদীর পানি না দেয়, শেওয়াগ যদি আমাদেরকে অপমান করে কথা বলে, সীমান্তে যদি ফালানির মতো কাউকে গুলি করে মারে তাহলে কি আমরা কথা বলতে পারব না?


যাহোক, দেশকে ভালোবেসে কাজ করে যাওয়ার লোকই বাংলাদেশে বেশি। এজন্যই বাংলাদেশ এখন সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে পারচেজিং পাওয়ার প্যারিটির মানদণ্ডে বিশ্বের ৩২তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। দেশে লুটেরা আছে, বিদেশে অর্থ -সম্পদ পাচারকারী আছে এবং এখানেও আমরা হিন্দু-মুসলমানের বিভাজন করতে পারি। এতকিছুর পরেও আমরা রাষ্ট্র হিসেবে বেশ ভালো করছি। আমাদের এই অগ্রযাত্রায় সামান্যসংখ্যক মুসলিম ও হিন্দু রাষ্ট্রদ্রোহীকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে অথবা শোধন প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতে হবে।


লেখক : শিক্ষক, সাংবাদিক


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী



সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com