সাক্ষাতকার
'ঢাবিকে আধুনিক, গবেষণানির্ভর ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় করাই আমার লক্ষ্য'
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৪৯
'ঢাবিকে আধুনিক, গবেষণানির্ভর ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় করাই আমার লক্ষ্য'
মো. ছাব্বিরুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দায়িত্ব পাওয়া অত্যন্ত সম্মানের ও মর্যাদার। এই জন্য আমি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। যেহেতু আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছি, স্বাভাবিকভাবে একটা স্বপ্ন তো অবশ্যই আছে। সেটি হলো— এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণামুখী ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা, শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের মধ্যে যেন অভিভাবক ও বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকে সেটি জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করা, পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা আমার লক্ষ্য। আমার চিন্তাভাবনা সবসময়ই শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। আমি শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের কথা ভেবে অতীতে কাজ করেছি, বর্তমানেও করবো। কাজ করতে গেলে অবশ্যই চ্যালেঞ্জ থাকবে। একজন উপাচার্য হিসাবে যদি সততা এবং নিষ্ঠার সাথে কাজ করা যায়, সেখানে চ্যালেঞ্জ উত্তরণ অসম্ভব নয়। সঠিক পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের জন্য সকলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো।'


কথাগুলো বলেছেন, অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। যিনি দায়িত্ব পালন করছেন প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে। ১৫ অক্টোবর ২০২৩ মহামান্য রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ তাকে উপাচার্যের দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। পরে গত ৪ নভেম্বর ঢাবির ২৯তম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।


এর আগে ড. মাকসুদ কামাল ২০২০ সালের জুন মাস থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের এই অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির চারবারের নির্বাচিত সভাপতি, তিনবারের সাধারণ সম্পাদক, বিশ্ববিদ্যালয় আওয়ামী লীগ-সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন৷ এছাড়া বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি ও মহাসচিবের দায়িত্বে ছিলেন। দুই মেয়াদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাস্টারদা' সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষের দায়িত্ব, অনুষদের ডিন, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যসহ একাধিক দায়িত্ব তিনি সফলতার সাথে পালন করেছেন।


ড. মাকসুদ কামাল বিশ্বখ্যাত ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের (University College London) ‘ভিজিটিং প্রফেসর’ হিসেবে এপ্রিল ২০২২ থেকে মার্চ ২০২৭ পর্যন্ত নিয়োগ লাভ করেছেন। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের‘ ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশন (IRDR)’ বিভাগে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করে আসছেন। ভূমিকম্প, সুনামি এবং নগর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ হিসেবে ইউএনডিপি/সিডিএমপি, বাংলাদেশ (UNDP/CDMP, Bangladesh) প্রকল্পে চার বছর কাজ করেছেন তিনি। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলা এবং পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণে তিনি শিক্ষাবিদ ও গবেষক হিসেবে এখনো কাজ করছেন। দেশি-বিদেশি জার্নালে তার ৬৬টি বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত প্রবন্ধ, রিপোর্ট, বুক চ্যাপ্টারসহ তার ১০০টির উপরে গবেষণাকর্ম রয়েছে।


বরেণ্য এই অধ্যাপক সম্প্রতি বিবার্তা ঢাবি প্রতিনিধির সাথে একান্ত আলাপচারিতায় জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তার স্বপ্নসহ নানান পরিকল্পনার কথা।

বিবার্তা: আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে দায়িত্ব পেয়েছেন। প্রশাসনিক শীর্ষ এই পদের দায়িত্ব পালন করা কতটা চ্যালেঞ্জের মনে করছেন?


অধ্যাপক মাকসুদ কামাল: দেখুন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম, শিক্ষক হয়েছি, শিক্ষকদের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছি। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে কাজ করেছি। ইউনাইটেড নেশনস এর সাথেও কাজ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ২০০০ সাল থেকে শিক্ষকতা করি। তার পূর্বে আমি বাংলাদেশ স্পেস রিসার্চ এন্ড রিমোট সেন্সিং অর্গানাইজেশনে বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলাম। পরবর্তীতে আমি আমার অনুষদ আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের ডিন নিযুক্ত হই। আমি চারবার ডিন ছিলাম। আমি ডিপার্টামেন্ট অব ডিজাস্টার সায়েন্স এন্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যানও ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল প্রশাসনিক ও একাডেমিক পদে আমার পদচারণা আছে। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য কমিটিতে আমি ছিলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও অনেক সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মেম্বার অথবা একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে সংযুক্ত ছিলাম, এখনো আছি। সব মিলিয়ে যে অভিজ্ঞতা আমি সঞ্চয় করেছি, তার আলোকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব আমার কাছে খুবই ভারী মনে হচ্ছে না।


তবে আমি এমন সময়ে দায়িত্ব পেয়েছি যখন দেশে জ্বালাও-পোড়াও থেকে শুরু করে নানা অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিদেশি শক্তি আমাদের এখানে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। স্বাভাবিক পঠন-পাঠন এবং মেধা-মননের বিকাশের জন্য এ রকম পরিস্থিতি অনুকূলে নয়। প্রশাসনিক ভবন এখনো বহুলাংশে ম্যানুয়ালি চলছে। আমরা দ্রুততম সময়ে মানসম্মত সেবা এখনো প্রদান করতে পারছি না। স্মার্ট ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠার জন্য যে ধরনের একাডেমিক ও পারিপার্শ্বিক সুবিধা প্রয়োজন তারও বেশ ঘাটতি আছে। গবেষণা পরিবেশ ও গবেষণা মান দুইটি এখনো প্রাতিষ্ঠানিকতা পায়নি। এ বিষয়গুলো চ্যালেঞ্জিং হলেও সমাধান করা কঠিন হবে না। আশা করি সকল অংশীজনের সহযোগিতা পাবো।


বিবার্তা: আপনার কাছে শিক্ষার্থীদেরও বিভিন্ন প্রত্যাশা থাকবে। তারা শিক্ষার্থীবান্ধব ভিসি চায়। আপনার ভূমিকা কেমন হবে?


অধ্যাপক মাকসুদ কামাল: আমি শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষক। আমার চিন্তাভাবনা সবসময়ই শিক্ষার্থীকেন্দ্রিক। আমি অতীতেও শিক্ষার্থীদের মঙ্গলের কথা ভেবে কাজ করেছি, বর্তমানেও তাই করবো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা এবং চাহিদা আমি লক্ষ্য করে আসছি, বুঝতে পেরেছি আমাকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে, শিক্ষকদেরও আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও সমাজের একটি প্রত্যাশা আমার কাছে আছে। আমার মনে হয়েছে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এই যে বিশাল প্রত্যাশা- এটাই আমার জন্য চ্যালেঞ্জ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান ব্যবস্থাপনায় জাতির প্রধান প্রতিষ্ঠান হওয়ায় দেশবাসীর অনেক প্রত্যাশা আছে। বাস্তবতা হচ্ছে, সব কিছু সম্পাদন করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে একজন উপাচার্য হিসাবে যদি সততা, নিষ্ঠা ও টিম গঠন করা সম্ভব হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের চাহিদা পূরণ করা খুব কঠিন নয়। আমার উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার, ডিন, প্রভোস্ট এবং যোগ্য সহকর্মীগণ আছেন সকলকে নিয়েই একটি টিম তৈরী করে কাজ করার চেষ্টা করবো।


শিক্ষার্থীরা শুধু আমাদের সন্তান নয়, আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর। তারা আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করবে। ফলে তাদের প্রতি একজন শিক্ষক হিসেবে, প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে আমার দায়িত্ব অনেক বেশি। তা বিবেচনায় রেখেই আগামী দিনের কর্মপরিকল্পণা তথা, একাডেমিক ক্যারিকুলাম, প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা, আন্তর্জাতিক সংযোগ ও সহযোগিতা, সহশিক্ষা কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের অন্যান্য লজিস্টিক সুবিধার দিকে লক্ষ্য রেখেই বিশ্ববিদ্যালয় আমরা পরিচালনা করবো।


বিবার্তা: এই মুহূর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী বলে আপনি মনে করেন?


অধ্যাপক মাকসুদ কামাল: যেটি আমার জন্যও বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করি, তা হলো— মডার্নাইজেশন অব দিস ইউনিভার্সিটি। আমার লক্ষ্য এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিপূর্ণভাবে ডিজিটালাইজেশনের মধ্যে নিয়ে আসা এবং একইসাথে অটোমেশনে এনে স্বল্পতম সময়ে সঠিক সেবা প্রদান করা। তবে বিষয়টি চ্যালেঞ্জিং। চ্যালেঞ্জ হলো এই জন্য, আমাদের যে রেজিস্ট্রার বিল্ডিং- সেখানে অসংখ্য কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে, যাদের কম্পিউটার লিটারেসি নেই বললেই চলে। আমরা যে ধরনেরই অ্যাপস বা সফটওয়্যার তৈরি করি না কেন, সেগুলোর ব্যবহার তাদের জন্য কঠিন। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়কে মডার্নাইজশনের মধ্যে নিয়ে আসা তথা শতভাগ অটোমেশনে নিয়ে আসা কষ্ট সাধ্য।



এখন ইনফরমেশন টেকনোলজির যুগ, ফলে এই সময়ে এসেও আমরা যদি ডিজিটালাইজেশন ও মডার্নাইজেশনে পিছিয়ে থাকি, তাহলে বিশ্ব পরিসরে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি মর্যাদার জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে না। সেই জন্যই রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা আছে, তাদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধি আবশ্যক। এ জন্য আমরা প্রশিক্ষণের কাজ শুরু করেছি। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো যাতে শিক্ষার্থী এবং সহকর্মীরা দ্রুত সময়ে প্রকৃত সেবা হাতের নাগালে পান। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও চ্যালেঞ্জিং। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় সবদিক থেকে প্রবেশ পথ থাকার কারণে সমাজের বিভিন্ন অপরাধীর এখানে সহজ বিচরণ সম্ভব। এ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ আনা চ্যালেঞ্জিং। আমরা কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের সহযোগিতা করছে।



বিবার্তা: বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কাজ কম হওয়া নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা হয়। এটা নিয়ে আপনি কী ভাবছেন?


অধ্যাপক মাকসুদ কামাল: বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণামনস্ক পরিবেশ গড়ে তুললেই গবেষণামনস্ক শিক্ষার্থী গড়ে উঠবে। সেই এনভায়রনমেন্ট যথাযথ আমাদের এখানে উপস্থিত আছে বলে আমি মনে করি না। এই ধরনের একটা এনভায়রনমেন্ট তৈরির জন্য আমি সচেষ্ট থাকবো- যাতে করে আমাদের চলমান যে গবেষণাগুলো আছে সেগুলো যেন বিশ্বমানের হয়।


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গত ২৯ অক্টোবর ডক্টর অব লজ (মরণোত্তর) ডিগ্রি প্রদান করেছে। সেই দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেছেন, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষক যেন গবেষণামুখী হয়। যদি এই দেশকে আমরা বিদেশি নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত করে আত্মনির্ভর ও আত্মমর্যাদাশীল জাতিতে দেশে পরিণত করতে চাই যেটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীরও প্রত্যাশা- তাহলে গবেষণায় আমাদেরকে অবশ্যই জোর দিতে হবে।



গবেষণায় মৌলিকত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা প্লেজারিজম বন্ধ করার নীতিমালা করেছি। গবেষণার ইথিক্যাল গাইডলাইন ও নীতিমালা প্রণয়নের পথে, প্রতিটি বিভাগ ও ইনস্টিটিউটে মাস্টার্স পর্যায়ে ন্যূনতম ৩০% শিক্ষার্থীকে গবেষণা থিসিস প্রণয়ন বাধ্যতামূলক করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ রিসোর্স দিয়ে ফান্ডেড পিএইচডি প্রোগ্রাম চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। রিসার্চ অধ্যাপক ও রিসার্চ এসোসিয়েট পদ সৃষ্টির পদক্ষেপ নিবো। এর ফলে গবেষণাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি হবে।



মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণায় বেশি পরিমাণে মনোযোগী হওয়া ছাড়া আমাদের হাতে কোন বিকল্প নেই। না হলে পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে এই দেশের মর্যাদাকে কোনোভাবে বিশ্বদরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো না। আমি মনে করি যদি আমরা সকলে মিলে কাজ করি, সরকারসহ সকল রাজনৈতিক দলের পূর্ণ সহযোগিতা পাই, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি মর্যাদাপূর্ণ জায়গায় নিতে যেতে পারবে। ইতোমধ্যে- বর্তমান সরকার বিভিন্নভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।


বিবার্তা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আপনার স্বপ্ন কী?


অধ্যাপক মাকসুদ কামাল: অতীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকার কারণে স্বাভাবিকভাবে আমার লালিত স্বপ্ন আছে। সেই স্বপ্নটি হলো- বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি গবেষণামুখী ও ছাত্রবান্ধব প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়কে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করাও আমার লক্ষ্য। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনও মেডিক্যাল ও কৃষি ফ্যাকাল্টি নাই। পৃথিবীর সব বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব ফ্যাকাল্টি আছে। আমরা পূর্বাচলে ৫২ একর জমি প্রাথমিক এলটমেন্ট পেয়েছি। আমি যখন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ছিলাম, তখন রাজউক থেকে ৫২ একর জমির এই প্রাথমিক অনুমোদন পেয়েছি। কিন্তু এখনও তা বুঝে নিতে পারি নাই। কারণ, যে আর্থিক লেনদেন সেটা শেষ করা সম্ভব হয়নি। আশা করি, এই বিষয়ে আমরা সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা পাবো। সেখানে আধুনিক রিসার্চ ল্যাবরেটরি, মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি ও একটি হাসপাতাল গড়ে তোলার স্বপ্ন রয়েছে।


পৃথিবীর সব দেশেই বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মেডিক্যাল সায়েন্সে ব্যাপক গবেষণা হয়। আমাদের এখানে মেডিকেল সায়ন্সের গবেষণার অভাব রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই ফ্যাকাল্টি খোলার জন্য মেডিক্যাল সায়েন্সের যে বিভাগগুলো থাকা দরকার যেমন বায়োকেমিস্ট্রি, ফার্মেসি, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও মাইক্রোবায়োলজি, এই ডিপার্টমেন্টগুলো আমাদের আছে। এখন মেডিসিন ও সার্জারি সংক্রান্ত ডিপার্টমেন্টগুলো খুলতে পারলে এই বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে। শতবর্ষের এই বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি পূর্ণাঙ্গ আধুনিক গবেষণানির্ভর ছাত্রবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ লক্ষ্যে আমরা একটা রোড ম্যাপ তৈরী করবো, আমার সময়ে যতটুকু সম্ভব তা করে যাবো। পরবর্তীতে যারা আসবেন, তারা এই রোড ম্যাপ অনুসরণ করতে পারবে।


বিবার্তা: বিবার্তাকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।


অধ্যাপক মাকসুদ কামাল: আপনাকেও ধন্যবাদ। বিবার্তার জন্য শুভকামনা রইল।


বিবার্তা/ছাব্বির/রাসেল/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com