সাক্ষাতকার
টেক্সটাইল বাংলার ঐতিহ্য, এর সম্ভাবনা অনেক : ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান
প্রকাশ : ০১ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০
টেক্সটাইল বাংলার ঐতিহ্য, এর সম্ভাবনা অনেক : ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান (বেলাল) সিটেক্সট, এফটিআই । গত ৩০ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে জারি করা প্রজ্ঞাপনে তাকে নিয়োগ দেয়া হয়।


এর আগে ১৬ ফেব্রুয়ারি এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তাকে রুটিন উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ফ্যাকাল্টি অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।


ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান বঙ্গবন্ধুর আদর্শে গড়া প্রগতিশীল শিক্ষক পরিষদ কর্তৃক মনোনীত বুটেক্স শিক্ষক সমিতির সভাপতি। এছাড়া দায়িত্ব পালন করছেন বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স এ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি হিসেবে।



বঙ্গবন্ধু ফেলো এর গ্রেড -১ অধ্যাপক বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টার থেকে পিএইচডি করেন টেক্সটাইল সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব (ইউমিস্ট) থেকে এমফিল করেন টেক্সটাইল সাইন্স এন্ড টেকনোলজিতে।


ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান বেলজিয়াম সরকার কর্তৃক প্রদত্ত বৃত্তির মাধ্যমে ইউনিভার্সিটি অব যেন্ট থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে এমএসসি ও ১৯৯২ সালে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইল টেকনোলজিতে বিএসসি করেন। এছাড়া শিক্ষাজীবনে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় মেধায় স্বাক্ষর রেখেছিলেন তিনি।


বরেণ্য এই অধ্যাপক নিজের উজ্জ্বল শিক্ষাজীবনের পর বংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের পেশাগত জীবনেও বিভিন্ন একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব সফলভাবে পালন করেছেন এবং এখনো করে যাচ্ছেন।বঙ্গবন্ধু ফেলোর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা এই অধ্যাপকের প্যাটেন্ট, পাবলিকেশনসহ অসংখ্য বই রয়েছে। শুধু তাই নয়, ঢাকাই মসলিন পুনরুদ্ধার করেছে যে গবেষক দল, তিনি তাদের একজন। ব্যক্তিগত জীবনে নানা কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ অনেক প্রেস্টিজিয়াস অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছেন ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান।


বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী এই অধ্যাপক সম্প্রতি বিবার্তা২৪ডটনেটের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মুখোমুখি হয়েছেন। আলাপে তিনি বাংলাদেশে টেক্সটাইলের সম্ভাবনাসহ তাঁর স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন। সাক্ষাৎকারে যুক্ত ছিলেন বিবার্তা প্রতিবেদক মহিউদ্দিন রাসেল।


বিবার্তা : আপনি উপাচার্য পদে দায়িত্ব নেওয়ার পর ইতোমধ্যে ৬ মাস অতিক্রম করেছে। এই সময়ে আপনার দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন-


ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান : আলহামদুলিল্লাহ। খুবই ভালোভাবে সবকিছু চলছে। তেমন কোন সমস্যা নাই। এক্ষেত্রে কিছু সমস্যা তো থাকবেই। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা আমাকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন, যাতে এই প্রতিষ্ঠানটিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আর আমি সেই টার্গেট নিয়ে আগাচ্ছি। প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে এগিয়ে নিতে পারি, বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় করতে পারি সেই লক্ষ্যে কাজ করছি।



আমার শিক্ষার্থী অর্থাৎ আমাদের এখানকার ইঞ্জিনিয়ার যারা বের হচ্ছেন, তাদের মাধ্যমে বস্ত্রখাতে ৮৫ শতাংশ প্রভিডেন্স আসতেছে। এক্ষেত্রে তারা যেন মানুষের মতো মানুষ হতে পারে, দেশের স্বার্থে- দেশের কাজে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে পারে, ওই রকম করার চেষ্টা আমি করতেছি। ওরা এখন এখান থেকে প্রোডাক্ট বের করার চেষ্টা করতেছে। তার জন্য কিছু কিছু ইন্টারনাল বাধা আসতেছে। এটা নরমাল বিষয়। কাজেই এটাকে খুব বেশি সিরিয়াস হিসেবে নিচ্ছি না, এগুলো থাকবেই। যেহেতু সরকার আমার সাথে আছে সেহেতু এগুলো নিয়ে আমি ভাবি না।



বিবার্তা : বুটেক্সের ১৩ বছরের ইতিহাসে আপনার নেতৃত্বে প্রথম নারী রেজিস্ট্রার কাবেরী মজুমদারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কোন চিন্তাভাবনা থেকে এটা করা হলো?


ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান : এই পদের জন্য কয়েকজন ক্যান্ডিডেট ছিলেন। তার মধ্যে বাহিরের ছিলেন, আমাদের ভিতরেরও ২ জন ছিলেন। সবার মধ্যে যিনি নিয়োগ পেয়েছেন তিনি সিনিয়র। এক্ষেত্রে সবগুলো ফাইলকে প্রসেস করে ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে সিলেকশন বোর্ডের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেখানে বিজ্ঞ সিলেকশন বোর্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মহোদয়, সিন্ডিকেট থেকে হারুন স্যার, আমাদের দুই দুইবারের ভিসিসহ বাহিরের বিজ্ঞ বিজ্ঞ মেম্বাররা ছিলেন। তারা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করেছেন। যেহেতু নিয়োগপ্রাপ্ত উনি সিনিয়র, উনার অভিজ্ঞতাও বেশি। সেই হিসেবে উনাকে সিলেকশন দেওয়া হয়েছে। এটার ডিসিশন বলেন আর ক্রেডিট বলেন সেটা মূলত সিলেকশন বোর্ডের। আমি জাস্ট ফাইলগুলো প্রসেস করে তুলে ধরেছি।


বিবার্তা : বাংলাদেশে বর্তমানে টেক্সটাইলের সম্ভাবনা কেমন দেখেন?


ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান : টেক্সটাইলের সম্ভাবনা ভালো। আর বাংলাদেশে টেক্সটাইলের সম্ভাবনা কোন কালে খারাপ ছিল না। টেক্সটাইল বাংলার ঐতিহ্য। সেই মসলিন ছিল,তারপর চলে আসলো আমাদের পাট। এক্ষেত্রে পাটও কিন্তু টেক্সটাইল। তারপর চলে আসলো আমাদের গার্মেন্টস। সেখান থেকে আমরা এখন এই পর্যায়ে আছি। সুতরাং টেক্সটাইল বাংলাদেশের ঐতিহ্য। সবচেয়ে বড় কথা মানুষের যে মৌলিক চাহিদা, তার মধ্যে বস্ত্র একটা। কাজেই এর চাহিদা কখনো ফুরাবে না। আমাদের দেশের জনশক্তি অর্থাৎ টেকনিক্যাল হ্যান্ড যেগুলো রয়েছে তারা যথেষ্ট দক্ষ। কাজেই তাদেরকে যদি ব্যবহার করা যায়, তাহলে আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।


একটা বিষয় দেখেন, টেক্সটাইল খাত বিশ্বে যতই বন্ধ হয়ে গেছে কিংবা ইউরোপ বা অন্যান্য দেশে যদি আমরা তাকাই তাহলে সেগুলো আস্তে আস্তে বন্ধ হওয়ার দৃশ্য দেখা যায়। এক্ষেত্রে যেহেতু জনশক্তি আমাদের বড় শক্তি, সেহেতু এটা আমাদের দেশে বসে যাবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, আমরা বসে যাওয়ার কোন সুযোগ দেখি না। একদিকে যেমন আমাদের জনশক্তি আছে, অন্যদিকে বিশ্বের সব দামি দামি লেটেস্ট মেশিনপত্রও আমাদের আছে।



মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে টেক্সটাইলের যত ডেভেলপমেন্ট বিশ্বের মধ্যে হয়েছে, তার সমস্ত ডেভেলপমেন্ট আমাদের দেশে আছে সমস্ত পর্যায়ে। সুতরাং এই দিক থেকে আমরা টেকসইভাবে টিকে থাকতে পারবো ইনশাআল্লাহ। তবে আমাদের মানুষকে একটু ঠিক হতে হবে। মানুষ যদি ঠিক হয়ে যায়, বাঙালি যদি তার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে প্রকৃত মানুষ হয়ে যেতে পারি, তাহলে আমাদের দেশ অনেক এগিয়ে যাবে। এই রিসোর্স আমাদের আছে।



বিবার্তা : বুটেক্স থেকে পাস করা শিক্ষার্থীরাও এখন বিসিএসের প্রতি ঝুঁকছে এবং ভালোও করছে। তারা টেকনিক্যাল ছেড়ে এদিকে আসায়, এটা এই পেশার জন্য অশনি সংকেত মনে করেন কিনা?


ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান : এটাকে আমি অশনি সংকেত বলবো না। আমাদের একটা দাবি ছিল বিসিএস ক্যাডার। একটা বিষয় দেখেন যখন আমরা কলেজ ছিলাম তখন আমাদের টিচাররা টেকনিক্যাল এডুকেশন ক্যাডারের মধ্যে ছিল। এরপর যখন ইউনিভার্সিটি হয়ে গেল, তখন এই পদগুলো এখান থেকে সরে গেল টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের হাত থেকে। এক্ষেত্রে আমরা বিসিএস ক্যাডারের জন্য চেষ্টা করতেছি তখন থেকে। কিন্তু আমরা পাই নাই। ফলে আমাদের ছেলেরা যারা বিভিন্ন ক্যাডারে যাচ্ছে সেটাকে তো আমাদের সাধুবাদ জানাতেই হয়। আমাদের টেক্সটাইল ক্যাডার নাই কিন্তু টেক্সটাইল প্রকৌশলীরা যখন বিভিন্ন ক্যাডারে ছড়িয়ে যাচ্ছে, এমনকি এডমিন, পুলিশ, পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন ক্যাডার তারা পাচ্ছেন। গত ৪১ তম বিসিএসেও আমাদের প্রায় ৩১ জন শিক্ষার্থী ক্যাডার হয়েছেন। কাজেই এটাতে আমি অশনি সংকেত দেখি না। কারণ আমাদের ছেলে তো বের হচ্ছে অনেক। প্রতি ব্যাচে ৬০০ শিক্ষার্থী। এছাড়া এক একটা কলেজে মিনিমাম ১২০ জন করে রয়েছে। কাজেই সেখানে ১২০ জন করে থাকলে ১০টা কলেজে রয়েছে প্রায় ১২০০ জন, যা আমাদের ইউনিভার্সিটি থেকে ডাবল।


তাছাড়া ডুয়েটে, ভাসানীতে, কুয়েটে, জাস্ট তথা যশোরসহ এখন বেশ কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এই ডিপার্টমেন্ট আছে। আবার প্রাইভেটেও টেক্সটাইল আছে। সুতরাং এখানে আমি অশনি সংকেতের কিছু দেখি না। কয়জন ছেলে আমাদের যাচ্ছে। যদিও ৪১ বিসিএসে আমাদের ৩১ জন গেছে। কিন্তু তারা তো এক ব্যাচ থেকে যায়নি, কয়েকটি ব্যাচ থেকে মিলিয়ে গেছে। কোন ব্যাচ থেকে ৪/৫টা, কোন ব্যাচ থেকে ২/১ টা, আবার কোন ব্যাচ থেকে নাই। কাজেই এটাকে অশনি সংকেত হিসেবে আমি দেখি না।


তবে হ্যাঁ, এটা ঠিক ছেলেদের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বানাতে সরকার যে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, এটা চিন্তা করলে এটা একটা সমস্যা। কিন্তু কোন অশনি সংকেত আমি দেখি না। এক্ষেত্রে আমি অবশ্যই বলবো, এটা একটা ভালো দিক। যেহেতু ক্যাডার এখনো আমাদের দিচ্ছে না, সেহেতু আমার এই ছেলেগুলো নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। আজকে যদি আমাদের টেক্সটাইল খাত না-ও করে তখন আমাদের এই ছেলেগুলো যখন ডেপুটি সেক্রেটারি হয়ে যাবে, এডিশনাল জয়েন্ট সেক্রেটারি হয়ে যাবে, তখন তো তাদের ভলিউম বেড়ে যাবে, তখন কিন্তু বস্ত্র মন্ত্রলালয়ে আমার এই ছেলেকে বসাতে কর্তৃপক্ষ তথা প্রশাসন অনেকটা বাধ্য হবে।



প্রত্যেকটা ক্যাডারের মধ্যে আমাদের ছেলেরা ঢুকে যাচ্ছে। আমি মনে করি, এটা ভালো। কারণ, আমাদের ছেলেরা কেন পিছিয়ে থাকবে? বুয়েট, মেডিকেলসহ সব জায়গার শিক্ষার্থীরা যেখানে নিজেদের টেকনিক্যাল ক্যাডার থাকা সত্ত্বেও বিসিএসের সাধারণ ক্যাডারের দিকে ঝুঁকছে, সেখানে আমাদের ছেলেরা ঢুকলে দোষ কোথায়? এক্ষেত্রে সরকার যদি আমাদের টেকনিক্যাল ক্যাডার দিক, তাহলে আমরা ঐদিকে যাবো না। মোটকথা, যোগ্যতা দিয়ে যদি আমাদের শিক্ষার্থীরা যদি ভালো ক্যাডার পেয়ে সেখানে নিজের অর্জিত জ্ঞানকে কাজে লাগাতে পারে সেটাতে দোষের কিছু আছে বলে আমি মনে করি না।



বিবার্তা : বিবার্তাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


ড. শাহ্ আলিমুজ্জামান : আপনাকেও ধন্যবাদ।


বিবার্তা/ রাসেল/

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com