এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাব না: ফরিদুজ্জামান ফরহাদ
প্রকাশ : ২২ অক্টোবর ২০২৩, ১০:১১
এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাব না: ফরিদুজ্জামান ফরহাদ
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

‘আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ২০১৪ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি এবং ২০১৮ সালেও না। এছাড়া স্থানীয় কোন নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। তাছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে আমরা সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশন মনে করি। ফলে এই সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা কোন নির্বাচনে যাবো না। এজন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।’


কথাগুলো বলেছেন ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তিনি ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। এই রাজনীতিবিদ বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপচারিতায় দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতির নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক মোহাম্মদ ইলিয়াস।


বিবার্তা: তফসিল ঘোষণা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো প্রস্তুতি নিচ্ছে কি?



ফরিদুজ্জামান ফরহাদ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জোটগুলো নির্বাচনের পক্ষে। কিন্তু এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ২০১৪ সালে সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি এবং ২০১৮ সালেও না। এছাড়া স্থানীয় কোনো নির্বাচনও সুষ্ঠু হয়নি। এছাড়া বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে আমরা সরকারের আজ্ঞাবহ কমিশন মনে করি। ফলে এই সরকার এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা কোন নির্বাচনে যাবো না। এজন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না।



বিবার্তা: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহাবস্থানের জায়গাটা নেই কেন?


ফরিদুজ্জামান ফরহাদ: আমরা চাই গণতন্ত্র, আমরা চাই মানুষের ভোটের অধিকার, আমরা চাই মানবতার অধিকার, আমরা চাই যাতে দেশের টাকা লুটপাট না হয়। আমরা চাই সবাই ভোট দেবে, আর আওয়ামী লীগ চায় সকলের ভোট তারা নিজে দিবে। তারা ভোট চুরি করেছে ভোট ডাকাতি করেছে; ১৪ সালে ১৫৩ আসন বিনা ভোটে নির্বাচিত হয়েছে, ১৮ সালে দিনের ভোট রাতে করেছে। তারা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন ও অত্যাচার করছে, দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি করছে। এদের সাথে সহাবস্থান কী করে সম্ভব? সহাবস্থানের জন্য আওয়ামী লীগকে এগিয়ে আসতে হবে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন- শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসবেন। তার অধীনে নির্বাচন হবে। আমাদের দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ৯৬ সালে ১৭৩ দিন হরতাল করেছিল আওয়ামী লীগ। জ্বালাও পোড়াও লগি-বৈঠা এবং গান পাউডার দিয়ে লোক মেরেছে। সেই আওয়ামী লীগ আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করেছে। তাদের সাথে সমঝোতা কি করে হবে। আওয়ামী লীগকে আগে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের কথা হচ্ছে যে কোনো সমঝোতা যেতে চাই। কিন্তু শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। দেশের তিনটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়েছে। ওই নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু বলে মানুষ দাবি করেছে। সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে ৯৬ সালে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসতে পারত না।


বিবার্তা: আপনাদের আন্দোলনে, কৌশলে কোনো পরিবর্তন আসছে কি?


ফরিদুজ্জামান ফরহাদ: সকল আন্দোলনে কৌশল পরিবর্তন হয়। অবস্থা বুঝে আন্দোলনের কৌশল পরিবর্তন করতে হবে। আমরা সব সময় শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চাই। আমরা আশা করি, সরকার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বাধা দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করবে না।


বিবার্তা: বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমাদেশগুলো চাপ প্রয়োগ করছে। আপনাদের আন্দোলনের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক আছে কি?


ফরিদুজ্জামান ফরহাদ: পশ্চিমাদেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারের বড় একটি অংশ। আর আমেরিকা বাংলাদেশের এক নম্বর ইনভেস্টর। তারা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, তারা চায় এখানে গণতন্ত্র থাকুক। সে হিসেবে তারা তাদের ভূমিকা পালন করছে। আমরা বাংলাদেশের জনগণ নিয়ে আন্দোলন করছি। জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করে আমরা সফলতা অর্জন করব। আমরা কোনো বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল নই। ওবায়দুল কাদের বলেছেন- তাদের সাথে দিল্লি আছে, রাশিয়া আছে, চায়না আছে। কিন্তু আমদের সেটার প্রয়োজন নেই। কারণ আমরা জনগণ নিয়ে রাজনীতি করি, জনগণ নিয়েই মাঠে নেমেছি।


বিবার্তা: অতীতে সকল আন্দোলন শরিক দলগুলো এক সঙ্গে মিলেই করেছেন। কিন্তু এবার ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আন্দোলন করার কারণ কী?


ফরিদুজ্জামান ফরহাদ: এখনো সেই দলগুলো রয়েছে। জোটগত আর যুগপৎগত একই জিনিস। এখন যে যুগপৎ ভাবে আমরা আন্দোলন করছি এটা আরো বেশি ফলপ্রসূ হবে। একটি ফ্যাসিস্ট সরকার যার সাথে অস্ত্র রয়েছে, রাষ্ট্রীয় বাহিনী রয়েছে- তাকে সরাতে একটু সময় লাগবেই। পৃথিবীতে যত স্বৈরাশাসক রয়েছে তারা এভাবেই চলে কিন্তু দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয় না। তাদের পরিণতি খুবই খারাপ হয়। সময় লাগছে ইনশাআল্লাহ আমরা অচিরেই সফল হব।


বিবার্তা: এখন ভিন্ন ভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে আন্দোলন করছেন, সামনে এক মঞ্চে এসে আন্দোলনের সম্ভাবনা রয়েছে কি-না?


ফরিদুজ্জামান ফরহাদ: সামনে এক মঞ্চ থেকে আন্দোলন করার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে প্রতীকী অনশন কর্মসূচি ছিলো- সেই দিন আমরা ভিন্ন ভিন্ন স্থানে কর্মসূচি পালন করার পর এক মঞ্চে এসে সংহতি প্রকাশ করেছি। এটা অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গণতন্ত্র রক্ষা ভোটাধিকার রক্ষার এটা নতুন একটি যুদ্ধ। এই যুদ্ধ হচ্ছে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এই যুদ্ধ হচ্ছে দেশে গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। দেশের আইন-শৃঙ্খলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার যুদ্ধ। সে কারণে এটাকে ভোট যুদ্ধ বলে। যুদ্ধের কৌশল তো যে কোন সময় পরিবর্তন হতে পারে।


বিবার্তা: সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আপনারা সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাচ্ছেন কেন?


ফরিদুজ্জামান ফরহাদ: তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ যদি না হয় তাহলে ওনাকে (শেখ হাসিনা) আগে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। যে আমরা ১৭৩ দিন হরতাল করেছি, রোজার মধ্যেও হরতাল করেছি, ভাঙচুর করেছি, মানুষের সম্পদ নষ্ট করেছি, গান পাউডার দিয়ে মানুষ খুন করেছি- এটা ভুল ছিল। এটা আগে ভাষণ দিয়ে জাতির কাছে সরকারকে মাফ চাইতে হবে। তারপর যেন এমন বক্তব্য দেন।


বিবার্তা: আন্দোলেনের নামে রাজধানী অবরোধ করলে বিএনপির অবস্থা শাপলা চত্বরের চেয়েও করুণ হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার এমন বক্তব্য কীভাবে দেখছেন?


ফরিদুজ্জামান ফরহাদ: তাহলে ওবায়দুল কাদের শাপলা চত্বরের ঘটনা স্বীকার করে নিয়েছেন। তার আগে বলেছেন শাপলা চত্বরে কিছুই হয়নি। শাপলা চত্বর নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার কারণে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে জেলে যেতে হয়েছে। এখন ওবায়দুল কাদের এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্বীকার করলেন তার সরকার শাপলা চত্বরে প্রচুর মানুষকে হত্যা করেছে। কিন্তু আমাদের বক্তব্য হচ্ছে হেফাজত ইসলাম, বিএনপি এবং তার মিত্ররা এক নয়। বিএনপির সাথে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১০ কোটি মানুষ রয়েছে। হেফাজতের সময় যে কাজ করেছেন আর ২০২৩ সাল এক নয়। এটা দুঃস্বপ্ন, এটাকে দিবা স্বপ্ন বলব; এটা বাস্তবায়ন করা কাদেরের পক্ষে সম্ভব নয়।


বিবার্তা: সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?


ফরিদুজ্জামান ফরহাদ: সাংঘর্ষিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় খুবই সহজ। সরকার যদি বলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে- সেখানে জনগণ যদি তাকে ভোট দেয়- তাকে আমরা ওয়েলকাম জানাব। আর যদি আমরা জিততে পারি আমাদেরকে ওয়েলকাম জানাবে। এটা তো সারা জীবনের ব্যাপার নয়, মাত্র পাঁচ বছরের ব্যাপার। জনগণ চাচ্ছে কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন। মানুষ তার ভোট দিতে চায়। বর্তমান সংসদের এমপি রাশেদ খান মেনন তিনি নিজে বলেছেন আমার ভোট আমি দিতে পারিনি। বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির জি এম কাদের সাহেব বলেছেন আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করব- কিন্তু এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাব না। শুধু বিএনপি বা আমাদের দাবি নয়, বাংলাদেশের সমস্ত মানুষের দাবি এই সরকারের অধীনে ভোট নয়। এই সরকারের অধীনে ভোট চুরি, ভোট ডাকাতি হয়। অতএব ভোট যাতে দিতে পারি সেই ব্যবস্থাটা করা উচিত।


বিবার্তা: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে আনেক ধন্যবাদ।


ফরিদুজ্জামান ফরহাদ: আপনাকে এবং বিবার্তাকেও ধন্যবাদ।


বিবার্তা/রোমেল/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com