আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েছে সরকার : এমরান সালেহ প্রিন্স
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৩, ১৩:১৭
আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েছে সরকার : এমরান সালেহ প্রিন্স
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

"ভিসা নীতির ফলে বিএনপি কোন অতিরিক্ত সুবিধা আশা করে না। এমনিতেই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভিসা নীতি, নিষেধাজ্ঞা এসব বাড়তি কোনো সুবিধার বিষয় নয়। যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে সরকার দেশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে, আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়েছে সরকার, সে তো জনগণের আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি করবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা যুগে যুগে হয়ে আসছে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় হয়েছে, এটা নতুন কিছু নয়।"



কথাগুলো বলেছেন এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই রাজনীতিবিদ বিবার্তার সাথে একান্ত আলাপচারিতায় দেশের সাম্প্রতিক রাজনীতির নানা বিষয়ে কথা বলেছেন। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন বিবার্তার নিজস্ব প্রতিবেদক মোহাম্মদ ইলিয়াস।


বিবার্তা : দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?


এমরান সালেহ প্রিন্স : দেশ অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় চরম সংকটে নিপতিত হচ্ছে। গণতন্ত্রের সংকট, নির্বাচনের সংকট, জনগণের অধিকারের সংকট, অর্থনৈতিক সংকট। সর্বগ্রাসী সংকটে দেশ আজ নিপতিত শুধুমাত্র একটি কারণে। বর্তমান সরকার ভোট চুরি করে ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশ আজ চরম সংকটে নিপতিত। আজ দেশে-বিদেশে এই সরকারকে কেউ চায় না। এই সরকারের কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। প্রশাসনের কিছু লোকের উপর ভিত্তি করে তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছে। এই অবস্থায় চলতে পারে না।


বিবার্তা : এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ কি?


এমরান সালেহ প্রিন্স : একটাই মাত্র পথ এই অবৈধ, অগণতান্ত্রিক গণবিরোধী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জনগণের ভোটাধিকারের মধ্য দিয়ে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংসদ এবং জনপ্রতিনিধিত্বকারী সরকার প্রতিষ্ঠা করা। তবেই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব হবে। দেশে-বিদেশে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরে আসবে এবং দেশের এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে।


বিবার্তা : বিএনপি প্রথমত বলেছিল চূড়ান্ত আন্দোলন সেপ্টেম্বরে পরে অক্টোবর এখন বলা হচ্ছে পূজার পরে; তাহলে কি ঈদের পরে আন্দোলন সেই পথে হাঁটছে বিএনপি?


এমরান সালেহ প্রিন্স : রোজা, পূজা, ঈদ এগুলো বাংলাদেশের জনগণের সহজাত প্রবৃত্তির আনন্দ। এ সময় স্পর্শকাতর কিছু বিষয় থাকে, সে কারণে যখন কর্মসূচি নেওয়া হয় তখন এই দিবসগুলো মাথায় রেখেই ঘোষণা করা হয়। আমরা একদফার চূড়ান্ত আন্দোলনে রয়েছি। এই চূড়ান্ত আন্দোলনের প্রথম ধাপ আমরা অতিক্রম করলাম এখন দ্বিতীয় ধাপে রয়েছি। ইনশাল্লাহ এরপর আগামী ১৮ অক্টোবর জনসমাবেশ থেকে চূড়ান্ত আন্দোলন ঘোষণা করা হবে। রোড মার্চের শেষ দিনে চট্টগ্রামে মহাসচিব সরকারের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন শুভ বুদ্ধির উদয়ের জন্য, এর মধ্যে যদি সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় না হয় তাহলে আমাদের চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া কোন পথ থাকবে না।



এজন্য সরকার দায়ী থাকবে। এ সরকার জোর করে ক্ষমতায় থাকতে গিয়ে দেশে যেমন জনগণের আস্থা হারিয়েছে, জনগণকে যেমন প্রতিপক্ষ বানিয়েছে; তেমন আন্তর্জাতিক বিশ্বও তাদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বিদেশে গিয়ে অনেক দেন দরবার করেও কোন লাভ হয়নি। এগুলো করে সরকার যেমন নিজেদের অসহায় জনসম্মুখে প্রকাশ করেছে, তেমন দেশকেও তারা খাটো করেছে।



বিবার্তা : অনেকেই বলছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং সুচিকিৎসার বিষয়ে কঠোর আন্দোলন করতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি এ বিষয়ে কি বলবেন?


এমরান সালেহ প্রিন্স : এগুলো অনেকে বলেনি এটা সরকারের প্রযোজিত এবং সরকারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কিছু গণমাধ্যম এগুলোকে সামনে নিয়ে আসছে। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই বেগম খালেদা জিয়া এই সরকারের প্রতিহিংসার শিকার। বিশেষ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার। খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতার কারণেই এমনটি করা হয়েছে। এগুলো করে কোন লাভ নেই। আজকে বেগম খালেদা জিয়াকে এই সরকার ওয়ান ইলেভেনের সরকারের মামলার রায় দিয়ে তার জামিনের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তার চিকিৎসার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে নিয়ে গেছে।


আমরা প্রথম দিকে যেই আন্দোলন করেছি তাতে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্ত হওয়া সম্ভব ছিল দেশে যদি কোন সভ্য সরকার থাকত। দেশে কোনো গণতান্ত্রিক সরকার নেই, একটি অসভ্য সরকার, কোন কিছুকে তারা আমলে নেয় না। বেগম খালেদা জিয়াকে প্রতিহিংসাবশত আটকে রাখা হয়েছে। এখানে বিএনপির ব্যর্থতা নয়, বিএনপির আন্দোলনকে ব্যর্থ করতে গিয়ে সরকার দেশকে ব্যর্থতার দিকে ঠেলে দিয়েছে।


বিবার্তা : বিএনপি আন্দোলনের গতি না বাড়িয়ে বিদেশিদের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে গেল কি?


এমরান সালেহ প্রিন্স : বিএনপি কোনো বিদেশিদের উপর নির্ভরশীল নয়, আমরা জনগণের উপর নির্ভরশীল। আন্দোলন শুধু হরতাল অবরোধের মধ্যে নয়। জনগণের যে আন্দোলন সেটা হচ্ছে। সরকার যদি কোন কর্ণপাত না করে আন্দোলন বলতে আপনারা যেটা বুঝাচ্ছেন সে আন্দোলনে যেতে আমাদের কোন দ্বিধা থাকবে না।



আমরা সে আন্দোলনে যেতে চাইনি। কারণ দেশের মানুষের অবস্থা খুবই খারাপ। মানুষের আয় কমে গেছে, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কষাঘাতে মানুষ জর্জরিত। গ্রামগঞ্জে একটি ডিম দুটি বাচ্চাকে ভাগ করে খাওয়াচ্ছে। মাছ-মাংসের কথা তো তারা ভুলেই গিয়েছে। এরকম পরিস্থিতির মধ্যে আমরা যদি ওই ধরনের আন্দোলন দিতাম তাহলে দেশের অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যেত। সেই আন্দোলনে দেশ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন সরকার যদি আমাদের দাবি মেনে না নেয়, তাহলে আন্দোলন বলতে জনগণ যেটা বুঝে আমাদের সেদিকে যাওয়া ছাড়া কোন পথ থাকবে না।



বিবার্তা : ভিসা নীতির ফলে বিএনপি কোন বাড়তি সুবিধা আশা করে কিনা?


এমরান সালেহ প্রিন্স : বিএনপি কোন অতিরিক্ত সুবিধা আশা করে না। এমনিতেই সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ভিসা নীতি, নিষেধাজ্ঞা এসব বাড়তি কোনো সুবিধার বিষয় নয়। যেহেতু আন্তর্জাতিকভাবে সরকার দেশকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে, আন্তর্জাতিকভাবে এক ঘরে হয়ে পড়েছে সরকার। সে তো জনগণের আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি করবে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটা যুগে যুগে হয়ে আসছে, এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় হয়েছে, এটা নতুন কিছু নয়।


বিবার্তা : বিএনপি একটি অংশ নির্বাচনে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত এ বিষয়ে কী বলবেন।


এমরান সালেহ প্রিন্স : এটা একটা প্রপাগান্ডা। দলের উচ্চপর্যায়ে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে, কেউ এই ব্যর্থ সরকারের দালাল হিসেবে পরিচিত হতে চায় না। হবেও না। দলের সকল সিদ্ধান্ত ও সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে নেওয়া হয়। এখন ছাত্তার মার্কো (উকিল আব্দুস সাত্তার) কিছু লোক যদি এই সরকারের ফাঁদে পা দেয় তবে সেই দায়দায়িত্ব তাদের নিতে হবে।


বিবার্তা : শোনা যাচ্ছে তৃণমূল বিএনপিতে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী যোগ দিবেন?


এমরান সালেহ প্রিন্স : এটা হচ্ছে সরকারের একটি নাটক। এ বিষয়ে আমাদের মন্তব্য করার কিছুই নেই। তৈমুর আলম খন্দকার এমন কোন ব্যক্তি নয় যে বিএনপির সকল লোককে সংগঠিত করে ওখানে নিয়ে যাবেন। উনি নিজের পরিবারেই তো জায়গা পাচ্ছে না। নিজের পরিবার সাথে এক বাসায় থাকতে পারছে না।


বিবার্তা : তৃণমূল বিএনপিকে নিয়ে বিএনপির কোনো শঙ্কা রয়েছে কি না?


এমরান সালেহ প্রিন্স : কোনো শঙ্কা নেই। এরকম বহুবার বিএনপি ভাঙ্গার চেষ্টা করা হয়েছে, পারেনি। বিএনপি ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে। বিএনপি তারেক রহমান নেতৃত্বে এবং খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জিয়া পরিবারের প্রতি আস্থাশীল।


বিবার্তা : সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


এমরান সালেহ প্রিন্স : আপনাকে এবং বিবার্তাকেও ধন্যবাদ।


বিবার্তা/এমই/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com