সাক্ষাতকার
'৭ই মার্চের ভাষণের সার্বজনীন ও বিশ্বজনীন রূপদানে শেখ হাসিনার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে'
প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
'৭ই মার্চের ভাষণের সার্বজনীন ও বিশ্বজনীন রূপদানে শেখ হাসিনার অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে'
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) হিসেবে সফলতার সাথে প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব পালনের পর দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষকতা জীবনে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে, অতিথি অধ্যাপক হিসেবে অধ্যাপনা করেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইনোনা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে।


বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে সমাজকর্ম শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ওয়াশিংটনস্থ সিএসডবি উই পরিচালিত ‘ক্যাথেরিন ক্যান্ডাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল ওয়ার্ক এডুকেশন’-এর ফেলো হিসেবে তিনি বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্মের উচ্চশিক্ষার ওপর গবেষণা করেন। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি অ্যান্ড সায়েন্সেস (ইউআইটিএস)-এর উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন।


'মুজিব আমার স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি' এই অমর পঙক্তির রচয়িতা বিশিষ্ট এই কবি চীন ও গ্রিসের তিন‌টি সাহিত্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যৌথভা‌বে ঘোষিত ‘দ্য প্রাইজেস ২০১৮ : দ্য ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট পোয়েট’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠ কবি’ খ্যাতি অর্জন করেন। কাব্যক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তি‌নি "বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২০" অর্জন করেছেন। ক‌বিতা, কাব্যানুবাদ ও সমাজ-গ‌বেষণা মি‌লি‌য়ে তাঁর গ্রন্থ সংখ্যা ৩০‌টি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ সম্প্রতি ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ঘিরে বিবার্তা প্রতিবেদক মহিউ‌দ্দিন রাসেলের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় কিছু কথা বলেছেন। তাঁর সঙ্গে আলাপের মূল অংশটুকু বিবার্তা২৪ ডটনেটের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।


বিবার্তা:  ৭ই মার্চের ভাষণের ঐতিহাসিক পটভূমি কী ছিল বলে আপনি মনে করেন?


অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের সংগ্রাম ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি। সেটা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তি। এই লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের ১ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধু বলতেন, পাকিস্তানের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ছাত্রলীগ। ভাষা আন্দোলনের ১৯৪৮ পর্বে এই ছাত্রলীগই নেতৃত্ব দেয়। ১৯৪৯, '৫০, '৫১ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলনের যে দিবস অর্থাৎ ১১ মার্চ ভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, সেটাকে এখন আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জানি। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে ধাপে ধাপে বঙ্গবন্ধু অগ্রসর হন। এক পর্যায়ে তিনি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার শিকার হন এবং তাঁর ফাঁসি হওয়ার কথাও ছিল। কিন্তু  গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু মুক্তি পায়,আইনের মধ্য দিয়ে নয়। বঙ্গবন্ধুকে মুক্তির জন্য বাংলার মানুষ সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে এতোই চাপ তৈরি করে যে, তারা বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ১৯৬৬’র ছয় দফা বাঙালির বাঁচার দাবি এবং এই দাবিগুলো নিয়ে বঙ্গবন্ধু সারা বাংলাদেশের গ্রামে- গঞ্জে যান।  এ সময় মানুষ তাঁর প্রতি ব্যাপক সমর্থনও দেন। আর এ সমর্থনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু ১৯৭০-এর নির্বাচনে অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। বলতে গেলেই তখন সমস্ত ক্ষমতা তার হাতে পুঞ্জিভূত হয়।


এই নির্বাচনের পর থেকে কার্যত পাকিস্তানের পূর্বের অংশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা পূর্ব বাংলা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩ মার্চ পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে সভা আহ্বান করা হয়। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ১ মার্চ এই অধিবেশন বন্ধ করে দেয়। আর এই অধিবেশন বন্ধের পর বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি বিক্ষোভ ও আন্দোলনে ফেটে পড়ে। তখন বঙ্গবন্ধু ২-৬ তারিখ পর্যন্ত হরতাল ডাকেন এবং সেই হরতাল সারাদেশে অভূতপূর্বভাবে পালিত হয়।  এরপর বঙ্গবন্ধু বললেন, এই হরতালের পর ৭ তারিখে রেসকোর্স ময়দানে জনসভা করা হবে। আর এ ৭ তারিখের জনসভা হলো ৭ ই মার্চের আরেক নাম। সেই জনসভায় বঙ্গবন্ধু এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, “১৯৫২ সালে রক্ত দিয়েছি। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করেও আমরা গদিতে বসতে পারি নাই। এভাবে বলতে বলতে একপর্যায়ে তিনি বলেন," রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দেব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশাল্লাহ্।" এভাবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ধীরে ধীরে বাঙালি জাতি সংগ্রামে অগ্রসর হয়েছে। আর এটাই বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির চূড়ান্ত রূপ। জনগণকে সশস্ত্র সংগ্রামে উজ্জীবিত করেন বঙ্গবন্ধু। ফলে বাঙালি জাতি সশস্ত্র হয়ে উঠে। তারপর মুক্তিযুদ্ধ করে স্বাধীন –সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে।


বিবার্তা: ৭ই মার্চের ভাষণে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনের কৌশলগত দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। এ বিষয়ে আপনার অভিমত জানতে চাচ্ছি।


অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ: ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাবেশে বাংলার শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের মুক্তি ও স্বাধীনতার অর্জনের লক্ষ্যে কৌশলগত দিকনির্দেশনা প্রদান ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ ধারাবাহিক রাজনৈতিক সংগ্রামের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য। সেদিনের ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু হাজার বছরের পরাধীন জাতিকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে প্রস্তুত করে তোলেন। তাহলে কী ছিলো ঐতিহাসিক ভাষণে? আর একটি কালজয়ী ভাষণের মাধ্যমে কীভাবে নিরস্ত্র বাঙালি জাতিকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যে প্রস্তুত করে তুললেন বঙ্গবন্ধু? সে বিষয়ে কিছু কথা এখানে বলা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধুর আজীবনের স্বপ্ন ছিলো শোষিত-বঞ্চিত-নিপীড়িত বাঙালির মুক্তি ও বাংলার স্বাধীনতা। বলা আবশ্যক যে, ১৯৭১-এর রক্তঝরা মার্চে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের পেছনে বাংলার জনগণের নির্বাচনী ম্যান্ডেট ছিলো বলেই এই আন্দোলন স্বশাসনের ভিত্তি লাভ করেছিলো । ফলে পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক সরকার-কাঠামো ভেঙে পড়ে এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ও নেতৃত্বে একটি বিকল্প নির্বাচিত সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। ৭ই মার্চ তাঁর জীবনের স্বপ্ন শীর্ষবিন্দুতে পৌঁছায়। তবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ছিলো বাঙালি জাতি ও তাঁদের মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ। সেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে জাতিকে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতিপর্বে তিনি প্রথমেই স্মরণ নিলেন ইতিহাসের। তুলে ধরলেন ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামকালের জেল-জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন-বঞ্চনা ও বাংলার বীর সন্তানদের জীবন উৎসর্গের দুঃখগাঁথা। এভাবেই তিনি নানা কৌশলে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা অর্জনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।


বিবার্তা: বঙ্গবন্ধুর ভাষণের সার্বজনীন ও বিশ্বজনীন রূপদানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাচ্ছি।


অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ: আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে স্বজনের রক্তেভেজা দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে বঙ্গবন্ধু অনুসারীদের সংগঠিত করা, দল গোছানো এবং সামরিক শাসন-ত্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ সময় পার করতে হয়। অতঃপর তাঁর অপার আগ্রহ ও উদ্যোগে ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়ে শুরু হয় বুদ্ধিবৃত্তিক-চর্চা। ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’-এর  সভাপতি শেখ হাসিনার উদ্যোগে ২০০৪ সাল থেকে ৭ই মার্চের ভাষণের ওপর প্রতি বছর মার্চ মাসের প্রথমার্ধে একটি করে সেমিনার আয়োজন করা হতে থাকে। অদ্যাবধি পঠিত ১৪টি মূল প্রবন্ধ, সভাপতির ভাষণ, স্বাগত বক্তব্য ও আলোচকদের আলোচনা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ : বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ(২০২০) শীর্ষক একটি মূল্যবান গ্রন্থ বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত হয়েছে।


শেখ হাসিনার সরকার বাঙালির রক্তের অক্ষরে লেখা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪ নং আইন)-এর ৫৫ ধারাবলে বাংলাদেশের সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পঞ্চম তফসিল দ্বারা ১৯৭১ সালের বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ আমাদের সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। উপরন্তু সংবিধানের ৭ (খ) ধারা অনুযায়ী সংবিধানের ১৫০ অনুচ্ছেদকে একটি অপরিবর্তনযোগ্য বিধান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ফলে পঞ্চম তফসিলে উল্লিখিত বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি আমাদের সংবিধানের একটি অপরিহার্য ও অপরিবর্তনীয় অংশে পরিণত হয়েছে।


এদিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার কর্তৃক ২০১৩ সাল থেকে স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তকে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।শুধু তাই নয়, ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ড. জ্যাকব এফ. ফিল্ড কর্তৃক সম্পাদিত ও ২০১৩ সালে প্রকাশিত We shall Fight on the Beaches : The Speeches that Inspire Historyগ্রন্থে আড়াই হাজার বছরের ৪১টি ইতিহাসসৃষ্টিকারী ভাষণের একটি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার গৌরব অর্জন করে।  এই জায়গাটায় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। এই ৪১টি গুরুত্বপূর্ণ ভাষণের বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি অলিখিত আর বাকী ৪০টি ভাষণ লিখিত। কাজেই এই ভাষণের তাৎপর্য,গুরুত্ব, মহীমা অপরিসীম। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা লাভের মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করেছে জয় বাংলা স্লোগান এবং আর ৭ ই মার্চের ভাষণ। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো তার ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এর হেরিটেজ ডকুমেন্ট অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার ইউনেস্কোর স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ উপস্থাপন করে। পরের বছর ২০১৭ সালের ৩০শে অক্টোবরে ইউনেস্কো কর্তৃক ভাষণটিকে হেরিটেজ ডকুমেন্ট হিসেবে ‘মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার’-এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এদিকে ২০১৭ সালের ২০শে নভেম্বর প্রদত্ত বাংলাদেশ হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণের দিনটিকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার ২০২০ সালের ১৫ই অক্টোবর ‘ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ দিবস’ ঘোষণা করে। মোটকথা, আমরা একথা কৃতজ্ঞচিত্তে উপলব্ধি করি যে, ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণের সার্বজনীন ও বিশ্বজনীন রূপদানে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার অনন্য অবদান বাঙালির ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে।


বিবার্তা:  ৭ ই মার্চের ভাষণ এখনো এই দেশের মানুষের জন্য প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে কি-না?


অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ সামাদ: ৭ই মার্চের ভাষণের দিকনির্দেশনায় বাঙালি জাতি আজও এগিয়ে যাবার পথে অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। বাঙালির মুক্তি ও স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছেন ‘আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। ...এ দেশের মানুষের অধিকার চাই।’ ‘রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরও দেব.।’ ‘...কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবা না’


 চরম আত্মত্যাগ ও দৃঢ় অঙ্গীকারদীপ্ত এই উচ্চারণগুলো চিরকালের জন্যে সাহস সঞ্চারী, প্রেরণাদায়ী ও অনুকরণীয়।


ফলে এই সব উচ্চারণের সঙ্গে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতিদিনের অঙ্গীকার মিলিয়ে দেখলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতির ৫২ বছর পূর্বের ভাষণের অমোঘ সাদৃশ্য ও প্রাসঙ্গিকতায় বিস্মিত হতে হয়। যেমন ২০০০ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে মাথা নত না-করে দেশের মানুষের গ্যাস-সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীত্ব বিসর্জন দিয়েছেন; জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে অথবা জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণে পিতার মতোই দৃঢ়কণ্ঠে উচ্চারণ করেন : ‘...গুলি খেয়ে মরি বোমা খেয়ে মরি. মৃত্যুকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি’ (শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদে প্রদত্ত ভাষণ, জাতীয় সংসদ, ১০ই জুন, ২০২০)। এমন মহৎ অঙ্গীকারের ফলস্বরূপ বাংলার ১৭ কোটি মানুষের সমর্থন ও ভালোবাসায় অভিষিক্ত রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ ও যোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের  বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। তাই, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় প্রতিনিয়ত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠের প্রতিধ্বনি করেন জননেত্রী শেখ হাসিনা: ‘...দাবায়ে রাখতে পারবা না’; আর বঙ্গবন্ধুর মতোই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নিজের কণ্ঠেও ধ্বনিত হয় : ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।’


বিবার্তা : বিবার্তাকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।


অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ: আপনাকেও ধন্যবাদ।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com