শিরোনাম
তাঁদের রক্তঋণ কোনোদিনও শোধ করতে পারবো না
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০১৬, ১৬:০৭
তাঁদের রক্তঋণ  কোনোদিনও শোধ করতে পারবো না
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

১৯৭১ সাল, সদ্য স্বাধীন আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। যুদ্ধ বিধ্বস্ত, চারদিকে ধ্বংসস্তুপ। সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে দেশকে সাবলম্বী করার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যাদেরকে সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে রেখে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা হলেন - সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান।


বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে তখন স্নায়ুযুদ্ধের দাঁতাত পর্যায় চলছিল। একদিকে সমাজতন্ত্র আর আরেকদিকে পুঁজিবাদ। সঙ্গত কারনেই সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশও সেই বিশ্বরাজনীতিতে এক নবীন সদস্য হিসেবে নিজেদের পরিচিত করে তুলছিল। আর সেই লক্ষ্যে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর ভূমিকার কথা স্মরণ রেখে বঙ্গবন্ধু একটি বিদেশনীতি অবলম্বন করে সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে মাথা উচুঁ করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছিলেন।


১৯৭৫ সাল, ১৫ আগষ্ট। হঠাৎ হায়েনার আক্রমন।বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। সারা বিশ্বের জাতীয় দৈনিকে শিরোনাম হলো “বাঙ্গালী অকৃতজ্ঞের জাতি, তারা তাদের জাতির পিতাকে হত্যা করেছে"। কিছু পিশাচের জন্য সমগ্র জাতিকে সেদিন কলংকিত হতে হয়েছিল।


শাসনতন্ত্র আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হলো। অসাংবিধানিক ভাবে দেশ চলতে থাকল। এলো নভেম্বর মাস। মাসের প্রথম দিনেই সামরিক বাহিনীর দুটি অংশের মধ্যে মহড়া-পাল্টা মহড়া চলতে থাকে। এই সামরিক মহড়ার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল জিয়াউর রহমান। তার প্রত্যক্ষ ইঙ্গিতেই ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী অবস্থায় জাতীয় চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। সেদিন সেই পরিকল্পনা করে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে কলংকিত করেছিল জিয়াউর রহমান।


মূলত বাংলাদেশকে নেতৃত্ব শূন্য করার উদ্দেশ্যেই ৩ নভেম্বর ভোরবেলা জিয়া-ফারুক-রশিদ পরিকল্পিত 'আকস্মিক পরিকল্পনা' কার্যকর করার জন্যে রিসালদার মুসলে উদ্দিন তার দলবল নিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার জন্য প্রবেশ করে।


সৈয়দ নজরুল ইসলাম আর তাজউদ্দিন আহমেদ একটি সেলে অবস্থান করছিলেন। ক্যাপ্টেন মনসুর আলী ও এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান ছিলেন পাশের একটি সেলে। তাদেরকে সৈয়দ নজরুল ইসলামের সেলে একএিত করা হয়। একএিত অবস্থায় খুব কাছ থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্রের গুলিতে তাদেরকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। তাদের তিনজন সাথে সাথে প্রাণ হারালেও তাজউদ্দিন আহমেদ পেটে ও পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে রক্তক্ষরণের ফলে আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পরে মারা যান।


পাশের সেলে অবস্থানরত এক কারাবন্দী জানায় যে, সে ওখানে মৃত্যু যন্ত্রণায় কোনো একজনের আর্তনাদ শুনেছিল। আর পানি পানি বলে মৃত্যুর পূর্বক্ষণ পর্যন্ত কাঁতরানোর মর্মভেদী শব্দও তার কানে আসছিল। বর্বর ঘাতকরা চলে যাওয়ার আগে সেলটিকে তালাবদ্ধ করে রেখে যাওয়ায় মৃত্যুর আগে তাজউদ্দিন আহমেদের মুখে এক ফোঁটা পানিও কেউ তুলে দিতে পারেনি।


১৯৭৫ সালের নভেম্বরে তিনজন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের সমন্বয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছিল।


জিয়াউর রহমানের সাড়ে পাঁচ বছরের স্বৈরশাসনকালে ঐ তদন্ত কমিশন আলোর মুখ দেখেনি। জারী করা হয়েছিল ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। তাদের রক্ত কোনোদিন জিয়াকে ক্ষমা করবে না। আর তাঁদের রক্তঋণ আমরা কোনোদিনও শোধ করতে পারবো না।


জাতীয় চার নেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি আর তাঁদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।


মোহাম্মদ সালেহীন রেজার ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com