ত্যাগ ও সততার বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন দেশের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ হিসেবে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক সংকট দূরীকরণকে সহজতর করতে নিজের প্রাপ্য কোটি টাকার সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ না করে এ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।
উপাচার্যের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে অত্যন্ত দক্ষতা ও সুনামের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই অভিজ্ঞ ও গুণী শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের অভিশাপ সেশনজট। আর সেটি দূর করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধিসহ নির্বিঘ্নে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় সর্বমহলে প্রশংসা কুড়িয়েছেন তিনি। এবার এই বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন তিনি।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে গত সাত বছর ধরে কোনো ধরনের সভা থেকে সিটিং অ্যালাউন্স বাবদ অর্থ গ্রহণ করেননি উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক।
উপাচার্যের এই বিরল ত্যাগের বিষয়টি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট অধিবেশনে সবার সামনে তুলে ধরেন।
অধিবেশনের লিখিত বাজেট বক্তৃতায় ঢাবি কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘একটি বিষয় উল্লেখ না করে পারছি না যে, এখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নরেশ সেনগুপ্তের মতো ত্যাগী অধ্যাপক শিক্ষক আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চপদে অধিষ্ঠিত প্রো-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষসহ সকলেই বিভিন্ন পর্যায়ের সভাসমূহের জন্য ‘সিটিং অ্যালাউন্স’ অত্যন্ত আনন্দের সাথে গ্রহণ করেন। শুধুমাত্র আমাদের উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘাটতি কমানোর জন্য কোনো সিটিং অ্যালাউন্স গ্রহণ করেননি। আমার হিসাবে গত সাত বছরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে প্রায় এক কোটি ২৫ লাখ টাকা সাশ্রয় করেছেন। উচ্চ নৈতিকতার জন্য এটা একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত নয় কি?’
এ সম্পর্কে ঢাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দিন বিবার্তাকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি উপাচার্যের যে অগাত ভালোবাসা রয়েছে, এটি তারই বহি:প্রকাশ। ত্যাগ করার মানসিকতা সবার থাকে না। যাদের সত্যিকার অর্থে প্রতিষ্ঠানের প্রতি ভালোবাসা আছে, তারাই এ ধরনের মহৎ কাজ করতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতি সত্ত্বাকে বিনির্মাণ করা বা জাগরণের অন্যন্য প্রতিষ্ঠান। আর একারণে এই প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব দেয়াকে তিনি দেশের প্রতি প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখেন।
সিটিং অ্যালাউন্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রতি বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটি কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ হয়ে থাকে। আর এই কাজের দেখভালের জন্য সর্বোচ্চ সময় দেন তিনি। অতিরিক্ত এসব কাজে সময় দেয়ার জন্য নির্ধারিত থাকে ভাতা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়েও এ ধরনের ভাতা আছে। আর ভর্তি পরীক্ষায়ও প্রধান পরীক্ষকদের ভাতা হিসেবে অনেক টাকা নির্ধারিত থাকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোবেসে উপাচার্য কোনো ভাতা গ্রহণ করেননি। তিনি প্রথম থেকে এই বিষয়টির চর্চা করে আসছেন। তখন বিষয়টি সেভাবে কেউ খেয়াল করেননি। এখন হয়তো সবাই লক্ষ্য করছেন। এ বিষয়টি সবার সামনে আসায় অন্যরাও নিশ্চয় উৎসাহিত হয়ে এমন সততা ও নিষ্ঠার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে আশা করি।
উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২৭ তম উপাচার্য হিসেবে অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক নিয়োগ পান ২০০৯ সালের ১৫জানুয়ারি।বিশ্ববিদ্যালয় এর ৭৩ অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরবর্তীতে সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত উপাচার্য হিসেবে প্রথম মেয়াদ এবছরআগস্টেশেষ করবেন।
বিবার্তা/আরাফাত/মোয়াজ্জেম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]