শিরোনাম
পাকিস্তানের সঙ্গে দেনা-পাওনার হিসাব
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৫:৫৩
পাকিস্তানের সঙ্গে দেনা-পাওনার হিসাব
প্রিন্ট অ-অ+

কথায় বলে, ধর্মের ঢোল আপনি বাজে। কথাটা যে কখনো কখনো নিরেট সত্য হয়ে আমাদের চোখের সামনে উপস্থিত হয়, এবার তার প্রমাণ পাওয়া গেলো। নইলে যে কথা আমাদের বলার কথা, সেটা যার কখনোই এবং কোনোভাবেই বলার কথা নয়, তারা বলবে কেন? তারা যদিও বলেছে নিজেদের কোলে ঝোল টেনেই, কিন্তু একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যায়, এ আর কিছু নয়, এ হলো ধর্মের ঢোল বেজে ওঠা।


কথাটা হচ্ছে পাকিস্তানের সর্বসাম্প্রতিক একটি দাবি নিয়ে। দ্য স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানকে (এসবিপি) উদ্ধৃত করে পাকিস্তানের দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন মঙ্গলবার খবর দিয়েছে, বাংলাদেশের কাছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা (৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি) পাওনা দাবি করতে যাচ্ছে পাকিস্তান।


খবরে বলা হয়েছে, ১৯৭১-এর আগে পূর্ব পাকিস্তানের কাছে পশ্চিম পাকিস্তানের যে অর্থ পাওনা ছিল, তা বর্তমানে ৭০০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। অ্যাসেট ভ্যালুয়েশনের (একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে চলতি বাজারে সম্পদের মূল্যায়ন করা হয়ে থাকে) মাধ্যমে প্রকৃত পাওনা নিরূপণ করা হয়েছে।


পাকিস্তানের পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সরকারি অফিস, ঋণ, আগাম সুবিধাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তনের কারণে পূর্ব পাকিস্তানের কাছে যে টাকা পাওনা ছিল, ২০১৬ সালের জুন নাগাদ ভ্যালুয়েশন করে তা ৯ দশমিক ২১ বিলিয়ন পাকিস্তানি রুপিতে (৬০০ কোটি ৯২ লাখ টাকা) দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের কাছে এখন পাকিস্তান এই টাকা দাবি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।


অতি উত্তম প্রস্তাব। পাওনা থাকলে তো পরিশোধ করতেই হবে। প্রশ্ন হলো, কে কার কাছে ঋণী? পরিসংখ্যান বলছে, একাত্তরের আগের হিসাব করলে পাকিস্তানের কাছেই বাংলাদেশের প্রাপ্য প্রায় ৩৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা (৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার)।


বাংলাদেশের সঙ্গে সেই সম্পদ বণ্টনের বিষয়টি এত দিনেও সুরাহা করেনি পাকিস্তান। এছাড়া ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জন্য সহায়তা হিসেবে বিভিন্ন দেশের পাঠানো ২০ কোটি ডলার পাকিস্তান নিয়ে গিয়েছিল। স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঢাকা শাখায় জমা হওয়া ওই ত্রাণের টাকা মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্যাংকের লাহোর শাখায় নিয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ওই অর্থ চাইলেও তা ফেরত দিচ্ছে না পাকিস্তান।


এ-ই যখন বাস্তবতা, তখন পাকিস্তান কিনা বলছে, আমাদের কাছেই তাদের বকেয়া পাওনা আছে !


পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের বকেয়া পাওনার বিষয়টি উত্থাপন ও মীমাংসার দাবিটি এদেশের বিদ্বৎসমাজ বহু দিন থেকেই জানিয়ে আসছে। বিশেষ করে ১৯৯৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পতাকাবাহী আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দাবিটি জোরদার হয়। কিন্তু কেন যেন বিষয়টি আর বেশিদূর এগোয়নি। আসলে রাজনীতি, তা হোক আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক কিংবা অভ্যন্তরীণ, সে বড় জটিল ঘূর্ণিপাক। হয়তো তারই পাকে পড়ে বিষয়টি হারিয়ে যায়। তাতে পাকিস্তান বেঁচে যায় আর আমরা নিশ্চিতভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হই। কারণ, ন্যায়বিচার হলে আমাদেরই জয়ী হওয়ার কথা।


আল্লাহ্‌র কী মহিমা, আজ সেই পাকিস্তানই ইস্যুটিকে ফের সামনে নিয়ে এসেছে। আমরা মনে করি, আমাদের উচিৎ হবে যেন কোনোভাবেই এটি হাতছাড়া না হয়, তার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো। পাকিস্তান যেন আর পিছলে যেতে না পারে। আমরা তাদের বলতে পারি, পাওনা আছে? এসো দলিলপ্রমাণ নিয়ে, বসো আলোচনার টেবিলে।


আমরা নিশ্চিত, জয় আমাদেরই হবে। ১৯৭১ সালে ওদের সুপ্রশিক্ষিত বাহিনীকে পরাজিত করে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। মুক্তিযুদ্ধকালের ধ্বংসস্তুপ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের বুকে আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে। মিয়ানমারের সঙ্গে আইনী লড়াইয়ে করেছি সমুদ্রজয়। ভারতের সঙ্গে আলোচনা করে করেছি ছিটমহল সমস্যার সমাধান। ফিলিপিন্স থেকে উদ্ধার করে এনেছি চুরি যাওয়া রিজার্ভের একাংশ, আশা করছি বাকি টাকাও উদ্ধার হবে।


আমরা বলতে চাইছি, আমরা এখন আর কোনো পিছিয়ে পড়া হীনবল জাতি নই। সাফল্যে, আত্মবিশ্বাসে উজ্জীবিত এই দেশ এখন, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম। পাওনার দাবি নিয়ে আসবে পাকিস্তান? আসুক। তারা যদি তাদের দাবির ন্যায্যতা প্রমাণ করতে পারে, তবে সে দাবি মেটানোর সামর্থ্যও বাংলাদেশের আছে।


কিন্তু আমরা নিশ্চিত, আমাদের কাছে পাকিস্তানের কোনো পাওনা নেই, বরং আমরাই পাকিস্তানের কাছে প্রায় ৩৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকার (৪ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার) পাই।


বুঝে হোক আর না-বুঝে হোক, ইস্যুটি যখন পাকিস্তানের দিক থেকে উঠেছে, আমাদের উচিৎ হবে, জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে তাদের আলোচনার টেবিলে বসতে বাধ্য করা।


ধর্মের ঢোল যখন বেজে উঠেছে, আশা করি তা বাজতেই থাকবে। চিরকালই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়েরই জয় হয়েছে। আমাদের দাবি ন্যায়সংগত।


ইনশাআল্লাহ জয় আমাদের সুনিশ্চিত।

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com