অবশেষে একটি মামলায় সাজা পেলেন কক্সবাজারের প্রতাপশালী সংসদ সদস্য, বহু অঘটনের হোতা আবদুর রহমান বদি। কখনও মাদকের নেটওয়ার্ক চালানোর অভিযোগে, কখনও বা সাংবাদিক সরকারি কর্মকর্তা পেটানোর দায়ে বার বার আলোচনায় এসেছিলেন এই বদি। হয়েছিলেন সংবাদ শিরোনাম। কিন্তু তারপরও কীভাবে যেন আইনের ধরা-ছোঁয়ার অনেকটা বাইরে থেকে যেতে সক্ষম হন তিনি।
জানা যায়, বদিদের আদি বাড়ি মিয়ানমারে। তার বাবা এজাহার মিয়া কোম্পানির জন্ম সেখানেই। জন্মসূত্রে বদিও রোহিঙ্গা। স্বাধীনতার আগে বদির বাবা এজাহার মিয়া কোম্পানি টেকনাফের নাফ নদীর তীরে এসে বসতি গড়েন এবং শুরু করেন স্বর্ণ চোরাচালান। ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন আন্তর্জাতিক স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের একজন বড় চাই।
পিতা যখন চোরাচালানী, গুণধর পুত্র কি আর তার চাইতে কম কিছু হতে পারেন? অতএব তিনি শুরু করলেন ইয়াবা (মাদক) ব্যবসা। শুধু বদি-ই নন, তার ভাই-বেয়াই, মামা-ভাগ্নেসহ পরিবারের অন্তত ১০ জন ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে একাধিক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এতো অভিযোগ সত্ত্বেও বদির টিকিটি ছুঁতে পারছিলেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ফলে জনমনে এমন ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল যে, যতো অপরাধ-অপকর্মই করুক, বদির কিছুই হবে না। এই না হওয়ার জন্য মনে-মুখে সরকারকেও দায়ী করতো মানুষ। কারণ, বদি যে সরকারি দলের এমপি!
কিন্তু হলো। সম্পদের তথ্য গোপনের দায়ে বুধবার বদিকে তিন বছর কারাদণ্ড এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।
বদির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে, যদি তার সিকি শতাংশও সত্যি হয়, তাহলে তার বহু বছর কারাগারে থাকার কথা। তবে এখানে সেটা আলোচ্য বিষয় নয়, আলোচ্য বিষয় হলো সরকারী দলের একজন এমপি হয়েও বদি সাজার হাত থেকে বাঁচতে পারেননি। আইন এখানে দেখেনি দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি কে, কী তার পরিচয়। আইন চলেছে তার নিজস্ব গতিতে এবং তাতে বদি সরকারী দলের এমপি হয়েও বাঁচতে পারেননি।
বদির এই সাজার মধ্য দিয়ে দেশে আইনের শাসন সমুন্নত হলো। আমরা আশা ও বিশ্বাস করি, বদিকে সাজা দেয়ার মধ্য দিয়ে যে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো, তা এখানেই থেমে যাবে না।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ই বলে থাকেন, অপরাধী যে-ই হোক, বিচার হবেই। বদির সাজার মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সেই অঙ্গীকারই প্রতিফলিত হলো। মানুষ জানলো, বিচার বিভাগের কাজে সরকার হস্তক্ষেপ করে না, এমনকী যদি সেই বিচার সরকারি দলের কারোও হয়।
এটাই তো ন্যায়বিচার। ন্যায়বিচারের এই ঝান্ডা চিরউড্ডীন থাকুক।
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]