শিরোনাম
সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ : রামু থেকে নাসিরনগর
প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০১৬, ১৮:৩৬
সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষ : রামু থেকে নাসিরনগর
প্রিন্ট অ-অ+

ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগরে আসলে কী নিয়ে ঘটনার (পড়ুন : দুর্ঘটনা) সূচনা হয়েছিল?


পত্রপত্রিকা ও ঘটনাপরবর্তীকালের বক্তৃতা-বিবৃতি-কলাম পাঠে যা জানা যায় তা এরকম : এক অমুসলিম যুবক তার ফেসবুকে ইসলাম অবমাননামূলক একটি ছবি পোস্ট করে। খবরটি জানাজানি হতেই একদল লোক সমাবেশ করে এবং সেই সমাবেশ হতেই হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা-লুটপাট হয়।


কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া নিঃসন্দেহে অপরাধ। প্রশ্ন হলো, সেই অপরাধের বিচার কি জনতা করবে, না আইন-আদালত?


আরো প্রশ্ন, অপরাধ করেছে একজন, সেজন্য তার সম্প্রদায়ের ওপর হামলা করা কি আইনসিদ্ধ, না ইসলাম-অনুমোদিত?


আমাদের এই দেশে হাজার বছর ধরে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণ-গোত্রের মানুষ সুখে-দুঃখে পাশাপাশি বাস করে আসছে। ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থের দ্বন্দ্বে কিংবা স্বার্থাণ্বেষী মহলের ফাঁদে পা দিয়ে তারা কখনো কখনো পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে বটে, কিন্তু সেটা সাময়িক। ইংরেজ শাসকগোষ্ঠী তাদের শাসন স্থায়ী করার কুমতলবে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসি নিয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। তাতেও তারা পুরোপুরি সফল হতে পেরেছিল, তা বলা যাবে না। বাংলাদেশ কখনো সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পে নিমজ্জিত হয়নি, বরং বার বারই উর্ধ্বে তুলে ধরেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পতাকা।


জানতে ইচ্ছা হয়, আজ কারা সেই সম্প্রীতির পতাকাকে টেনে নামাতে চাচ্ছে? নাসিরনগরের ঘটনা কোনো বিচ্ছিন্ন কিছু, নাকি কোনো ব্যাপকতর ষড়যন্ত্রের অংশ, সেটা তদন্তকারীরাই বলবেন। আমরা খোলা চোখে যা দেখতে পাই তা হলো, এ ঘটনায় সরকারের একজন মন্ত্রী এবং সরকারদলীয় তিন নেতার নামও জড়িয়ে গেছে। সরকারি দল আওয়ামী লীগ অবশ্য তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত দুই জনকে দল থেকে বহিষ্কার এবং একজনকে শো-কজ করেছে। অভিযুক্ত মন্ত্রীর বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। আশা করতে চাই, সরকারের তরফ থেকে এ বিষয়টি পরিষ্কার করা হবে।


একটি রাষ্ট্রে সরকারই সবচেয়ে বড় শক্তি। সরকারেরে একজন সদস্য যদি আসলেই অপরাধী হয়ে থাকেন, তিনিও যেন রেহাই না পান। তবে তার আগে এটাও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করে দেখতে হবে, অভিযোগটি সত্য, নাকি স্থানীয় রাজনীতির কোনো জটিল সমীকরণ।


যেটাই হোক, তাকে স্বচ্ছভাবে জাতির সামনে তুলে ধরাই সরকারের কর্তব্য। কেননা, কক্সবাজারের রামু কিংবা ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নাসিরনগর – এই প্রবণতাগুলো ভালো কিছুর ইঙ্গিত দেয় না। দেশে সরকার আছে, আইন আছে, আদালত আছে। অপরাধী যে বা যারাই হোক, তার বিচার হোক। কিন্তু কোনোভাবেই যেন সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষের চারাটি আমাদের পবিত্র মাটিতে শেকড় গেড়ে আকাশে মাথা তুলতে না পারে।


এ দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, মানুষ হিসেবে আমাদের সকলের।

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com