
ইংরেজি alley শব্দ থেকে আসা বাংলা অলি শব্দের অর্থ ‘সরুপথ’। আবার ইংরেজি alley শব্দের মূল ফ্রেঞ্চ allee. অন্যদিকে বাংলায় সংস্কৃত থেকে আসা অলি অর্থ ভ্রমর (অলির কথা শুনে বকুল হাসে, কই তাহার মত আমার কথা শুনে তুমি হাসো নাতো- বাংলা গান; নিদ্রায় আকুল বামা হন অচেতন, চরণ-পঙ্কজভ্রমে ধায় অলিগণ- কবিকঙ্কণ চণ্ডী)। সংস্কৃতে অলি শব্দটি দিয়ে বৃশ্চিক, কাক, কোকিল ও সুরাও বোঝায়।
সংস্কৃত অল্ ধাতুর সঙ্গে ইন প্রত্যয়যোগে গঠিত অলি শব্দের মূলানুগ অর্থ হচ্ছে ‘যে সততই মধু অন্বেষণে উড়ে বেড়ায় কিংবা যে ফুলের মধু পান করতে বসে তার শোভা বাড়ায় বা তাকে ভূষিত করে’। সোজা কথায় ভ্রমর।
অন্যদিকে আরবি ওয়ালী বা বলী থেকে আসা অলি অর্থ অভিভাবক। দরবেশ বা সিদ্ধপুরুষ অর্থেও শব্দটি প্রচলিত (কত অলি-দরবেশ, এমনকি কত নবী-রছুলের পবিত্র জীবনী- মাওলানা আকরম খাঁ)। ওলি বানানভেদ।
আবার অলি-অসি (অলি-ওছি) মানে নাবালকের অভিভাবক বা সম্পত্তির রক্ষক (যদি নাবালক পুত্রের অলি-ওছি পদ বহাল থাকে, তবে ত মঙ্গল, তাহা না থাকিলে ভরাডুবি, একেবারে বিসর্জন- মীর মশাররফ হোসেন)। অলি ডাকনামও হতে পারে (অলি কলি দুজনে, রবীন্দ্র সদনে, কথক নাচছে, হাততালি পাচ্ছে- বাংলা ছড়া)।
আবার সংস্কৃতে অশোক মানে শোকহীন, বীতশোক (তথাপি না গঙ্গা না হয় অশোক- কৃত্তিবাসী রামায়ণ)। দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বনামধন্য একটি গাছের নামও অশোক।
অমরকোষের টীকা মতে, এ গাছের মূলে তপস্যা করে গৌরী লব্ধমনোরথ হয়ে ছিলেন বলে এটার নাম অশোক হয়েছে (হে অশোক, কোন রাঙ্গা চরণ চুম্বনে, মর্মে মর্মে শিহরিয়া হলি লালে লালÑ অশোকগুচ্ছ, দেবেন্দ্রনাথ সেন; তথাপি না পায় গঙ্গা না হয় অশোক- কৃত্তিবাসী রামায়ণ; সর্ব্ব নবদীপ প্রভুপ্রভাবে অশোক- চৈতন্যভাগবত; আনন্দে অশোক- ধর্মমঙ্গল; বসন্ত রাজা আনি ছয় রাগিনী- রাণী করিলা রাজধানী অশোক মূলেÑ অন্নদামঙ্গল, ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর)।
হিন্দশাস্ত্র মতে, চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমীতে অশোকের আটটি কলি ভক্ষণ করলে আর শোক থাকে না। অশোক কলি ভক্ষণকালে যে মন্ত্র পাঠ করতে হয় তার বাংলা অনুবাদ হচ্ছে ‘হে চৈত্রমাসজাত শিবের ইষ্ট সাধন অশোক! আমি শোক সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে সর্বদা শোকরহিত কর’।
সংস্কৃতে অশোকের অন্য নামগুলি হচ্ছে শোকনাশ, বিশোক, বঞ্জুলদ্রুম, বঞ্জল, মধুপুষ্প, অপশোক, কঙ্কোলি, কেলিক, রক্তপল্ল, চিত্র, বিচিত্র, কর্ণপুর, সুভগ, দেহলী, তাম্রপল্লব, রোগিতরু, হেমপুষ্প, রামা, রামাবামাঙ্ঘিধাতক, পিণ্ডীপুষ্প, নট, পল্লবদ্রু।
হিন্দুধর্ম, আয়ুর্বেদ ও সংস্কৃত কাব্যে অশোক গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। অশোক ষষ্ঠী (চৈত্র মাসের শুক্লা ষষ্ঠী) ও অশোকাষ্টমী (চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী) হিন্দুদের পূজা দিবস।
রাবণ পঞ্চবটি বন হতে সীতাকে হরণ করে লঙ্কার অশোকবনে লুকিয়ে রাখেন। এ অশোকবন ছিল রাবণের প্রমোদকুঞ্জ। হনুমান এ অশোকবন ধ্বংস করেন। রাজা হরিশ্চন্দ্রের উপাখ্যান কাব্যে কৃত্তিবাস ওঝা লিখেছেন, ‘জাতী যুথী মল্লিকা যে তুলিল রঙ্গন। পারিজাত শেফালিকা চম্পক কাঞ্চন।। অশোক কিংশুক জবা অতসী কেশর। গোলাপ আকন্দ তোলে বকুল টগর।’
ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর শোকশূন্য বা শোকহীন অর্থে শব্দটি ব্যবহার করেছেন (অশোক কৌতুক করে যত বিদ্যাধর)। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গাছ অর্থে লিখেছেন ‘অশোক কুঞ্জে উঠত ফুটে প্রিয়ার পদাঘাতে, বকুল হতে ফুল্ল প্রিয়ার মুখের মদিরাতে।’
কথিত আছে গৌতম বুদ্ধ লুম্বিনিতে এই গাছের নিচে জন্মগ্রহণ করেন এবং মহাবীর এই গাছের নিচে ধ্যান করে সিদ্ধিলাভ করেন।
জিয়াউদ্দিন সাইমুমের ব্লগ থেকে
বিবার্তা/জিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]