শিরোনাম
ক্রিয়াপদের আরেক নাম ছিল ‘আখ্যাত’
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ১৪:২৩
ক্রিয়াপদের আরেক নাম ছিল ‘আখ্যাত’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

‘আখ্যাত’ শব্দটি বেশ প্রাচীন। পদার্থ বা বিশেষ্যের অবস্থা বা সম্বন্ধে বিশেষভাবে ব্যাখ্যা করে বলে প্রাচীনকালেই ভারতীয় উপমহাদেশের ব্যাকরণবিদরা ক্রিয়াপদের আরেকটি নাম দিয়েছিলেন ‘আখ্যাত’।


সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের তথ্য মতে, ডেনমার্কের স্বনামধন্য ব্যাকরণ বিশেষজ্ঞ মাদভিগ (Madvig) একই লক্ষ্যে ডেনিশ ভাষায় ক্রিয়াপদ বা verb-এর নতুন নাম দিয়েছেন udsaynsord (=out = saying word)। সহজ কথায়, যে শব্দ দিয়ে বিশেষ্যের অবস্থা ফুটিয়ে তোলা যায়।


রাজা রামমোহন রায় তাঁর বাংলা ব্যাকরণ গ্রন্থে ক্রিয়াপদ অর্থে ‘আখ্যাতিক পদ’ লিখেছেন। অন্যদিকে লাতিন verbum থেকে ফ্রেঞ্চ verbe হয়েছে। আর এ ফ্রেঞ্চ verbe থেকে গৃহীত হয়েছে ইংরেজি verb শব্দটি। verb এর মূলানুগ অর্থ হচ্ছে, ‘বাক্যের মধ্যে প্রযুক্ত বিশেষ অর্থদ্যোতক শব্দ।’


অবশ্য জার্মান ভাষায় ক্রিয়াপদ বা verb এর অর্থ একটু ভিন্ন ধরনের। বাংলা, ইংরেজি, লাতিন আর ফ্রেঞ্চে ক্রিয়াপদ বলতে যা বোঝায়, জার্মান ভাষায় ক্রিয়াপদ বা zeitwort (= tide-word) বলতে একই জিনিস বোঝায় না। zeitwort এর অর্থ হচ্ছে ‘কাল নির্দেশক শব্দ’। অবশ্য জার্মান ভাষায় ক্রিয়াপদ বুঝাতে tatwrd (= deed word) শব্দটি ব্যবহৃত হয়।


সুনীতিকুমারের মতে, সংস্কৃত ‘আখ্যাত’ শব্দটি ইংরেজি verb বা জার্মান zeitwort এর চেয়েও অধিকতর সফলভাবে ক্রিয়ার লক্ষণসমূহ প্রকাশ করতে পারে।


করুণাসিন্ধু দাস তাঁর ‘সংস্কৃত ব্যাকরণ ও ভাষা প্রসঙ্গ’ গ্রন্থে লিখেছেন, ‘বাক্যে ক্রিয়াপদকে প্রধান গণ্য করার ঐতিহ্য যাস্কের নিরুক্ত থেকে চলে আসছে। বাক্য বিষয়ে পাণিনি প্রায় কিছুই বলেননি বটে, তবে পাণিনি সূত্রের সংযোজনীকার কাত্যায়ন ও ভাষ্যকার পতঞ্জলি বাক্যের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে ক্রিয়াপদকে সনাক্ত করেছেন’।


তবে আখ্যাত শব্দের হালে প্রচলিত অর্থ হচ্ছে উল্লিখিত, কথিত, সংজ্ঞাপ্রাপ্ত (যে জাপানী জাতি ধনের প্রতি বিদ্বেষবান বলিয়া আখ্যাত, সে কি তলে তলে সকলের চেয়ে ধনের প্রতি আসক্ত নয়?- অনুবাদ চর্চা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; এসব সমস্যা ও অস্পষ্টতা দূর করার জন্য আধুনিক ও বিজ্ঞানমনস্ক ফোকলোর তাত্ত্বিকরা লোকসাহিত্য বা মৌলিক সাহিত্যকে একটি নতুন অভিধায় আখ্যাত করেছেন- মৌখিক সাহিত্যের প্রাণ, শামসুজ্জামান খান)।


এদিকে মধ্যযুগের বাংলায় সংস্কৃত ‘অগ্র’ থেকে আসা আগর শব্দটি শ্রেষ্ঠ, প্রধান, চূড়ামণি অর্থে ব্যবহৃত হত (সে নর নাগর আগর সব গুণে- ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর)। আবার মধ্যযুগে স্ত্রীলিঙ্গে আগরী শব্দটি চালু ছিল (সে হেন সুন্দরী রূপে গুণে আগরী- বিদ্যাপতি)।


ব্রজবুলিতে যে আগর শব্দটি পাওয়া যায়, তার মূল সংস্কৃত আগার। ব্রজবুলিতে আগার মানে ঘর বা আধার (তুহুঁ রস আগর নাগর টীট- বিদ্যাপতি)। তবে সংস্কৃত ‘অগুরু’ থেকে আসা আগর মানে ধূপকাঠি, গন্ধকাষ্ঠ বিশেষ (নানা পুষ্পমালা আর আগর চন্দন- কাজী দৌলত)। আর এই আগরের বৈজ্ঞানিক নাম Aquilaria malaccensis. এটি Thymelaeaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ। অন্যান্য স্থানীয় নামের মধ্য Aloe wood, Eagle wood, Aguruh, Krsnaguruh উল্লেখযোগ্য। ভুটান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, লাউস, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে পাওয়া যায়।


এ আগর ফারসি আগার থেকেও আসতে পারে। তবে ফারসি আগার থেকে বাংলায় আসা আগর অব্যয় পদ। এটার অর্থ ‘যদি’। আবার ক্রিয়া-বিশেষণে আগর-মগর মানে যদি-কিন্তু, ইতস্তত ভাব, বিলম্ব (আগর-মগর করে সে যা বলল, তার অর্থ এখন বড় সাহেবের দেখা মিলবে না)।


আগর-মগর আবার বিশেষ্য পদ হিসেবে দীর্ঘসূত্রতা অর্থে চালু রয়েছে (আগর-মগর করেও তুমি শেষ পর্যন্ত পার পাবে না)।


আবার বাংলায় তুরপুন বা ভ্রমর যন্ত্র অর্থেও আগর শব্দটির ব্যবহার রয়েছে। তবে এ আগরের মূল ইংরেজি auger. ইংরেজি auger. অর্থও তুরপুন। অবশ্য মাটিতে গর্ত করার যন্ত্রও ইংরেজিতে auger নামে পরিচিত।


জিয়াউদ্দিন সাইমুমের ব্লগ থেকে


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com