শিরোনাম
সারা নিশি ছিলেম শুয়ে বিজন ভুঁয়ে
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০১৭, ১১:৪৮
সারা নিশি ছিলেম শুয়ে বিজন ভুঁয়ে
জিয়াউদ্দিন সাইমুম
প্রিন্ট অ-অ+

সংস্কৃত ‘সর্ব’ থেকে আসা সারা মানে সমগ্র, সম্পূর্ণ, সব (সারা জনম বাইলাম বৈঠা কূলের নাগাল পাইলাম না- বাংলা গান; সারা নিশি ছিলেম শুয়ে বিজন ভুঁয়ে আমার মেঠো ফুলের পাশাপাশি, তখন শুনেছিলেম তারার বাঁশি- রবীন্দ্রসংগীত; কী যেন সে ক্ষুধা জাগে, কী যেন সে পীড়া, গ’লে যায় সারা হিয়া, ছিঁড়ে যায় যত স্নায়ু শিরা!- সিন্ধু, কাজী নজরুল ইসলাম)।


আবার সংস্কৃত ‘সারি’ ধাতু থেকে আসা সারা মানে ক্লান্ত, হয়রান, অবসন্ন (যাচ্ছে কারা রৌদ্রে সারা- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত), আকুল বা ব্যাকুল (আমরা ত তাঁর পায়ে কোন অপরাধ করি নাই- আমাদের কেন মন্দ হইবে? কেন তুমি ভাবিয়া সারা হও!- সীতারাম, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়), বিপন্ন (শেফালি কহিল, আমি ঝরিলাম, তারা! তারা কহে, আমারো তো হল কাজ সারা ভরিলাম রজনীর বিদায়ের ডালি আকাশের তারা আর বনের শেফালি- এক পরিণাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর), শেষ (ভাবি, জায়গা-দখল সারা হবে, জিনিসপত্র সংগ্রহ শেষ হবে, ঘরবাড়ি-গড়া বাকি থাকবে না, তখন শেষ জবাব মিলবে- আগমনী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।


আবার একই সংস্কৃত ‘সারি’ ধাতু থেকে তৈরি সারা শব্দটি বিশেষণে লুক্কায়িত, সমাপ্ত (বাদলের গান হয়নি সারা- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর), মেরামত করা হয়েছে এমন (গাড়িটি সবে সারা হলো) বোঝায়।


আবার ক্রিয়াপদে সারা মানে লুকিয়ে রাখা (তিনি ব্যাঙ্কের টাকাগুলো কিভাবে সারিয়ে ফেললেন, তা ভাবতেও অবাক লাগে), মেরামত করা (নৌকাটি পাঁচশো টাকায় সারলাম), সমাপ্ত করা (বিকালেই আমার কাজ সারা হয়ে গেছে), সরিয়ে ফেলা (ভোগ্য বস্তু সারিছে- ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর), বিপদে বা দুর্দশায় ফেলা (শেষ পর্যন্ত মদ তাকে সেরেছে), দুর্বল বা ক্লান্ত করা (রৌদ্রে সারা হয়ে গেলাম), নষ্ট বা পণ্ড করা (ভুল বুঝাবুঝির কারণে তাদের দফা সারা হয়ে গেছে), সংশোধন করা (জীবনের ভুল কি আর সারা যায়?)।


অন্যদিকে যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির ‘বাঙ্গালা শব্দকোষ’ মতে, ষড়জ থেকে ‘সা’। এই সা সুর ধরে পরে অনুপাত অনুসারে বাকি ছয় সুর হয় বলে তা ষড়জ। রি- ঋষভ (বৃষ) ধ্বনি থেকে। গা- গান্ধার থেকে। তবে এ নামের বুদ্ধিগ্রাহ্য ব্যুৎপত্তির সন্ধান মেলেনি। গা- তৃতীয় সুর, গ তৃতীয় ব্যঞ্জন বর্ণ থেকে এটার উৎপত্তি হতে পারে। নি- নিষাদ, স্বর উপবেশন করে বা শেষ হয় বলে? যোগেশচন্দ্র রায় মনে করেন, সারিগামার প্রাথমিক তাৎপর্য এ ধরনের হতে পারে। পরে কৃত্রিম অর্থ প্রযুক্ত হয়। যেমন ময়ূর ধ্বনি থেকে ষড়জ, বৃষভ থেকে ঋষভ, ছাগ থেকে গান্ধার, ক্রৌঞ্চ থেকে মধ্যম। পঞ্চম স্বর থেকে পঞ্চম। কেহ বলেন, দেহের ‘প্রাণ অপান সমান উদান ব্যান’ এ পাঁচ বায়ুর সমবায়ে জাত বলে পঞ্চম। এটা কোকিল ধ্বনি। ধৈবত হল অর্ধস্বর, কেউ বলেন ভেকস্বর। নিষাদ হস্তীস্বর। গীত ও তন্ত্রীবাদ্যের সপ্তস্বর।


সারেগামা বানানভেদ (একবার সারেগামার বোধটা জন্মিয়া গেলেই তাহার পরে সমস্ত সহজ হইয়া আসে- নৌকাডুবি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।


লেখাটি লেখকের ব্লগ থেকে নেয়া


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com