শিরোনাম
হামবড়া থেকে হার্মাদ
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০১৭, ১০:২০
হামবড়া থেকে হার্মাদ
জিয়াউদ্দিন সাইমুম
প্রিন্ট অ-অ+

হামবড়া হিন্দি শব্দ। মূলে হামবড়া মানে ‘আমি বড়’। কিন্তু প্রচলিত অর্থ আত্মগর্বী (হামবড়া ভাব, হামবড়া লোক)। ‘হম’ বানানভেদ। অবশ্য বাংলা একাডেমির অভিধানে হম শব্দের মূল হিসেবে দেখানো হয়েছে সংস্কৃত ‘অহং’ শব্দকে। মধ্যযুগের বাংলায় হম শব্দটি সর্বনাম হিসেবে ‘আমি’ বোঝাতো (আজু রজনী হম ভাগে গমায়ল- বিদ্যাপতি)।


হিন্দির অনুকরণে হম শব্দটি হাম হয়ে যেতেই পারে। তাই বাংলায় ব্যবহৃত হামবড়া শব্দটিকে সরাসরি হিন্দি শব্দ বলা যায় কিনা, তা নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ হামবড়ার বানানভেদ হচ্ছে হামবড়। আবার আরবি ‘হুম্মা’ থেকে বাংলায় হাম শব্দটি এসেছে, যা দিয়ে এক প্রকার গুটিকাযুক্ত জ্বর বোঝায়। ইংরেজিতে এ জ্বর measles নামে পরিচিত। বাংলায় হামের কাব্যিক নাম হচ্ছে ‘মিলমিলে’।


ফারসি ‘হম্’ থেকেও বাংলায় হাম শব্দটি এসেছে। এ হাম মানে সমান বা সম। কিন্তু হামছায় বা হামছায়া মানে প্রতিবেশী (হামছায়া কারো অনাহারে যাদ রয়ে- তালিম হোসেন; মাটির মানুষ সে তবু তার হামছায়া জিবরিল- গোলাম মোস্তফা)। শুধু তাই নয়, এ হাম থেকেই বাংলায় হামদর্দ (বন্ধু, প্রেমিক, সাথী), হামদর্দী (সমবেদনা), হামদিল (সখা), হামরাহী বা হামরাই (সহযাত্রী) এসেছে। এসব শব্দে হাম থাকার কারণে সেগুলিকে হিন্দি ঠাওর করার সুযোগ কোথায়? অন্যদিকে মধ্যযুগের বাংলা ও ব্রজবুলিতে ব্যবহৃত ‘হামার’ ও ‘হামারি’ শব্দদ্বয় আমি অর্থে সর্বনাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে (হামারি দুখের নাহি ওর- বিদ্যাপতি)। এ দুটি শব্দের মূল সংস্কৃত ‘অস্মদ’।


বিশেষণে হামবড়া বা হামবড় মানে আমিই সবচেয়ে বড় বা আমিই সর্বেসর্বা, আত্মগর্বী, অহঙ্কারী। আবার হামবড়াই বিশেষ্য। এটার অর্থ আমি বড়- এই ভাব, অহমিকা, অহঙ্কার (হামবড়াইয়ের সংহিতা কোড বেবাক কাটে- সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত)।


এদিকে পর্তুগিজ ভাষায় সশস্ত্র জাহাজকে ‘আরমাডা’ বলা হয়। কিন্তু মধ্যযুগে বাংলা ভাষাভাষীরা পর্তুগিজ জলদস্যুদের ‘হার্মাদ’, ‘হারামদ’, ‘হারামাদ’ নামে ডাকত। আর্মাডা থেকেই বাংলায় হার্মাদ এসেছে (রাত্রে ডিঙ্গা বাহিয়া যায় হারামদের ডরে- মুকুন্দরাম, চণ্ডীমঙ্গল)। মধ্যযুগের এই কবির (তিনি কবিকঙ্কণ চণ্ডী নামেও পরিচিত) চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে (রচনা ১৫৯৪-১৬০৬) হার্মাদের অত্যাচার সম্পর্কে বলা হয়েছে:


‘ফিরিঙ্গীর দেশখান বাহে কর্ণধারে।


রাত্রিতে বহিয়া যায় হার্মাদের ডরে।’


কবি মুকুন্দরাম এখানে পশ্চিমবঙ্গে হার্মাদদের উৎপাতের কথা বলেছেন। অবশ্য একই সময়ে তৎকালীন পূর্ববঙ্গে হার্মাদদের অত্যাচার ছিল আরও ভয়াবহ ও ব্যাপক। তাদের নির্যাতন সম্পর্কে কবি আলাওল তাঁর ‘পদ্মাবতী’ কাব্যে (রচনা ১৬৫১ সাল) লিখেছেন:


‘কার্যগতি যাইতে পথে বিধির ঘটন।


হার্মাদের নৌকাসাঙ্গ হৈল দরশন।


বহু যুদ্ধ আছিল শহীদ হৈল তাত।


রণক্ষেত্রে নৌকাযোগে আইলুং এথাত।’


লেখাটি লেখকের ব্লগ থেকে নেয়া


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com