শিরোনাম
ফ্রিল্যান্সার হয়ে রাজার মতো জীবনযাপন করুন
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০১৭, ১৮:১৪
ফ্রিল্যান্সার হয়ে রাজার মতো জীবনযাপন করুন
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

মো. সুলতান হোসেন একজন সফল ফ্রিল্যান্সার। ২০১১ সাল থেকে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং করে ১২০০এর বেশি কাজ সম্পন্ন করেছেন। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং মার্কেটপ্লেস ফ্রিল্যান্সারডটকম, আপওয়ার্কডটকম দুইটা সাইটেই টপ রেটেড ফ্রিল্যান্সার তিনি। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সারডটকমে ২ কোটি ৪২ লাখ ৪৯ হাজার ৮৬০ জন ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে সুলতানের অবস্থান ৩০০এর ঘরে। শুধু ফটো এডিটিংয়ে একটা বিষয়ে তিনি ফ্রিল্যান্সারডটকমে এক নাম্বার অবস্থানে আছেন।


২৭ বছর বয়সী এই সফল ফ্রিল্যান্সার নিজের ক্যারিয়ারের পাশাপাশি দেশের বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হয়ে গেলেন উদ্যোক্তা। গড়ে তুললেন সুলতান আইটি ইনস্টিটিউট।


সম্প্রতি বিবার্তার মুখোমুখি হন মো. সুলতান। জানালেন ফ্রিল্যান্সার থেকে উদ্যোক্তা হয়ে উঠার গল্প। বিবার্তার পাঠকদের ওই গল্প জানাচ্ছেন উজ্জ্বল এ গমেজ।



টানা সাত বছর ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার সুবাদে আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, লন্ডনসহ বিভিন্ন দেশের অনেক পার্সোনাল ক্লায়েন্ট তৈরি হয়ে যায় সুলতানের। ওই ক্লায়েন্টরা তার কাজে সন্তুষ্ট হয়ে প্রতিদিনই তাকে নতুন নতুন কাজের অফার দিতে থাকেন। এতে তারকাজের চাপ বাড়তে থাকে। কিন্তু কাজ করেও শেষ হতো না। এক সময় ঘরে বসে ভার্চুয়াল টিম পরিচালনা করাটাও তার পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এসব কাজ করে ক্লায়েন্টদের ধরে রাখতে প্রয়োজন লোকবল। কোথায় পাওয়া যাবে এসব ফ্র্যিলান্সার? তখন সুলতানের মাথায় আসে এক নতুন পরিকল্পনা। অবশ্য অনেক দিন থেকেই তার উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে ছিল মনে। যেই চিন্তা সেই কাজ। পুরান ঢাকায় ধোলাইখালে নারিন্দার সামনে একটা অফিস নিয়ে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি বেকার তরুণ-তরুণীদের ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দিতে গড়ে তুললেন সুলতান আইটি ইনস্টিটিউট।


শুরুতে সুলতানের পরিকল্পনা ছিল আউটসোর্সিং বিপিও ব্যবসাটা ভালো করে চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট চালু করার সাথে সাথে দেখা গেল ফ্রিল্যান্সিং ট্রেনিং নেয়ার জন্য অনেক আগ্রহী তরুণ-তরুণী ভর্তি হচ্ছে। এভাবেই চলতে থাকে একের পর এক ব্যাচ। বর্তমানে এখানে ৪০+ জন ট্রেনিং নিচ্ছে।


সুলতান বলেন, আপাতত আমি দুটি কাজ করছি। তরুণ-তরুণীদের আউটসোর্সিং ট্রেনিং দিচ্ছি। এরপরে তাদের এখানেই আউটসোর্সিং করে ইনকাম করার সুযোগ করে দিচ্ছি। ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে বেশি করে কাজের প্রোপজাল নিচ্ছি, যাতে স্টুডেন্টরা ট্রেনিং নিয়েই আমার প্রতিষ্ঠানে হাতে-কলমে ফ্রিল্যান্স কাজ করে ইনকাম করতে পারে। বর্তমানে বেশ কয়েকজন স্টুডেন্ট এখানে পার্টটাইম হিসেবে কাজ করছে।



সুলতান আইটিতে বেশ কয়েকটি বিষয় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন কোম্পানিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ফটোএডিটর, পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট, লিড জেনারেসন, ওয়ার্ডপ্রেস, ই-কমার্স ম্যানেজমেন্ট সাপোর্ট ইত্যাদি। পাশাপাশি ওয়েব ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস ডেভেলপমেন্ট এবং অ্যামাজন অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে নিজের দক্ষতা উন্নয়নেও ব্যস্ত সময় পার করছেন এই অদম্য উদ্যোক্তা।


সুলতানের ভাষায়, একজন তরুণ উদ্যোক্তাকে শুরুতে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সেগুলো হলো- প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাব। প্রথম দিকে ইনকামের তুলনায় অফিসের ব্যয় বেশি থাকে। এক্ষেত্রে আর্থিকভাবে পারিবারিক, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তার দরকার হয়। তরুণ উদোক্তাদের ব্যাংক থেকে এসময় কোনো সহায়তা দেয়া হয় না। এছাড়া যেকোনো নতুন প্রতিষ্ঠানেরই শুরুতে গ্রাহক কম থাকে, প্রথম দিকে কোনো নতুন বিষয়ে মানুষের জ্ঞান কম থাকে, সেটাকে সবার সামনে তুলে ধরা, সেটার প্রয়োজনীয়তা বুঝানো এসবই একেকটা সমস্যা। তবে এতো সব সমস্যার পরও ধৈর্য ধরে টিম নিয়ে প্রতিষ্ঠানকে পরিচালনা করা, শুরুর দিকের করা ভুলগুলো থেকে পজেটিভ শিক্ষা নিয়ে সমস্ত বাধা পেরিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলতে পারলেই কেবল হয়ে উঠা যায় উদ্যোক্তা।


পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের বেড়ে উঠা সুলতানের ছোটবেলা থেকেই কম্পিউটারের প্রতি একটা অন্যরকম নেশা ছিল। নারিন্দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বাণিজ্য বিভাগে জিপিএ ৪.৭৫ ও ঢাকা সিটি কলেজ থেকে একই বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পান। পরে চার বন্ধু মিলে ‘ফিউচার কোচিং সেন্টার’ নামে একটা কোচিং সেন্টার চালু করেন। পড়াশুনার পাশাপাশি পার্টটাইম জব হিসেবে এখানে তারা এইচএসসি স্টুডেন্টদের ইংলিশ, অ্যাকাউন্টিং, কমার্সের বিষয়গুলো টিউশন দিতেন। এরই সাথে রাজধানীর আইআইইউসি থেকে ব্যবসায় অর্থনীতি নিয়ে বিবিএ সম্পন্ন করেন।



সুলতান বলেন, আম্মুর ইচ্ছা ছিল আমি যেন সায়েন্স নিয়ে পড়াশুনা করে ডাক্তার হই। অন্যদিকে আব্বুর ইচ্ছা ছিল আমি যেন কমার্স নিয়ে পড়ে ব্যাংকার হই। কিন্তু কারো ইচ্ছাই পূরণ হলো না। নিজের ইচ্ছেতেই হয়ে গেলাম ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তা।


উদ্যোক্তা হলেন কেন এমন প্রশ্নের জবাবে সুলতান জানালেন, ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে এতো কাজের অর্ডার আসছিল যে ভার্চুয়াল টিম ম্যানেজ করে সেগুলো করা সম্ভব হয়ে উঠছিল না। তাই ফ্রিল্যান্সার তৈরি করার পরিকল্পনা করি, যাতে আমি ভাল থাকি, সেই সাথে দেশের কিছুসংখ্যক বেকার তরুণ-তরুণীও ভাল থাকুক। এখন সুলতান আইটি থেকে প্রতিমাসে ৪-৫ হাজার ডলার ইনকাম করছি। আমার টার্গেট আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে ৬-১০+ হাজার ডলার ইনকাম করা।


যারা পড়াশুনা করছেন তাদের উদ্দেশে এই উদ্যোক্তা বলেন, এখনই উপযুক্ত সময় কিছু করার, নিজের কর্মসংস্থান নিজেই করার। আমার মতো পড়াশুনা শেষ হওয়ার আগেই সবাইকে দেখিয়ে দেয়া যে, আমার চাকরি করার দরকার নেই, আমি নিজে কিছু করতে চাই।



নতুনদের প্রতি সুলতানের পরামর্শ, অনলাইনে সফল ক্যারিয়ার গড়তে হলে যে কোনো বিষয়ে ভালভাবে কাজ শিখে নিজের দক্ষতা উন্নয়নে জোর দিতে হবে। প্রথমে কাজ শিখে পরে ইনকামে যেতে হবে। শুধু একটা বছর সময় নিয়ে যে কোনো একটা বিষয়ে ভালোমত দক্ষ হন, এটা হতে পারে গ্রাফিক্স ডিজাইন, এসইও, মার্কেটিং, ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি। ৬ মাসের মধ্যে স্কিল ডেভেলপ আর বাকি ৬ মাস ইনকাম করার আন্তরিক চেষ্টা। আমার বিশ্বাস আপনি আন্তরিকভাবে মন থেকে চেষ্টা করলে সফল হবেনই। আমি তো সফল হয়েছি, ইনশাল্লাহ আপনারাও হবেন।


পরিকল্পনা বিষয়ে সুলতান জানালেন, আউটসোর্সিংয়ে আন্তর্জাতিকভাবে আমরা যাতে ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইন থেকে আরো এগিয়ে যেতে পারি, সেজন্য দক্ষ ফ্রীলান্সার তৈরি করা এবং আমার মতো উদ্যোক্তা গড়ে তোলা। একজন ফ্রিল্যান্সার যদি কমপক্ষে ৫জন বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান করতে পারেন, তাহলে এভাবেই আস্তে আস্তে দেশ থেকে বেকারত্ব দূর হবে। এর জন্য ফ্রিল্যান্সারদের টিম নিয়ে কাজ করা, উদ্যোগ নেয়া শেখাতে হবে। আমি যেমন বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে বাংলাদেশকে রিপ্রেজেন্ট করে বাইরের কম্পানির সাথে কাজ করছি, ইনশাল্লাহ আমার সাথে যারা কাজ করছেন তারাও সবাই বাংলাদেশকে এভাবেই রিপ্রেজেন্ট করবে। যারা ফ্রিল্যান্সার হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাদের বলবো, ফ্রিল্যান্সার হয়ে একজন রাজার মতো জীবনযাপন করুন। ‘বি এ ফ্রিল্যান্সার, লিভ লাইক এ কিং’।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com