শিরোনাম
সাখাওয়াতের সিপিএ মার্কেটার হয়ে ওঠার গল্প
প্রকাশ : ০১ মার্চ ২০১৭, ১৭:৫২
সাখাওয়াতের  সিপিএ মার্কেটার হয়ে ওঠার গল্প
উজ্জ্বল এ গমেজ
প্রিন্ট অ-অ+

সাখাওয়াত হোসেনের আব্বুর ইচ্ছে ছিল, ছেলে অ্যাডভোকেট হোক, আর আম্মু চাইতেন, ছেলে হবে ইঞ্জিনিয়ার। আর যাকে নিয়ে এতো স্বপ্ন, সেই সাখাওয়াত ছোটবেলা থেকেই ছিল কম্পিউটারের পাগল। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ারও ইচ্ছে ছিল তার। অবশেষে মায়ের ইচ্ছা পূরণ করে নিজের চেষ্টায় সাখাওয়াত হয়েছেন সিপিএ মার্কেটার। বর্তমানে তিনি বিজবন্ড আইটি লিমিটেডে সিপিএ মার্কেটিংয়ের ট্রেইনার হিসেবে কাজ করছেন।


সম্প্রতি রাজধানীর ফার্মগেট বিজবন্ড আইটি ট্রেনিং সেন্টারে বিবার্তার সঙ্গে কথা বলেন সাখাওয়াত হোসেন। বলেন নানা ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে সিপিএ মার্কেটার হয়ে ওঠার গল্প। বিবার্তার পাঠকদের ওই গল্প জানাচ্ছেন উজ্জ্বল এ গমেজ


সাখাওয়াত হোসেনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা কুমিল্লার লক্ষ্মীপুর গ্রামে। আব্বু মোহাম্মদ মফিজুল ইসলাম পেশায় ব্যবসায়ী। আম্মু হালিমা গৃহিনী। অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে কাটে তার শৈশব ও কৈশোর। কিন্তু বর্তমানে তার আব্বু অনেক ধন-সম্পদের মালিক।


কুমিল্লাতেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পড়াশুনার পরে ঢাকায় চলে আসেন সাখাওয়াত। ভালো ছাত্র ছিলেন। প্রাইমারি ও হাইস্কুলে বরাবরেই ভালো রেজাল্ট করেছেন। বর্তমানে রাজধানীর বিআইইউ’তে এলএলবিতে অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়াশুনা করছেন।



সিপিএ মার্কেটিংয়ের শুরুটা কিভাবে জানতে চাইলে সাখাওয়াত বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার পর চলে আসি ঢাকা। ঢাকায় এসে কীভাবে ভালো একটা ক্যারিয়ার গড়ে তোলা যায় সেই চেষ্টা করতে থাকি। একদিন ইউটিউবে যাফি ভাইয়ের একটি ভিডিও দেখি। সেই ভিডিওর মাধ্যমে সিপিএ মার্কেটিংয়ের প্রতি অনুপ্রাণিত হই। পরে ভিডিওকোর্সটি কিনে অনলাইন মার্কেটিংয়ের পড়াশুনা ‍শুরু করি। তখন থেকে আমি দিনরাত ইন্টারনেট ঘেঁটে সিপিএ মার্কেটিংয়ের টিউটোরিয়াল দেখে ওইগুলো বাস্তবে অ্যাপ্লাই করি। এভাবেই গ্রহণ করি ভাগ্য পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ।


পড়াশুনার পাশাপাশি সাখাওয়াত চেষ্টা করতেন ছোটখাটো কিছু করার। যখন তিনবেলা খাওয়াটাও খুব কষ্ট হয়ে পড়ে তখন বাধ্য হয়ে এক বন্ধুর সাথে গুলিস্তানে একটিলেবুর শরবতের দোকান দেন। দুজন মিলে গুলিস্তানে শরবত বিক্রি করেন। বিকালে আবার শনির আখড়ার রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের জুতা বিক্রি করতেন। এভাবেই চলছিল জীবনসংগ্রাম। হকার হয়ে কাজ করেন এক বছর। পাশাপাশি অনলাইন আউটসোর্সিং শেখেন।


সিপিএ মার্কেটিংয়ের শুরুতে নানা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে হয়েছে সাখাওয়াতকে। তখন এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করার মতো কেউ ছিল না। ইন্টারনেটে টিউটোরিয়াল দেখে কাজ করতে গিয়ে কারিগরি বিষয়ে কোনো সমস্যায় পড়লে খুব হতাশ হয়ে পড়তেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে আবার চেষ্টাচালিয়ে যান। এভাবে অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে ফিডব্যাক পাওয়ার আশা ছেড়ে শুধু নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যান। দীর্ঘ এক বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আস্তে আস্তে আলোর মুখ দেখতে শুরু করেন এই উদ্যোক্তা। শুরুর দিকে অল্প আয় করলেও বর্তমানে তিনি সিপিএ মার্কেটিং করে মাসিক ৬০ থেকে ৭০ হাজারটাকা আয় করছেন।



সিপিএ মার্কেটিং থেকে কেমন আয় করা সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে সাখাওয়াত বলেন, সিপিএ মার্কেটিংয়ের আয় নির্ভর করে একজন ব্যক্তির মার্কেটিং দক্ষতা, নিজেরচেষ্টা এবং কাজের মানের ওপর। ফ্রি ট্রাফিকে কাজ করলে মাসিক ভালো মানের একটা অ্যামাউন্ট আয় করা যায়। তবে নিয়মিত পেইড ট্রাফিকে নিয়ম মেনে কাজকরলে মাসে হাজার ডলারের বেশি আয় করা সম্ভব।


মার্কেটপ্লেসে বিভিন্ন বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার অবারিত সুযোগ থাকার পরেও সিপিএ মার্কেটিংয়ের উদ্যোক্ত হলেন কেন? এ বিষয়ে সাখাওয়াতের ভাষ্য, সিপিএমার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আমার অনলাইন আউটসোর্সিং জগতে আসা। বিশেষভাবে আউটসোর্সিংয়ের অন্যান্য কাজের তুলনায় সিপিএ এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং তুলনামূলকভাবেঅনেক সহজ। তাছাড়া এটাতে বিড ছাড়াই কাজ করা যায়, পেমেন্ট অনেক বেশি এবং প্রতি ৭ দিন পর পর টাকা তোলা যায়। ভালো একটা সময়োপযোগী ক্যারিয়ারগঠন করার জন্য সিপিএ মার্কেটিং সেরা। এসব কারণেই নিজেকে সিপিএ মার্কেটিংয়ের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা।


বলছিলেন প্রতি সাত দিন পরে টাকা তোলার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সিপিএ মার্কেটপ্লেস থেকে টাকা তোলার মাধ্যম কি ? সাখাওয়াত বলেন, আপনি পেমেন্টবিভিন্নভাবে তুলতে পাবেন। যেমন, পেপাল, পাইওনিয়ার মাস্টার কার্ড এবং ব্যাংক ট্রান্সফার চেকের মাধ্যমে। কিছু কিছু সিপিএ নেটওয়ার্কে চেকেরও বাবস্থা রয়েছে।সাধারণত ৫০ থেকে ১০০ ডলার হলেই টাকা তুলতে পাবেন। তবে বিভিন্ন নেটওয়ার্কে বিভিন্ন নিয়ম থাকে। ওই সব নিয়ম মেনেই টাকা তোলা যায়। কোনো সমস্যা হয় না।


উদ্যোক্তা হওয়ার পূর্বশর্ত বিষয়ে জানতে চাইলে সাখাওয়াত জানালেন, নিজেকে সাফল্যে চূড়ায় নিয়ে যাওয়ার একটা স্বপ্ন, কাজের প্রতি আন্তরিকতা, ভালোবাসা, অধ্যবসায়, অদম্য আগ্রহ আর কাজ করার দৃঢ় মনোবল না থাকলে এই কাজে সফল হওয়া সম্ভব না।


সিপিএ মার্কেটিং হলো বিলিয়ন ডলারের মার্কেটপ্লেস। অনলাইনে আয়ের একটি বড় মাধ্যম হলো সিপিএ। শুধু সঠিক গাইডলাইন ও দিকনির্দেশনার অভাবে অনেকেই এই মার্কেটপ্লেসে সফল হতে পারছেন না। সিপিএ মার্কেটপ্লেস থেকে প্রতিদিন ভাল টাকা আয় করা যায়। এই বিলিয়ন ডলারের মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য দেশের বেকার তরুণ-তরুণীদের আহ্বান জানান সাখাওয়াত।


বিজবন্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হামিদের একটা স্বপ্ন হলো এক হাজার ছাত্রকে সিপিএ মার্কেটিংয়ে সফলতা এনে দেয়া। ওই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সিপিএ মার্কেটিংয়ের ট্রেইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সাখাওয়াত।



অনেক সংগ্রাম করে অনলাইন আউসোর্সিংয়ে ক্যারিয়ার গড়েছেন এই উদ্যোক্তা। তার সফলতার পেছনে কয়েকজন মানুষের বিশেষ অবদান রয়েছে। তাদের মধ্যেবিজবন্ডের এমডি মো. আব্দুল হামিদ ও যাফি অন্যতম। দুজনকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁদের দীর্ঘায়ু কামনা করেন সাখাওয়াত।


জীবনের প্রাপ্তি বিষয়ে বলেন, আল্লাহর রহমতে এখন অনেক ভাল আছি। আল্লাহ অনেক মানসম্মান এবং টাকা দিয়েছেন। এক সময় চাকরির জন্য হকারি করতে হয়েছে, এখন চাইলে ২০টা বেকার ছেলের কর্মসংস্থান করতে পারি।


সিপিএ মার্কেটিং এখন সাখাওয়াতের ধ্যান-জ্ঞান। সিপিএ মার্কেটিংয়ে কাজ করে আয়ও করছেন আশানুরূপ। তবু তার স্বপ্ন আকাশ ছোঁয়ার। একজন সফল দেশসেরা সিপিএ মার্কেটার হওয়ার। সেই সাথে দেশের পিছিয়ে পড়া বেকার ও মেধাবী তরুণদের সিপিএ মার্কেটিংয়ে বিনা খরচে প্রশিক্ষণ দিয়ে মানবসম্পদে পরিণত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলের দোয়া চেয়েছেন সিপিএ মার্কেটার সাখাওয়াত।


বিবার্তা/উজ্জ্বল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com