শিরোনাম
২০২১
বছরজুড়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে মিডিয়াতে জিইয়ে থাকার চেষ্টা
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২১, ০৯:০২
বছরজুড়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে মিডিয়াতে জিইয়ে থাকার চেষ্টা
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

সারাবছরই সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়ে মিডিয়াতে জিইয়ে থাকার চেষ্টা করেছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। বিভিন্ন সভা, যোগদান অনুষ্ঠান ও বিবৃতির মাধ্যমে সক্রিয় ছিলো পুরো বছর। তবে জনগুরুত্ব বিভিন্ন বিষয়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজপথে নামতে দেখা যায়নি এ দলটিকে। সীমাবদ্ধ ছিলো বিবৃতির মাঝেই।


এ বছরে দলটি হারায় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে। তিনি ২ অক্টোবর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পার্টির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য অধ্যাপক মাসুদা এমএ রশিদ চৌধুরীও ইন্তেকাল করেন। এছাড়া, জাপা চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হাসান সিরাজ সুজাসহ আরো কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।


দলের মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু মারা যাওয়ার পর কে হবেন তার উত্তরসূরী, তা নিয়ে নিজেদের মাঝে বিভেদে জড়িয়ে পড়েন দলটির শীর্ষনেতারা। পার্টির চেয়ারম্যান অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে পার্টির মহাসচিব পদে নিয়োগের ইচ্ছা প্রকাশ করলে ফুসে ওঠেন সিনিয়র নেতারা। মহাসচিব পদ নিয়ে এক পর্যায়ে পার্টির চেয়ারম্যানের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তারা। চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের পরিস্থিতি বুঝে চমক দেখিয়ে মহাসচিব হিসেবে পার্টির কো-চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চুন্নুকে নিয়োগ দিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।


জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি অধ্যাপক মাসুদা এমএ রশিদের মৃত্যুতে তার আসন শূন্য হলে সেখানে দলের একক প্রার্থী হিসেবে নিজের স্ত্রী ও জাতীয় সাংস্কৃতিক পার্টির আহবায়ক শেরিফা কাদেরকে মনোনয়ন দেন জিএম কাদের। ১ নভেম্বর সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন তিনি। শেরিফাকে শপথবাক্য পাঠ করান স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।


পার্টি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় প্রেসিডিয়মি সদস্য পীরজাদা শফিউল্লাহ আল-মনিরকে। এছাড়া জাতীয় সংসদের বিভিন্ন উপনির্বাচন এবং স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নিয়ে পরবর্তীতে সরকারদলীয় প্রার্থীর সাথে আতাত করে নিজ মনোনয়ন প্রত্যাহারে অভিযোগে দলটির ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, লুৎফর রেজা খোকনসহ ছয়নেতাকে পার্টি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।


এদিকে, এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশা সিদ্দিক সারাবছর এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের ওপর ভর করে জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহার করে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়ার চেষ্টা করেছেন। প্রয়াত এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে তার বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্ক বাসভবনে পুত্র এরিককে দিয়ে নিজেকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে জাতীয় পার্টির কমিটি ঘোষণা দেন। স্বঘোষিত এ কমিটিতে এরশাদের সহধর্মিনী ও বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান এবং এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ঘোষণা কার হয়। কমিটিতে চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদের নাম ঘোষণা করা হলেও তিনি এর সাথে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন। এর কিছুদিন পর এরশাদ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান কাজী মামুনুর রশীদও এরিক ঘোষিত জাতীয় পার্টি থেকে সরে দাঁড়ান। এরপর থেকে রাজনীতির ময়দানে বিদিশা সিদ্দিককে আর দৃশ্যমান দেখা যায়নি।


দীর্ঘদিন মেয়াদ উত্তীর্ণ পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটিতে পরিবর্তন আনতে পারেনি দলটি। জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টি ছাড়া প্রায় সকল অঙ্গ সংগঠনই মেয়াদ উত্তীর্ণ। যদিও এবছর জাতীয় যুব সংহতির একটি আহবায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে। এর পূর্ণাঙ্গরূপ দিতেও সময় লেগেছে ছয় মাস।


মূলত, জাতীয় পার্টির কর্মকাণ্ড বনানী কার্যালয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিতে সক্রিয় থাকলেও দেশব্যাপী সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তেমন চোখে পড়েনি বলে জানান পার্টির নেতাকর্মীরা। তবে, কেন্দ্র ঘোষিত ৮টি বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের মাঝে খুলনা বিভাগীয় কমিটিকে সারাবছরই সক্রিয় দেখা গেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমও একাধিকবার সাংগঠনিক সফরে গিয়েছে।


সংসদে জাতীয় পার্টির ২৪ জন সংসদ সদস্য থাকলেও সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবং লিয়াকত হোসেন খোকা ছাড়া অন্য এমপিদের পার্টির কাকরাইলস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পদাচারণা নেই বললেই চলে। ফলে দলীয় সিংহভাগ এমপির সাথে তৃণমূলের কোনো সম্পর্ক নেই বলে জানান কাকরাইল কার্যালয়ে নিয়মিত আসা কয়েকজন নেতাকর্মী।


২০২১ সালের সফলতা-ব্যর্থতা ও প্রাপ্তি প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির যুগ্ম-মহাসচিব ও জাতীয় স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বির্বাতাকে বলেন, যে প্রত্যাশা ছিলো তার হয়ত কিছুটা ঘাটতি ঘটেছে। পার্টির কর্মীবান্ধব মহাসচিবের অকাল মৃত্যুতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তীতে চুন্নু (মুজিবুল হক চুন্নু) ভাই মহাসচিব নিযুক্ত হওয়ার পর থেকে ওই শোক কাটিয়ে জাতীয় পার্টি আগের চেয়ে শক্তিশালী রূপে রূপান্তরিত হচ্ছে।


তিনি বলেন, আমরা বিরোধীদল হিসেবে জনগণের মৌলিক অধিকার ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারিনি। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, দুর্নীতিরোধে আমাদের প্রতি জনগণের যে প্রত্যাশা ছিলো সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি।


জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মনিরুল ইসলাম মিলন বিবার্তাকে বলেন, করোনাকালীন এই বছরটিতে আমরা বিএনপি-আওয়ামী লীগের চেয়ে বেশি সক্রিয় ছিলাম। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চলমান ছিলো। এ বছর জাতীয় পার্টির নতুন সহযোগী সংগঠন ‘বাংলাদেশ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পরিষদ’ এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। গঠিত হয় রিচার্স এণ্ড ডেভেলপমেন্ট উইং ( আরএমডি)।


তিনি বলেন, সফলতা-ব্যর্থতার বিচার বিশ্লেষণ করবে জনগণ। নতুন বছর নতুন সূর্যকে দেখবো আমরা। সফলতায় আর প্রত্যাশায় ২০২২ সালে জাতীয় পার্টিকে প্রতিটি জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক কাঠামো আরো বেশি শক্তিশালী করার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।


জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, করোনাকালীন সময়েও জাতীয় পার্টি তার কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে। অসহায় মানুষদের দেয়া হয়েছে ত্রাণসামগ্রী। বিতরণ করা হয়েছে স্যানিটাইজার, মাস্কসহ বিভিন্ন ঔষধ সামগ্রী। আমার দৃষ্টিতে এবছর জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে কোনো ব্যর্থতা ছিলো না।


জনগণের সমস্যা সমাধানে আপনারা কি ভূমিকা রেখেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে মিলন বলেন, জনগণের সমস্যা সমাধান করবে সরকার। আমরা বিরোধীদল হিসেবে জনস্বার্থ বিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে পারি। সরকারে থাকলে জনগণের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। তাছাড়া আমাদের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিসহ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আগামী বছর পার্টিকে আরো সংগঠিত করে ক্ষমতার দ্বারপ্রান্তে নেয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।


জাতীয় পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া বির্বাতাকে বলেন, এরশাদবিহীন একবছরে সাংগঠনিক অবস্থা যতটুকু নিয়ে যাওয়ার কথা সেটা হয়ত করতে পারি নাই। তারপরও আমরা সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য অতিরিক্ত মহাসচিবদের নেতৃত্বে বিভিন্ন জেলা সফর করেছি। আমি নিজেও চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫টি জেলায় সংগঠন গোছানোর জন্য গিয়েছি। বিভিন্ন জাতীয় দিবস, উপজেলা দিবস ও পল্লীবন্ধু এরশাদের মৃত্যুবার্ষিকীসহ বিভিন্ন সভা ও কর্মীসভা অব্যাহত ছিলো। জিয়াউদ্দিন বাবলুর মৃত্যুর পর আমরা চুন্নু সাহেবের মতো যোগ্য মহাসচিব পেয়েছি।


তিনি বলেন, দলের অনেক সংকট উত্তরণ করতে সক্ষম হয়েছি। সবচেয়ে প্রাপ্তি হলো পুরোদল জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আমাদের আগামীদিনের প্রত্যাশা, সবগুলো সাংগঠনিক জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি সম্পূর্ণ করে ২০২৩ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নেয়া।


বিবার্তা/জাহিদ বিপ্লব/আবদাল/ইমরান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com