শিরোনাম
নৌ পথে থামছে না দুর্ঘটনা, তদন্ত হলেও ফল শূন্য
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:১০
নৌ পথে থামছে না দুর্ঘটনা, তদন্ত হলেও ফল শূন্য
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

নৌ পথে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা ঘটার পর করা হচ্ছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখছে না। শুধু তাই নয়, একই সাথে থামছে না নৌ দুর্ঘটনাও। বিভিন্ন সময়ে নৌ দুর্ঘটনার পর সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ বছরে সাড়ে ৪শ’ থেকে ৫শ’ নৌ-দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। আবার অনেকেই তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় নাই। জমা দেয়া প্রতিবেদনেও সব সময় সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত থাকে। তবে সেই সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, সেই সুপারিশ ঠিকমত বাস্তবায়ন করাও হয়নি। এজন্য নৌ দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা সম্ভব হচ্ছে না।


সূত্রমতে, বাংলাদেশের ভয়াবহ যে ৫টি লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটেছে তার মধ্যে ২০১৪ সালের ৪ অগাস্ট আড়াইশো’র বেশি যাত্রী নিয়ে পদ্মা নদীতে ডুবে যায় ‘পিনাক-৬’ নামের একটি লঞ্চ। পরে ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছিল আর ৫০ জন যাত্রীর খোঁজ পাওয়া যায়নি।


এর আগে ২০০৩ সালের ৮ জুলাই ঢাকা থেকে ভোলার লালমোহনগামী ‘এমভি নাসরিন-১’ নামের লঞ্চটি চাঁদপুরের মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মোহনায় ডুবে যায়। ২০০২ সালের ৩ মে চাঁদপুরের ষাটনল সংলগ্ন মেঘনা নদীতে ডুবে যায় ‘সালাহউদ্দিন-২’ নামের যাত্রীবাহী লঞ্চ। ২০০০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঈদুল আজহার রাতে চাঁদপুরের মতলব উপজেলার ষাটনল এলাকায় মেঘনা নদীতে ‘এমভি জলকপোত’ এবং ‘এমভি রাজহংসী’ নামের দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ‘রাজহংসী’ লঞ্চটি পানিতে তলিয়ে যায়, সে সময় ওই লঞ্চের ১৬২ জন যাত্রী নিহত হয়েছিলেন।


১৯৮৬ সালে অ্যাটলাস স্টার নামে একটি লঞ্চ ডুবে ২০০ জন যাত্রী মারা গেছিলেন। লঞ্চটি ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন এবং খারাপ আবহাওয়ার কারণে ডুবে গেছিলো বলে জানিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ। এছাড়া ২০০৫ সালে একটি ফেরী ডুবে গিয়ে ১১৮জন যাত্রী নিহত হয়, এবং ২০০৫ সালে ‘এমএল মিতালি’ ও ‘এমএল মজলিশ’ নামে দুইটি ছোট লঞ্চের মুখোমুখি সংঘর্ষের পর ডুবে গিয়ে প্রায় ৩০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল।


এছাড়া গত বছর ঢাকার পোস্তগোলা সংলগ্ন এলাকায় মর্নিং বার্ড নামে একটি লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। এরপর বাংলাদেশে নৌপথে নিরাপত্তা দুর্ঘটনার বিষয়টি আবারও সামনে চলে আসে। সেই লঞ্চ দুর্ঘটনায় অন্তত ৩৩ জন নিহত হন।


এদিকে, বেসরকারি সংস্থা কোস্ট বিডির গবেষণা অনুযায়ী, গত ২০ বছরে বাংলাদেশের নৌপথে বড় ১৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, এতে দেড় হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন।


সর্বশেষ বৃহস্পতিবার দিনগত রাত ৩টার দিকে সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। এতে এখন পর্যন্ত ৪১ জনের প্রাণহানি হয়েছে। নিখোঁজ শতাধিক। আগুনে দগ্ধ ৮১ জনের মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৪৬ জন। ১৯ জনকে পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। ১৬ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।


তবে পুড়ে যাওয়া লঞ্চটিতে কতজন যাত্রী ছিল তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বিআইডব্লিউটিএ থেকে জানানো হয়েছে, লঞ্চটিতে প্রায় ৪০০ যাত্রী ছিল। তবে লঞ্চ থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অনেকে বলছেন, এই লঞ্চে যাত্রী ছিল ৮০০ থেকে এক হাজার।


ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমাদের হিসাব মতে লঞ্চে ৩৫০-এর মতো যাত্রী ছিল। এর বেশি থাকলে তদন্ত করে দেখা হবে।


এদিকে, ঢাকা থেকে বরগুনাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘এমভি অভিযান-১০’ এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।


ব্লাস্টের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এ পর্যন্ত দেশে নৌপথে লঞ্চডুবি, অগ্নিকাণ্ডসহ বিভিন্ন কারণে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে তা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নৌযান মালিক, পরিচালনাকারী ও তদারকি কর্তৃপক্ষ ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ লঙ্ঘন করে আসছে। ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ এর ৫৬ ধারায় বিস্ফোরণ, আগুন ইত্যাদির বিরুদ্ধে যে সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে, অভিযান-১০ লঞ্চের ঘটনায় তার সুস্পষ্ট ব্যত্যয় ঘটেছে।


বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্লাস্ট এ হতাহতের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত, তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ, দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ শাস্তি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণের দাবি জানাচ্ছে। এ ছাড়া, ধারা ৩৩ এর অধীনে সার্ভে সনদ ছাড়া নৌযাত্রা নিষিদ্ধ করা এবং ধারা ৫৮ (ক) অনুযায়ী বীমা বা নৌ-দুর্ঘটনা ট্রাস্ট ফান্ড ছাড়া নৌযাত্রা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে তদারকি কর্তৃপক্ষ যেন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সে ব্যাপারে জোর দাবি জাননো হয়।


বিবার্তা/খলিল/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com