শিরোনাম
হলের ছাদ খসে পড়লেও নেই নজর, অথচ শতবর্ষ উদযাপনে ব্যয় ২৪ কোটি!
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:০৭
হলের ছাদ খসে পড়লেও নেই নজর, অথচ শতবর্ষ উদযাপনে ব্যয় ২৪ কোটি!
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন হলের ভবন থেকে পলেস্তারা ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে বারংবার। অথচ এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো নজর নেই বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা বলছেন, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের অনুষ্ঠানে ২৪ কোটি ৩১ লাখ ১৩৭ টাকার বাজেট বরাদ্দ হয়েছে। অথচ এতো বড় আয়োজন ঘিরে শিক্ষার্থীরা কী পেল? উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার-পানি কিছুই ছিলো না। শুধু তাই নয়, শতবর্ষে এসেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জরাজীর্ণ ভবনে থাকতে হচ্ছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, ভবন মেরামত ও সংস্কার নিয়ে তাদের খুব শক্তিশালী পরিকল্পনা আছে।


জানা যায়, শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ৪(ক) এর এক্সটেনশন রুমে ভবন ফেটে পানির পাইপ লিক হয়ে অনবরত পানি পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে ওই রুমের শিক্ষার্থীদের বই-পুস্তকসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্রও ভিজে যায়। একই রুমের উপরের ছাদও ভেঙ্গে গেছে।


এরআগে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) একই হলের মূল ভবনের ১০৬ নম্বর কক্ষের উপর থেকে প্রায় ১৫ কেজি ওজনের পলেস্তারা ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে নেজারুল ফরায়জী অপু নামের এক শিক্ষার্থী অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। কক্ষে পড়াকালীন সময়ে তার থেকে একটু দূরে পলেস্তারা হুট করেই খসে পড়ে বলে জানান তিনি।


তারও আগে সোমবার (২৯ নভেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি জসিমউদ্দীন হলের ক্যান্টিনের ভেতরে দেয়াল ধসে ২ জন আহত হয়েছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ক্যান্টিনের ব্যবস্থাপক দিদারুল আলম সেসময় বিবার্তাকে বলেন, দুপুর আড়াইটার দিকে হঠাৎ করেই ক্যান্টিনের ভেতরে একটি দেয়ালের অংশ ভেঙে পড়ে। অনেক ছাত্র তখন দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এখানে খেতে এসে দুই বহিরাগত আহত হয়েছেন।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের ভবন থেকে পলেস্তারা পড়ার ঘটনা ঘটছে। ফলে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও আছে। অথচ এ বিষয়ে প্রশাসনের ভূমিকা চোখে পড়ছে না। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। ঘটনার সমালোচনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি, অবিলম্বে হল মেরামতের কাজ শুরু করে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিহীন ভাবে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হোক।


শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল ট্র্যাজেডির কথা আমরা সবাই জানি। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাত ৯টায় এই হলে ঘটে এক মর্মান্তিক ঘটনা। সেদিন হলের টেলিভিশন রুমে বসে নাটক দেখার সময় ছাদ ধসে পড়ে ৩৯ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ২৫ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং ১৪ জন কর্মচারী ও অতিথি ছিলেন। সেই ঘটনার স্মরণে প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর শোক দিবস পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অনতিবিলম্বে কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে সংস্কারসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত।


এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের শিক্ষার্থী রাকিব হোসেন বিবার্তাকে বলেন, শতবর্ষে এসেও আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি নিয়ে থাকতে হচ্ছে, এটা ভাবাই যায় না। শুনেছি, শতবর্ষের অনুষ্ঠানে ২৪ কোটির বেশি খরচ হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা কি পেলো? আমাদের আবাসিক জরাজীর্ণ ভবনের সংস্কারও করা হলো না! আমরা এসব কথা কাকে বলবো?


মোহাইমিনুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বিবার্তাকে বলেন, গণমাধ্যমে দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের দুই বইয়ের সম্পাদনায় মোট ব্যয় করা হয়েছে ২০ লাখের অধিক টাকা। অথচ বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতি গ্রন্থ সম্পাদনায় সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে থাকে বলে শুনলাম। ভাবা যায়? বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের আবাসনের বিষয়ে উদ্যোগ নিলেও পারতো।



শতবর্ষের অনুষ্ঠানের সমালোচনা করে এক প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর বিবার্তাকে বলেন, ২৪ কোটি টাকা দিয়া শতবর্ষের অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে লাইটের আলোয় আলোকিত করা হয়েছে অথচ ছাত্ররা এখনো গণরুমের অন্ধকারে বাস করছে। ২০ কোটি খরচ করলে তো একটা হল করতে পারতো কিংবা কিছু হলের এক্সটেনশন করতে পারতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উপলক্ষে যদি ২ টা হল করতে পারতো কিংবা ৫টা হলের যদি এক্সটেনশন বৃদ্ধি করতে পারতো এটা হতো বিশ্ববিদ্যালয়েল জন্য সবচেয়ে বড় চমক।


ভবন খসে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিবার্তাকে বলেন, ভবন মেরামত ও সংস্কার নিয়ে আমাদের খুব শক্তিশালী পরিকল্পনা আছে। বড় আকারে কাজ করতে হবে, অনেক বিল্ডিং ভাঙতেও হবে। ভালো করে সংস্কার করা খুবই জরুরী হয়ে পড়েছে।


প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় গত ১ ডিসেম্বর। এরপর টানা কয়েকদিন চলে এ অনুষ্ঠান। এ অনুষ্ঠান ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪ কোটি ৩১ লাখ ১৩৭ টাকার বাজেট বরাদ্দ হয়েছে। অথচ এতো বড় আয়োজন ঘিরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য খাবার-পানি কিছুই ছিল না। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঘটনার সমালোচনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব ছিলেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠনগুলোও এই প্রতিক্রিয়ার সাথে সহমত পোষণ করেছেন।


এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ কো‌টি টাকার গ‌বেষণা প্রক‌ল্পের সময়ও পার হ‌য়ে গে‌ছে! এ নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলে রয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।



শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ ও মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে দু’টি গ্রন্থ প্রকাশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের কোনো আর্থিক বিধি-বিধান না মেনে অর্থ ব্যয়ে ব্যাপক অনিয়ম করা হয়েছে। এ দু’টি গ্রন্থের সম্পাদনায় জড়িত দুই সম্পাদকের জন্য বরাদ্দ ৯ লাখসহ সম্পাদনায় মোট ব্যয় করা হয়েছে ২০ লাখের অধিক টাকা। অথচ বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতি গ্রন্থ সম্পাদনায় সর্বোচ্চ ৪০ হাজার টাকা দিয়ে থাকে। এ বিষয়টিও ছিল সমালোচনার তুঙ্গে।


বিবার্তা/রাসেল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com