শিরোনাম
আলোচনার চেয়ে আন্দোলনকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২১, ০৮:৫৪
আলোচনার চেয়ে আন্দোলনকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি
ফাইল ছবি
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

বর্তমান সরকারের সঙ্গে সব ধরনের আলাপ-আলোচনা বাদ দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ কয়েকটি দাবিতে ফের রাজপথে আন্দোলনের কথা ভাবছে দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এজন্য তারা অচিরেই রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা করছে।


এরই ধারাবাহিকতায় ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মেয়াদ শেষ হওয়ার পর নতুন ইসি গঠনের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ যে সংলাপ শুরু করেছেন তাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বিএনপি। তারা আলোচনার চেয়ে আন্দোলনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।


বিএনপি নেতারা মনে করেন- দলীয় সরকারের প্রভাব বলয়ের বাইরে গিয়ে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না।


বিএনপির নেতারা বলেন, ইসি গঠনে সংলাপের নাটক এই প্রথম নয়। এরআগেও আওয়ামী লীগ সরকার সংলাপের নামে বিরোধীদলের কাঁধে বন্দুক রেখে ফায়দা লুটেছে। বর্তমান সরকারের কাছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের এবং জনগণের মতামতের কোনো মূল্য নেই। এজন্য বিএনপি সংলাপের চেয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতেই অনড় থাকবে।


বিএনপি সূত্র জানায়, আন্দোলনের সময় বা দিনক্ষণ, কৌশল প্রক্রিয়া চূড়ান্ত না হলেও অচিরেই রাজপথে কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনায় এগোচ্ছে দলটি। কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি আদায়ের আন্দোলনে বিএনপি জোটের বাইরে থাকা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেও সম্পৃক্ত করতে চায়।


এ লক্ষ্যে সরকারের বাইরে থাকা দল, সুশীল সমাজ, বিভিন্ন পেশাজীবী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের চিন্তা করছে দলটি। সেই আন্দোলনে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকেও পাশে চায় তারা।


২০১৪ সালে ‘দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠেকাও আন্দোলন’ এবং পরের বছর সরকারবিরোধী আন্দোলন ব্যর্থ হওয়ার পর রাজপথের জোরালো আন্দোলন থেকে এক প্রকার সরে আসে বিএনপি। পরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দিলেও সেখানে নেতাকর্মীদের সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। এমনকি ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া কিংবা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরও দলটি রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি। এমনকি দলের প্রধান বেগম জিয়ার মুক্তি ইস্যুতেও একরকম দায়সারা গোছের কর্মসূচিতেই ব্যস্ত থেকেছে দলটি।


মূলতঃ এবার বেগম জিয়ার শারীরিক অবস্থার অবনতির পর থেকেই তার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে রাজপথে সোচ্চার হয় বিএনপি। প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীতে হচ্ছে সভা-সমাবেশ। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে নেতাকর্মীদের ধীরে ধীরে রাজপথমুখী করার কৌশল নিয়েছে দীর্ঘদিন রাজপথবিমুখ দলটি। এতে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে ফিরে এসেছে প্রাণচাঞ্চল্য। যদিও তারা প্রেসক্লাব ও বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে ছাড়া অন্যকোন স্থানে দাড়াতে পারেনি।


এ বিষয়ে বিএনপি বলছে-সরকার আমাদের কোন স্থানেই সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না।


বিভিন্ন ইস্যুতে জোরদার আন্দোলন করতে কার্যত ব্যর্থ বিএনপি এবার খালেদা জিয়ার অসুস্থতার ইস্যুতে কতটা চাপ সৃষ্টি করতে পারবে - তা নিয়ে সন্দেহ আছে অনেকের। প্রশ্ন উঠেছে, বিএনপি নেতা-কর্মীরা এই আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবেন নাকি আগের মতো ব্যর্থ হবেন?


সারাদেশের নেতাকর্মীদের মাঝে আন্দোলনের ছোয়া লাগাতে ইতিমধ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে সুচিকিৎসার দাবিতে ২২ থেকে ৩০ ডিসেম্বর নয় দিনব্যাপী দেশের ৩২ জেলায় সমাবেশ শুরু করেছে বিএনপি। এসব সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বেশ কয়েকটি টিমও গঠন করা হয়েছে।


সার্বিক বিষয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বিবার্তাকে বলেন, রাষ্ট্রপতির সাথে সংলাপ জনগণের সাথে ঠাট্টা মসকারা। দেশবাসী আগেও এমন ড্রামা দেখেছে। দিনের ভোট রাতে করা সরকারের নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এ কাজে সহযোগিতা করে সরকারের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন।


তিনি বলেন, এ সরকার শুধু জাতীয় নির্বাচনেই নয়, ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার রেওয়াজ চালু করেছে। সরকার চাচ্ছে নির্বাচন নামটা শুধু থাকুক। তারা চায় না বিরোধীদল নির্বাচনে আসুক। এই লোক দেখানো সংলাপের মাধ্যমে সরকার আরেকটি হুদা মার্কা নির্বাচন করতে চায়।


রিজভী বলেন, বেগম জিয়ার মুক্তি, তারেক রহমানের মামলা প্রত্যাহার এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি না মানলে আমরা দাবি আদায়ে যা যা প্রয়োজন তাই করবো। জনগণের মুক্তি, গণতন্ত্র মুক্তির জন্য আমরা প্রস্তুত।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বিবার্তাকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসা, আওয়ামী দুঃশাসনের পতন এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনই আমাদের মূল লক্ষ্য। জনগণের দুর্ভোগ, অপশাসন, গণতন্ত্র মুক্তি ও দেশবাসীর বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনতেই আমাদের সংগ্রাম। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা, জাতীয় সংকট নিরসন এবং জাতিকে অন্ধকার শাসন থেকে মুক্ত করতে হলে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।


নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপে বিএনপি অংশ নেবে কিনা জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিবার্তাকে বলেন, এমন প্রশ্ন করে আমাদের বিভ্রান্তি করছেন। সরকারতো পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই পদদলিত করেছে। সরকার ভালোভাবেই জানে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে নির্বাচনে তাদের কি পরিণতি হবে। সংলাপের মাধ্যমে অবৈধ কাজটির বৈধতা নিতে চায় সরকার।


তিনি বলেন, যেখানে ভোটের অধিকারের জন্য আমাদের আন্দোলন, সেখানে ভোট চোরের সাথে সংলাপ! আমাদের পিছনে ফেরার কোনো সুযোগ নেই। সংলাপে যাওয়ার মানে ভোট চোরদের স্বীকৃতি দেয়া। গণআন্দোলনের মাধ্যমেই আমরা ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি বেগম জিয়াকে মুক্ত করবো। তখন বীরের বেশে দেশে আসবেন তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমান। এই সময়টি বেশি দূরে নয়, অতি সন্নিকটে।


বিবার্তা/বিপ্লব/আবদাল/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com