শিরোনাম
এসি বাসে নেই হাফ পাস!
প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০:১৩
এসি বাসে নেই হাফ পাস!
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার বিষয়ে কোনো লিখিত আইন না থাকলেও বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ইতিহাসের সাথে জড়িত। এটি স্বাধীনতার পর থেকে প্রথা হিসেবেই টিকে আছে। বর্তমানে রাজধানীর সব গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া নেয়ার কথা থাকলেও এটি মানা হচ্ছে না এসি বাস সার্ভিসে। ফলে বাধ্য হয়েই শিক্ষার্থী যাত্রীদের দিতে হয় উচ্চ ভাড়া। এদিকে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন এসি বাস চালাতে খরচ বেশি, তাই হাফ ভাড়া নেয়ার সুযোগ নেই।


সম্প্রতি রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস থেকে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট হয়ে ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার যাওয়া ট্রাস্ট এসি বাস সার্ভিস, মিরপুর ১২ থেকে ডেমরা হয়ে সদরঘাট যাওয়া হিমাচলের এসি বাসগুলোতে অনুসন্ধান করে উঠে এসেছে এই চিত্র।


বাংলাদেশে হাফ ভাড়ার বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ১৯৬৪ সালে বিআরটিসি চারটি বাস দিয়ে সরকারিভাবে গণপরিবহন সেবা দেয়া শুরু করে। তখন থেকে সরকারের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নেয়া হতো। কিন্তু এটা ছিল সম্পূর্ণ সরকারি সেবা। পরবর্তীতে যখন সরকারি বাসের সাথে সাথে বেসরকারি বাস গণপরিবহনের সেবা দেয়া শুরু করে। তখন সরকারি বাসের নিয়মে বেসরকারি বাসেও ছাত্রদের হাফ ভাড়া নেয়া হতো। কিন্তু এ বিষয়ে যেহেতু কোনো লিখিত নিয়ম নাই। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার বিষয়টি প্রচলিত একটি প্রথা হয়ে দাঁড়ায় রাজধানীতে।



সরেজমিনে রাজধানীর বাসস্ট্যান্ডগুলো ঘুরে দেখ যায়, সকাল ৭টা থেকেই মিরপুর সাগুফতা থেকে ট্রাস্ট বাস সার্ভিসের এসি/নন এসি পরিবহন বাসে উঠতে থাকেন অফিসগামি যাত্রীদের পাশাপাশি শিক্ষার্থী যাত্রীরাও। সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শিক্ষার্থীরা প্রায় প্রত্যেকেই পরিচয়পত্র দেখালেও এসি বাসে স্টুডেন্ট পাস নাই বলে সাফ জানিয়ে দেন চালকের সহকারী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পয়েন্টে থাকা ওয়েবিল চেকার সকলেই। অন্যদিকে একই কোম্পানির নন এসি বাসগুলোতে পরিচয়পত্র দেখানোর শর্তে হাফ ভাড়া দেয়া যায়। শিক্ষার্থীরা বলছেন, সকল গণপরিবহনে হাফ পাস চালু হবার পরে তারা আমাদের সাথে এমন আচরণ করছেন।


এদিকে মালিক পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নন এসি বাসের চেয়ে এসি বাসে রোড খরচ বেশি হওয়ায় স্টুডেন্ট পাস কাটা সম্ভব হয় না।


বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ফায়াজ ইমরান সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই ফার্মগেট থেকে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াত করেন। ফায়াজ বিবার্তাকে বলেন, আমি বুঝি না সরকারি নির্দেশনা আসার পরেও এরা কোন সাহসে হাফ পাস নিয়ে এখনো গড়িমসি করে। একাধিক বার স্টুডেন্ট কার্ড দেখানোর পরেও উনারা বিভিন্ন বাহানা দিয়ে হাফ পাস নেই বলে চলে যায়। সরকারি এমন কোনো নির্দেশনা তো নেই যা এসি বাসে স্টুডেন্ট উঠতে পারবে না।



আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব বিবার্তাকে বলেন, আমি সপ্তাহে ৫দিন কলেজে যাই। মিরপুর থেকে সময়মত কলেজে পৌঁছাতে হলে আমাকে ট্রাস্ট সার্ভিসের এসি বা নন এসি বাসেই যেতে হয়। শুক্র, শনিবার হাফ পাস না কাটলেও বাকি দিনগুলা নন এসি বাসে হাফ পাস নিচ্ছে। কিন্তু যখন ভিড় বেশি থাকে বা অন্য কোনো কারণে ট্রাস্ট এসি সার্ভিসে উঠি কোনোভাবেই হাফ ভাড়া দেয়া যায় না। যেখানেই নামি না কেন ৪০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। আমরা শিক্ষার্থীরা এতো টাকা ভাড়া কিভাবে দিবো।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজু কালশির নিজ বাসা থেকে প্রায়ই ক্যাম্পাসে যাতায়াত করেন ট্রাস্ট পরিবহনের বাসে। মিরপুর থেকে ফার্মগেট হাফ ভাড়া ১৫ টাকা নিলেও একই কোম্পানির এসি বাসে হাফ ভাড়া না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। রাজু বিবার্তাকে বলেন, এ কেমন নিয়ম ভাই। একই কোম্পানির এসি/নন এসিতে আলাদা ভাড়া কোন আইনে আছে আমার জানা নাই। এদের অভিযোগ নম্বরে কল দিলেও কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি।


এরকম একটি এসি বাসের চালকের সহকারী ঝিনুক হাফ পাস নিয়ে বিবার্তাকে বলেন, আমাদের এসি বাসে খরচ যেমন বেশি তেমন আমাদের বাড়তি কোনো যাত্রী নেয়ার সুযোগ নেই। এদিকে আমাদের স্টপেজও লোকাল বা নন এসি বাসের চেয়ে কম। এসবের মধ্যে যদি ৮/১০ জন স্টুডেন্ট হয় তাহলে আমাদের তেলের খরচ উঠবে না। ৪২ সিটের মধ্যে মাঝে মাঝে অর্ধেকও স্টুডেন্ট উঠে। যাত্রীদের যে কোনো অভিযোগের জন্য অফিসের নাম্বার আছে, সেখানে কল দিয়ে অভিযোগ করা যাবে।



ইসিবি চত্বরের ওয়েবিল চেকার ইলিয়াস বিবার্তাকে বলেন, অফিস থেকে আমাদের যেভাবে বলে আমরা সেভাবেই ডিউটি করি। এসি বাসে হাফ পাস ভাড়া নেয়ার নিয়ম আমাদের কোম্পানিতে নাই। সেনাবাহিনির নিয়ন্ত্রণে আমাদের সব বাস চলে। আমাদের অনিয়ম করার কোনো সুযোগ নেই।


হাফ পাস ভাড়া কেনো রাখা হচ্ছে না জানতে চাইলে ট্রাস্ট সার্ভিসের চিফ লাইনম্যান সোহেল বিবার্তাকে বলেন, এখানে আমাদের নিজের বানানো কোনো নিয়ম নেই। আমাদের সব কিছু স্টেশন হেড-কোয়ার্টার থেকে যেভাবে ভাড়ার তালিকা করে দেয়া হয়েছে সেভাবেই ভাড়া নিচ্ছি আমরা। এসি বাসে আপ-ডাউনে খরচ অনেক বেশি। অনেক সময় দুপুরে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে বাস ছাড়তে হয়। তখন তেল গ্যাসের খরচ তুলতে হিমশিম খেতে হয়। আর শীত বা গরম যে কোনো সময়েই তো এসি ছেড়ে গাড়ি চালাতে হয়। তাই খরচও বেশি পড়ে। এখানেও যদি হাস পাস নেই তাহলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে।



উল্লেখ্য, বিশ্বের অনেক দেশেই হাফ ভাড়া, বিনা ভাড়ার বিষয়টি চালু রয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারত, যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন কিংবা নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামের বেশিরভাগ শহরে শিক্ষার্থীবান্ধব এই ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিনা ভাড়ায় চলাচলের জন্য বাজেটে অর্থ বরাদ্দ রেখেছে ভারতের কর্ণাটক রাজ্য সরকার। যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপ-আফ্রিকার অনেক দেশেও এটা চালু রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ট্রান্সপোর্ট অথরিটি শিক্ষার্থীদের জন্য কার্ড চালু করেছে; যা দিয়ে বাস ও ট্রেনে অর্ধেক ভাড়ায় যাতায়াত করতে পারে। দিল্লিতে ১০০ রুপির (১৩০ টাকা প্রায়) কার্ড দিয়ে সাধারণ বাসে সারা মাস যাতায়াত করতে পারে শিক্ষার্থীরা। আর এসি বাসে অন্য যাত্রীদের মাসে এক হাজার ২৭৫ রুপির কার্ড লাগে, ছাত্র-ছাত্রীদের দিতে হয় ২০০ রুপি। ভারতের কেরালা রাজ্যে বাসের সর্বনিম্ন ভাড়া আট রুপি। এর সঙ্গে বাড়তি এক রুপি দিয়ে ৪০ কিলোমিটার যাতায়াত করতে পারে শিক্ষার্থীরা।


বিবার্তা/আদনান/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com