শিরোনাম
ঢাবির বিবাহিত আবাসিক ছাত্রীদের কী হবে!
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৩৭
ঢাবির বিবাহিত আবাসিক ছাত্রীদের কী হবে!
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) ভর্তি হওয়ার পর থেকে এ শহরে আমার থাকার একমাত্র ঠিকানা নিজের আবাসিক হল। এ পরিস্থিতিতে যদি বলা হয়, বিবাহিত হওয়ার কারণে হলে থাকতে পারবো না, তাহলে আমি কোথায় যাবো? তাছাড়া আমার স্বামীও এ শহরে থাকেন না। এখন আমি কী করবো? উচ্চশিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে বিবাহিত হওয়াকে দেয়াল হিসেবে দাঁড় করিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু এই দেয়াল তো অযৌক্তিক এবং অবিবেচনাপ্রসূত। যেখানে বিবাহিত ছেলেরা হলে থাকতে পারে, সেখানে বিবাহিত মেয়েদের হলে থাকতে সমস্যা কোথায়? মেয়েদের বিবাহিত হওয়া কি অপরাধ?


কথাগুলো বিবার্তা২৪ডটনেটকে বলছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের আবাসিক এক ছাত্রী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিবাহিত এ ছাত্রীর কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হয়েছে ছাত্রীদের অব্যক্ত মনের কথা। আর এসব কথা এখন শুধু কথাই নয়। কথাগুলো এখন দাবিতে পরিণত হয়েছে। ছাত্রীদের দাবি, সেকেলে নিয়ম বাতিল করে বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকতে দিতে হবে। এ দাবি আদায়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদে সরব তারা।


শুধু ভার্চুয়াল প্রতিবাদ নয়, বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন ছাত্রীদের একটি প্রতিনিধি দল। পরে এ ঘটনায় শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) হয়েছে সংবাদ সম্মেলনও। সংবাদ সম্মেলনে ‘পাঁচটি হলের ছাত্রীদের পক্ষে’ লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনীম আফরোজ ইমি।


লিখিত বক্তব্যে ইমি বলেন, বিবাহিত হওয়া কি অপরাধ? বিবাহিত স্ট্যাটাসের সঙ্গে হলে থাকার সম্পর্ক বা থাকতে না দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা বা কারণ আমাদের কাছে নেই। একজন ছাত্রী বিবাহিত না অবিবাহিত, তা দেখে হলে সিট কেন বরাদ্দ হবে, যেখানে তিনি মেধা অনুযায়ী বৈধ সিট পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া ছাত্র-ছাত্রীর হলে সিট পাওয়া অধিকার।


পরে এই সংবাদ সম্মেলন থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ৫টি হলে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষার্থীদের থাকার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়ম প্রত্যাহারসহ ৪ দফা দাবি জানিয়েছেন ছাত্রীরা।



ছাত্রীদের দাবিগুলো হলো- বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার যে বিধি-নিষেধ তা বাতিল করে তাদের হলে থাকতে দিতে হবে, শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষায় সব ছাত্রী হলে ‘লোকাল গার্ডিয়ান’ বা ‘স্থানীয় অভিভাবকের’ পরিবর্তে ‘ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট’ বা ‘জরুরি যোগাযোগ’ শব্দটি রাখা, আবাসিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা যে কোনো ধরনের হয়রানি এবং অসহযোগিতামূলক আচরণ বন্ধ করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়া এবং শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা সাপেক্ষে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহাল করা ও জরুরি প্রয়োজনে তাদের হলে অবস্থান করতে দেয়া।


জানা যায়, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল এবং শামসুন নাহার হলের দুই ছাত্রীর সিট বিবাহিত হওয়ার অভিযোগ এনে কেটে দেয়া হলে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। পরে তা সমালোচনায় রূপ নিয়ে এক পর্যায়ে সংবাদ সম্মেলন পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে,
একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত আগের নিয়ম বহাল থাকবে।


তবে বিশ্ববিদ্যলয়ের ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্রীদের এ দাবির সাথে ঐকমত্য পোষণ করে তাদের দাবি পূরণের কথা বলছেন।


এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস বিবার্তাকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি গণতান্ত্রিক ও শিক্ষার্থীবান্ধব বিশ্ববিদ্যালয়। কাজেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক নিয়ম থাকবে, এটা হতে পারে না।



তিনি বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষে এসেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের নিয়ম থাকার ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে এ আইন সংশোধন করা জরুরি বলে আমি মনে করি।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিবার্তাকে বলেন, বিবাহিত ছাত্রীদের বিষয়ে বিদ্যামান যে সিদ্ধান্তটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রয়েছে, সেটি একটি অযৌক্তিক এবং নারীবিরোধী সিদ্ধান্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবার পরিচয় শিক্ষার্থী। এ পরিচয়ের উপর ভিত্তি করে তার সকল আবাসিক সুবিধা, অ্যাকাডেমিক সুবিধা থাকতে হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে নতুন যুগোপযোগী এবং আধুনিক নিয়ম চালু করতে আহ্বান জানাচ্ছি।


তিনি বলেন, অনেক সময় আমরা দেখতে পাই যে, বিবাহিত হওয়ার কারণে ছাত্রীদের স্বাভাবিক শিক্ষা জীবন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত আরও অভিভাবক সূলভ সিদ্ধান্ত রেখে কিভাবে সার্বিক সহায়তা নিশ্চিত করা যায় সেটি নিয়ে ভাবা। বিবাহিত হওয়ার কারণে নিষেধাজ্ঞা আরোপের যে নীতিমালা আছে, সেটি বাতিল করে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে।


জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বিবার্তাকে বলেন, বিবাহিত ছাত্রীরা হলে থাকতে পারবে না, এই বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে। আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বর্তমানে প্রচলিত নিয়মের তীব্র নিন্দা জানাই।



সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী), ঢাবি শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বিবার্তাকে বলেন, একজন ছাত্রী বিবাহিত কি অবিবাহিত তার উপর ভিত্তি করে তার সিট থাকবে কি থাকবে না সেটি বিচার করা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ হতে পারে না। ছাত্রীদের বড় পরিচয় তারা শিক্ষার্থী। আমরা বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার দাবীর সাথে একমত। অবিলম্বে ঢাবির পুরাতন নিয়ম প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীবান্ধব সিদ্ধান্ত নেয়া হোক।


দাবির বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিবার্তার পক্ষ থেকে ফোন দিলেও রিসিভ হয়নি। তবে এ বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এ বিষয়ে আলোচনা করতে হবে। তার আগ পর্যন্ত আগের নিয়ম বহাল থাকবে।


বিবার্তা/রাসেল/আরকে



সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com