শিরোনাম
হাফ পাস পেতে হাজারো জবাবদিহি শিক্ষার্থীদের
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৫৪
হাফ পাস পেতে হাজারো জবাবদিহি শিক্ষার্থীদের
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীতে গত ১ ডিসেম্বর থেকে গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া রাখার সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি। তবে বাস্তবে হাফ পাস নিশ্চিত করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বাসের হেল্পার ও ওয়েবিল চেকারদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। একই বাসে একাধিকবার শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হচ্ছে।


হাফ পাস নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসার পরে ২-৩ দিন সরেজমিন ঘুরে এই চিত্র ওঠে এসেছে।


সরেজমিনে দেখা গেছে, রাজধানীর মিরপুর ১২ বাসস্ট্যান্ড, ইসিবি চত্বর, ক্যান্টনমেন্ট, জাহাঙ্গীর গেটসহ ফার্মগেট এলাকা থেকে সকাল ৭টার পর থেকেই ছাত্রছাত্রীদের ভিড় বাড়ে গণপরিবহনগুলোতে। কখনো কখনো একই বাসে ১০/১৫ জন স্টুডেন্টও দেখা যায়। হাফ ভাড়া দিতে চাইলে শুনতে হয় হাজারো প্রশ্ন। পরিচয়পত্র দেখালেও ভাড়া কম নিতে গড়িমসি করতে দেখা গেছে চালকের সহকারীকে। প্রতিটি ওয়েবিল পয়েন্টেও একাধিকবার পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হয় শিক্ষার্থীদের। জিজ্ঞাসা করা হয় বয়স, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামসহ অবান্তর যত প্রশ্ন।


ট্রাস্ট কোম্পানির সকাল ৮টার বাসে ফার্মগেট থেকে মিরপুর ডিওএইচএস যাবেন রাফাত ইসলাম। পাবলিক ভাড়া ৩৫ টাকা ও স্টুডেন্টদের জন্য তা হয় ১৭ টাকা ৫০ পয়সা।


রাফাত বিবার্তাকে বলেন, করোনার আগে যখন বাসে হাফ পাস কাটত এত জবাবদিহি তো করতে হয়নি। এমনও সময় গেছে যখন আমি কলেজ ড্রেস পরে আছি। এরপরেও পরিচয়পত্র দেখাতে বলা হয়। আমাকে সেদিন বয়স জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, বাসা কোথায় সেটাও জিজ্ঞাসা করেছেন এক হেল্পার। ১৭ টাকার ভাড়া আমি ২০ টাকা দিলেও উনারা ২৫/৩০ টাকা দাবি করে বসেন। না দিলেই শুনতে হয় নানা কটু কথা।


ইসিবি থেকে উত্তরা আজমপুর যাবেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী তাবাসুম খানম। বাসের নরমাল ভাড়া ৪০ টাকা। সে হিসেবে স্টুডেন্ট ভাড়া আসে ২০ টাকা। কিন্তু বাস কন্ডাক্টর আলিম ভাড়া দাবি করছেন কমপক্ষে ৩০ টাকা। ক্ষুব্ধ তাবাসুম বিবার্তাকে বলেন, সিটিং থেকে লোকাল করে কী লাভ হল? সেই চেকার ওয়েবিল সিস্টেম চলে এখনও। ওয়েবিলের পরে যেখানেই নামি না কেনো সমান ভাড়া গুনতে হয় আমাদের। স্টুডেন্ট ভাড়া দিতে চাইলে হাজারো প্রশ্ন শুনতে হয়। আমরা কি হাফ ভাড়া ভিক্ষা চাচ্ছি নাকি? সরকার-বাস মালিকরা মিলেই তো হাফ পাস কার্যকর করল। এখন ভাড়া দিতে গেলেই যত অজুহাত আর প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।



জানতে চাইলে বাস হেল্পার আলিম বিবার্তাকে বলেন, আমাদের মালিকরা যেভাবে আমাদের বলে দেয় আমরা সেভাবেই কাজ করি। ওয়েবিল চেক করার পরে যাত্রীরা ভাড়া কম দিলে দিন শেষে সেই টাকার হিসাব মিলাতে আমাদের বেতন থেকে কেটে রাখা হয়। আর হাফ পাসের জন্য আমরা পরিচয়পত্র দেখতে চাই। না দেখাতে পারলে হাফ পাস কাটা মানা আছে আমাদের।


ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী রাতুল হোসেন বিবার্তাকে বলেন, নতুন তালিকায় সর্বনিম্ন ১০ টাকা টাকা ভাড়া কড়া হলেও শিক্ষার্থীদের জন্য তা ৫ টাকা করা উচিত। শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশেই বেশি যাতায়াত করে। কলেজ থেকে নীলক্ষেত, আজিমপুরে আমাদের নিয়মিত যাতায়াত করতে হয়। এতটুকু রাস্তায় ৫ টাকাও ভাড়া হওয়া উচিত না, সেখানে উঠলেই ১০ টাকা নিচ্ছে। এসব তো আমাদের উপর রীতিমত জুলুম করা হচ্ছে।


একই ধরনের অভিযোগের সুরে কথা বলেন ঢাকা কলেজসহ সিটি কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজের একাধিক শিক্ষার্থী। হাফ ভাড়া ১০ টাকার কম দিতে পারেন না, আর সিভিল ড্রেসে যাতায়াতের সময় আরো বেশি ভোগান্তি পোহান বলে জানান তারা।


সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বিবার্তাকে বলেন, সরকার ও ছাত্রদের সাথে কথা বলে আমরা হাফ ভাড়ার বিষয়টি মেনে নিয়েছি। এখন তো কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। তবে অনেকে হয়ত ভাড়া কম দেয়ার জন্য মিথ্যা কথা বলেন। সেজন্য স্টাফরা দেখতে চাইলে পরিচয়পত্র দেখাতে হবে। এরপরেও কোনো সমস্যা হলে আমাদের হটলাইন নম্বরে জানালে আমরা ব্যবস্থা নেব।


বিবার্তা/আদনান/কেআর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com