শিরোনাম
রাজধানীতে সুপারশপে অনিয়ম (পর্ব-২)
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২১, ০৮:২৩
রাজধানীতে সুপারশপে অনিয়ম (পর্ব-২)
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা অভিজাত সুপারশপের প্রতি ক্রেতার আস্থা ও নির্ভরতা অনেক বেশি। এ সরল নির্ভরতাকে পুঁজি করে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ক্রেতা সাধারণের সঙ্গে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করেছে। যা নিরাপদ খাদ্য আইনের লঙ্ঘন। এ নিয়ে সচেতন ক্রেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করে। সম্প্রতি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার অভিযানে দাম বেশি রাখা, পচা-বাসি খাবার বিক্রয়, ভেজাল খাবারসহ নানা ধরনের অসংগতি উঠে আসছে।


সংশ্লিষ্ট সূত্র বিবার্তাকে জানায়, ভোক্তা অধিকার, নিরাপদ খাদ্য অধিদফতরসহ বেশ কয়েকটি সরকারি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা আছে। যারা ক্রেতাদের নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করবে। কিন্তু সংস্থাগুলো ব্যর্থতায় প্রতিনিয়ত লঙ্ঘন হচ্ছে ক্রেতার অধিকার। শুধু রমজান মাসে আসলে সক্রিয় হয় সরকারি বিভিন্ন সংস্থাগুলো। তাদের অভিযানে দাম বেশি রাখা, পচা-বাসি খাবার বিক্রয়, ভেজাল খাবারসহ নানা ধরনের অসংগতি উঠে আসে।


সর্বশেষ গত বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় সুপার শপে অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। এ সময় পণ্য মোড়কজাতকরণ নিবন্ধন সনদ না থাকায় আলমাস সুপার শপকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিএসটিআই’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমিমুল এহসানের নেতৃত্বে সহকারী পরিচালক মো. রাকিবুল আলম ও পরিদর্শক মো. রফিক আজাদ অংশগ্রহণ করেন।


>> বিবার্তায় আরো পড়ুন: রাজধানীতে সুপারশপে অনিয়ম (পর্ব-১)


বিএসটিআইয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আমিমুল এহসান বিবার্তাকে বলেন, আলমাস সুপার শপে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে চানাচুর, মসুরডাল, ইসপগুলের ভূষি, কালোজিরা, এলাচ পণ্যের পণ্য মোড়কজাতকরণ নিবন্ধন সনদ পাওয়া যায়নি। সে কারণে ওজন ও পরিমাপ মানদ- আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।


শুধু এসব বড় বড় সুপার শপের বিরুদ্ধে অভিযোগ নয়, তালিকায় আছে ক্ষুদ্র দোকান থেকে বড় শিল্প গ্রুপ পর্যন্ত। এর মধ্যে খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান জামান হোটেল, তাবা রেস্টুরেন্ট, ক্যান্ডি, ফুলকলি, মধুবন, ওয়েলফুড, পুষ্টি, ফ্রেশ, তীর, রূপচাঁদা, ড্যানিশ, প্রাণসহ বিভিন্ন কোম্পানির উল্লেখযোগ্য। অথচ এসব অভিজাত শপের প্রতি ক্রেতার আস্থা ও নির্ভরতা ছিল।


বিভিন্ন পর্যায়ের ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খাদ্য উৎপাদনে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার, মাছ ও ফলে ফরমালিন, অন্যান্য প্যাকেটজাত খাবারে ভেজাল ও ক্ষতিকারক রং ব্যবহার বন্ধে নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু আইন প্রণয়নের পর পাঁচ বছর অতিবাহিত হলেও এটি শুধু কাগজে-কলমেই রয়ে গেছে। এ আইনে খাদ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর দায়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড ও ২০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রাখা হয়েছে। এ আইন প্রয়োগ করা হলে অপরাধ প্রবণতা অনেক কমতো বলে সংশ্লিষ্ট সকলের ধারণা। এক্ষেত্রে সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।


বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি সবার অধিকার। প্রথমতো জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে। জনগণ যদি এসব অভিযুক্ত দোকানগুলো বর্জন করে কিংবা বেশি দামে বিক্রয় করলে কম কম (পরিমাণ) কিনেন। আর খাদ্য গ্রহণে অনেক সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। পাশাপাশি বিক্রতারও নৈতিকতা বজায় রাখতে হবে। কারণ তিনি তো নির্ধারিত দামে বিক্রয় করছেন। তাহলে তিনি প্রতারণা করবেন কেন? এর জন্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছা. নাজমা নাহার বিবার্তাকে বলেন, বাজার মনিটরিং করতে বিভিন্ন সংস্থা রয়েছে। তাদের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় অনেক অভিযাত সুপার শপকে জরিমানাও করা হয়।


তিনি আরো বলেন, ভেজালের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেখানেই ভেজালের খবর পাওয়া যাবে সেখানেই অভিযান পরিচালনা করা হবে বলে জানান তিনি।


র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম বিবার্তাকে বলেন, সম্প্রতি রাজধানীর চকবাজার ও কামরাঙ্গীরচর এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় বিএসটিআই এর প্রতিনিধির উপস্থিতিতে ওই ভ্রাম্যমাণ আদালত অনুমোদনহীন নকল কসমেটিক্স, ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদন মজুদ ও বিক্রি করার অপরাধে ১৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। এমন অভিযান অব্যাহত আছে বলেও জানান তিনি।


বিবার্তা/খলিল/রাসেল/গমেজ/শাহিন/এমবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com