দেশের অন্যতম রিটেইল চেইন সুপারশপ মীনা বাজার। বর্তমানে সারাদেশে রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির শাখা। চলছে তাদের রমরমা বাণিজ্যও। কিন্তু বিভিন্ন শাখায় গ্রাহকদের কাছ থেকে তারা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে বাড়তি টাকা। নিম্নমানের পণ্য দিয়ে ঠকানো হচ্ছে ক্রেতা-গ্রাহকদের। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এমন একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।
একদিকে পণ্যের অতিরিক্ত দাম রাখা, অপরদিকে পঁচা-বাসি পণ্য বিক্রি করা এখন তাদের নৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবমিলিয়ে মীনা বাজার থেকে উচ্চমূল্যে ক্রেতারা কী কিনছেন, সময়ের প্রয়োজনে বিষয়টি খতিয়ে দেখা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের মিনা বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে প্রতারণা শিকার হয়েছেন এক ক্রেতা। তিনি বিবার্তাকে বলেন, ব্যস্ততার কারণে আমি সব সময় মিনা বাজার থেকেই বাজার করি। কারণ সেখানে একসাথে সব কিছু পাওয়া যায়। এর ধারাবাহিকতায় গত ২২ সেপ্টেম্বর মিনা বাজারে যাই। সেখানে গিয়ে ৬ হাজার টাকার জিনিস কেনাকাটা করি। পরে বিল দিয়ে বের হয়ে আসি। কিন্তু গাড়িতে উঠে হঠাৎ করে ১ হাজার ৬২৬ দশমিক ৭৫ টাকা মূল্যের একটি পণ্যের দিকে নজর যায়। পরে বিল চেক করে দেখি মিনা বাজার আমার কাছ থেকে আখের চিনি বাবাদ ১ হাজার ৬২৬ দশমিক ৭৫ টাকা নিয়েছে। অথচ ওই চিনির মূল্য ছিলো মাত্র ১৭৫ দশমিক ৫০ টাকা। এরপর দ্রুত মিনা বাজারে গিয়ে বিষয়টি জানালে সংশ্লিষ্টরা উল্টো হয়রানি করে আমাকে। পরে অনেকক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখে বিল সংশোধন করে বাড়তি টাকা ফেরত দেয়।
কারওয়ানবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রহিম মিয়া। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনি মীনা বাজারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বিবার্তাকে বলেন, আমি ওখানকার নিয়মিত ক্রেতা ছিলাম। কিন্তু এদের মাছ প্রায় সময়ই পঁচা থাকতো। তাই এখন আর মীনা বাজারে যাই না। এর আগে একদিন ওরা আমাকে মেয়াদোত্তীর্ণ গুঁড়ো দুধ দিয়ে দেয়।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা সুইটি আক্তার। তিনিও মীনা বাজার থেকে কেনাকাটা করতেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, মীনা বাজার ব্র্যান্ডের কারণে অতিরিক্ত দাম নিচ্ছে। কিন্তু গ্রাহক সেবার মান নিশ্চিত করার দিকে তাদের নজর নেই। কয়েকদিন আগে কসমেটিকস আইটেম কিনলাম, ব্যবহার করার পর দেখি স্কিনে নানা সমস্যা হচ্ছে।
এধরনের অপরাধের জন্য একাধিকবার মীনা বাজারের একটি শাখাকে লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়। তবুও থামছে না তাদের অপকর্ম। এ ব্যাপারে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বিবার্তাকে বলেন, রাজধানীর সুপারশপগুলোতে একাধিকবার অভিযান চালানো হয়েছে। তারপরও কিছু কিছু সুপারশপে অনিয়মের খাবর পাওয়া যায়। তবে যেখানে অনিয়ম হবে সেখানেই অভিযান চালানো হবে।
র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান বিবার্তাকে জানান, মানহীন ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পণ্য সংরক্ষণ ও খাদ্য সামগ্রী বিক্রির অভিযোগে গত এপ্রিল মাসে রাজধানীর মিরপুর-১৩ নম্বরে সুপারশপ মীনা বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় ওই প্রতিষ্ঠানকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।
তিনি আরো জানান, ওই সময় আউটলেটটিতে নিম্নমানের শুঁটকি পাওয়া গেছে, যার প্যাকেটে জীবিত পোকার উপস্থিতি মিলেছে। এছাড়া মীনা বাজারের বেশকিছু নিজস্ব উৎপাদনকৃত পণ্য পাওয়া গেছে যার মোড়কীকরণ লাইসেন্স নেই।
এদিকে বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়াও বেশ কিছু পণ্য বিক্রি করছিল প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সুপারশপে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানায় র্যাব।
মীনা বাজার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে রাশেদা নামের এক নারী কর্মী ফোন রিসিভ করেন। এ সময় তার কাছে অভিযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হবে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
পরে মীনাবাজার এলিফ্যান্ট রোড শাখার ম্যানেজার আরিফ ফোন করেন। তিনি অভিযোগের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বিবার্তাকে বলেন, ভুলক্রমে ২ এর জায়গায় ২১ কেজি হয়ে গিয়েছিলো। পরে ক্রেতা এসে বলার পর টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
বিবার্তা/খলিল/রাসেল/গমেজ/এমবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]