শিরোনাম
লকডাউনে অনিয়ম : নির্দেশনা অমান্য করেই চলছে সেলুন (পর্ব-৩)
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২১, ১৬:৩৫
লকডাউনে অনিয়ম : নির্দেশনা অমান্য করেই চলছে সেলুন (পর্ব-৩)
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

সরকার ঘোষিত ১৪ দিনের কঠোর লকডাউন চলাকালে আইন অমান্য করেই খোলা থাকছে পাড়া মহল্লার ছোট বড় সেলুনগুলো। সেসব সেলুনের কর্মচারী থেকে শুরু করে সেবা নিতে আসা কাস্টমার কারো মধ্যেই স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো আগ্রহ নেই, পুলিশি টহলের খবর পেলেই শাটার নামিয়ে চলে যান তারা। আবার পুলিশ চলে গেলেই শাটার উঠিয়ে আপন মনে কাজে লেগে যান তারা।


লকডাউনের সপ্তম দিন ২৯ জুলাই (বৃহস্পতিবার) রাজধানীর মিরপুর ১০, ১১, ১২ নং সেকশনের বিভিন্ন পাড়া মহল্লা, অলিগলিতে ঘুরে সরেজমিনে প্রায় ২৭টির বেশি সেলুন খোলা দেখতে পাওয়া যায়, যা চলমান লকডাউন আইনের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।



সরজমিনে দেখা যায়, এসব এলাকায় থাকা প্রায় সবগুলো সেলুনই সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে খোলা হয়, চালু থাকে রাত ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত। তবে কিছু কিছু সেলুনের শাটার অর্ধেক নামানো, অর্ধেক উঠানো, কোনোটির একপাশ বন্ধ, একপাশ খোলা। তবে সকাল থেকেই এসব সেলুনে কাস্টমারদের আনাগোনা দেখা যায়, দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসতেই ভিড় বেড়ে দ্বিগুণ হয়। বেশিরভাগ সেলুনেই ২ থেকে ৩ জন নরসুন্দর চুল কাটায় ব্যাস্ত, কোনো কোনোটায় আবার ২ থেকে ৩ জন কাস্টমারকে অপেক্ষারত দেখা যায়, এই ভিড় থাকে রাত পর্যন্ত। সেলুনে থাকা কারো মধ্যেই মাস্ক পরা বা করোনা স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি নজরে আসেনি।


মিরপুর ১২ এর প্রধান সড়ক থেকে একটু ভেতরে গেলেই দেখা যায় অর্ধ খোলা একটি সেলুন, নাম ফলক বিহীন এই সেলুনের ভেতরে গেলে দেখা গেল তিন জন কাস্টমার বসে আছেন, পাশেই একজনের চুল কাটছিলেন কর্মচারী অসীম শীল। জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে জানান, আমাদের সেলুন তো খুব ছোট, এখানে এই এলাকার আশে পাশের মানুষই আসে চুল-দাড়ি কাটাতে। তেমন ভিড়ও হয় না, এই দোকান না খুললে আমারা খাবার কেনার টাকা পাব কই?, আমাদের কোনো জামানত নেই বলেই বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও সেলুন খুলতে হয়। তবে মাস্ক পড়ে থাকি আমরা বেশিরভাগ সময়, মাঝে মাঝে খুলি রাখি।



অসীম আরো জানান, সবসময় ভয়ের মধ্যে থাকি কখন পুলিশ আসে, তাই খবর পেলেই অন্য শাটার টা ফেলে ভেতরে থেকে লক করে দেই। এই ভয়ে বেশি কাস্টমারও পাই না। তাই আমাদের সেলুন খোলা বা বন্ধ রাখার কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই।


কিছুদুর আগাতেই নজরে আসে এরকম অর্থ খোলা থাকা আরেকটি সেলুন, নাম ভাই ভাই সেলুন। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ে সেলুনের দুই কর্মচারী আল হাবিব ও রুবেল মিয়া চুল কাটায় ব্যাস্ত, আরো তিন জন কাস্টমার তাদের লাগোয়া চেয়ারে বসে অপেক্ষমান ছিলেন। চুল কাটতে কাটতে রুবেল বিবার্তাকে জানান, আমাদের এই সেলুনের মাসে পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া আছে, আমাদের নিজেদেরও বউ বাচ্চা আছে, বাসা ভাড়া আছে। আর গলির ভেতরে খোলা রাখলে সমস্যা কি? এলাকার লোকের মধ্যে তেমন করোনা নাই বলেই আমরা জানি। আমরা তো লকডাউনের দুই দিন পর থেকেই সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখি।



অপেক্ষমান তিন জনের এক জন ইখলাসুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, আমার আগামীকাল এক বোনের বাসায় দওয়াত আছে, তাই একটু দাড়ি ও চুল কাটাতে আসলাম। অফিস বন্ধা থাকায় তো বাসায়ই বসে আছি, এতদিন বসে থাকতে কার ভাল লাগে বলেন। আপনার তো মানুষের মন বুঝেন না, সব জায়গায় খালি আইন আইন করেন।


মিরপুর ১১ নম্বরের প্রধান রাস্তা থেকে একটু ভেতরেই চোখে পড়ে হেয়ার স্টাইলার নামের একটি সেলুন। দোকানের নরসুন্দর সোলায়মান একটু বিরক্তি নিয়ে বলেন, কি করোনা করোনা শুরু করছেন আপনারা, করোনা আবার কি জিনিস? আমাদের তো হচ্ছে না! আর আমরা শুধু দুপুরের পরে কিছু সময়ের জন্য দোকান খুলি, ১০/১৫ জন কাস্টমার পাই দিনে, সেটাই দুই জন ভাগ করে নিয়ে কাজ করি। আমার প্রতি সপ্তাহে কিস্তি আছে, দোকান না খুললে বিপদে পড়ে যাব।


পাশেই অপেক্ষমান ২৭ বছরের মোতাহার হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি পাশেই একটি ছোট গার্মেন্টস কোম্পানিতে চাকরি করেন, লকডাউনেও সীমিত পরিসরে চলছে তাদের কার্যক্রম। চাকরির সুবাদেই তাকে পরিপাটি থাকতে হয়।



তিনি বলেন, ঈদের পরে আমাদের অফিস বন্ধই ছিল, তবে ২ দিন আগে থেকে জরুরি কিছু অর্ডারের জন্য কারখানা চালু করা হয়, তাই আমারও অফিস খোলা। অফিসে গেলে তো আর আগোছালো ভাবে যেতে পারি না। নিজে নিজে তো আর চুল কাটা যায় না, তাই দেখলাম বাসার পাশেই সেলুন আছে, চলে এলাম। তবে করোনা সুরক্ষা মেনে চলার চেষ্টা করি সবসময়, মাস্ক পরে চলাফেরা করি।


পল্লবী থানার বিকেলের ডিউটি অফিসার বিবার্তাকে জানান, আমাদের টহল টিম নিয়ম করে প্রায় প্রতিটি এলাকায় যাচ্ছে লকডাউনের সময়। জরুরি সেবা ছাড়া অন্য যে কোনো দোকান, সেলুন আমরা বন্ধ করতে বলেছি, এরপরেও লুকিয়ে লুকিয়ে কেউ কেউ খোলে। আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য আসলে আমরা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। তাদের সাথে তো আমাদের পুলিশের রীতিমত চোর-পুলিশ খেলা চলতে থাকে, আমাদের গাড়ির শব্দ পেলেই যে যার যার মত দোকান বন্ধ করে চলে যায়, আবার আমরা চলে গেলে সবাই দোকান খোলে। দোকানের কাস্টমারও চলে আসে। তাই সচেতনতা আসলে সবার থেকেই কাম্য।


বিবার্তা/আদনান/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com