সাক্ষাৎকারে মির্জা ফখরুল
৩০ আসন না পেয়ে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে জামায়াত
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৪:৩৪
৩০ আসন না পেয়ে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে জামায়াত
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির কাছ থেকে জামায়াতে ইসলামী ৩০টি আসনে ছাড় চেয়েছিল বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বিএনপি সেই প্রস্তাবে সম্মত না হওয়ায় জামায়াত এখন পিআর (আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি তুলে বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে।


ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক 'এই সময়'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সম্প্রতি পত্রিকাটির সাংবাদিক অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি গতকাল সোমবার প্রকাশিত হয়।


সাক্ষাৎকারে ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে প্রশ্ন করা হয়, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন কি আদৌ হবে? জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির দাবি পূরণ না হলে কি নির্বাচন হতে দেবে? হলেও কি দেশজুড়ে অশান্তি ও রক্তপাত হবে?


জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতেই ভোট হবে। সংশয়ের কোনো জায়গা নেই। কোনো অশান্তি হবে না। মানুষ ভোটাধিকার ফেরত চাইছেন, নির্বাচন চাইছেন। উৎসবের মতো ভোট হবে ফেব্রুয়ারিতে।


সাংবাদিকের জামায়াতের পিআর পদ্ধতি ও এনসিপির গণপরিষদের নির্বাচনের দাবি সম্পর্কে প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, জামায়াত ভোটে আসবে। পিআর–টিআর নয়, মানুষ যে পদ্ধতিতে ভোট বোঝেন, সেই প্রচলিত পদ্ধতিতেই হবে বাংলাদেশের ভোট। জামায়াতও দেখবেন অংশ নেবে। আর এনসিপিকে আমরা কোনো শক্তি বলেই আর মনে করি না।


এনসিপি কি বিএনপির কাছে আসন চেয়েছিল-এমন এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, না, এনসিপি কখনো চায়নি। তবে জামায়াত চেয়েছে। এনসিপির এখন একমাত্র লক্ষ্য, বিএনপিকে সরকার গঠন করতে না দেওয়া।


জামায়াত কি ৫০টি আসন চেয়েছিল-জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ৩০টা চেয়েছে। আমরা উৎসাহ দেখাইনি। অনেক কম একটি সংখ্যার কথা বলেছি, যা তাদের পছন্দ হয়নি। আপনাকে আশ্বাস দিচ্ছি, জামায়াতকে আর আমরা মাথায় উঠতে দেব না। তারা যত বড় না শক্তি, আমরা অকারণে তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। পিআর-টিআর সবই বিএনপির ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল। জামায়াত কিন্তু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।



নির্বাচন বিষয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর এখন আস্থা আছে কি না-জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, পরিস্থিতি বদলেছে। দলের পক্ষে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলি। দেখছি, এখন তিনি সর্বোচ্চ সিরিয়াস। আন্তরিকভাবেই চান ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হোক।


তিনি বলেন, আগস্টের ৫ তারিখে ইউনূস নির্বাচনের দিন ঘোষণা করলেন। তার আগের দিন রাতে ইউনূস সাহেবের বাসভবনে তাঁর ও সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ–জামানের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আমার দীর্ঘ আলোচনা হয়। সেনাপ্রধান বলেন, পুলিশ কম বলে এক বছর ধরে সেনাদের রাস্তায় ডিউটি করতে হচ্ছে, যা কাম্য নয়। তিনি ডিসেম্বরে ভোটের কথা বলেছিলেন, ফেব্রুয়ারিতে আপত্তি নেই। সব রকম সহযোগিতা করবেন।


জাতীয় পার্টির অফিস ভাঙচুরের পরের দিন ড. ইউনূস বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপি নেতৃত্বকে তাঁর বাসভবনে ডেকেছিলেন কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ড. ইউনূস সেদিন আমাদের একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। সে বার্তা সংক্ষিপ্ত, এক লাইনের। এক ধরনের ফাইনাল বেল বলতে পারেন। ইউনূস সেদিন আমাদের জানিয়ে দেন, ফেব্রুয়ারিতে ভোটের বাস ধরতে না পারলে তিনি মার্চ থেকে আর থাকবেন না।


আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিক দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না-এমন প্রশ্নে ফখরুল বলেন, আমরা বলেছি আওয়ামী লীগ ও তাদের শরিকেরা সবাই, এমনকি জাতীয় পার্টিও নির্বাচনে অংশ নিক। একটা সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট হোক। এজন্য অনেকে আমাকে ভারতের এজেন্ট, আওয়ামী দালাল বলে গালাগাল দিচ্ছে। কিন্তু শেখ হাসিনার অপকর্ম আমরাও কেন করব?



বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ভারত মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী। ভৌগোলিকভাবেও বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত, এক দিকে সাগর। সুতরাং ভারতের প্রভাব বাংলাদেশে থাকবেই। সমস্যা হলো, বাংলাদেশ বলতে শুধু আওয়ামী লীগকে বুঝেছে ভারতের শাসকেরা।


ভারতীয় সাংবাদিকের ‘২৫ বছর ধরে জামায়াত আপনাদের শরিক’-এমন মন্তব্যের জবাবে ফখরুল বলেন, ভুল। আওয়ামী লীগ এই অপপ্রচারটা ভারতকে বিশ্বাস করিয়েছে। তারা শুধুই নির্বাচনী শরিক। তারা ধর্মীয় রাজনীতি করে, আমরা করি না।


তিনি আরও বলেন, আসলে আওয়ামী চশমা দিয়ে ভারত বাংলাদেশকে দেখেই ভুলটা করেছে। বাকিদের সঙ্গে যোগাযোগই রাখেনি। আজ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষোভের পাহাড় তীব্র ভারত-বিরোধিতায় পর্যবসিত হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষে আমি আশ্বাস দিচ্ছি, জামায়াতকে আর সুবিধা নিতে দেবো না। আমরা চাই, ভারত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখুক।


বিবার্তা/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com