
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে সংলাপে মব ভায়োলেন্স সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কায় মেরুদণ্ড শক্ত করে সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। তারা বর্তমান পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে গতানুগতিক নির্বাচনের পরিণতি নিয়ে সতর্ক করেছেন।
রোববার (২৮ সেপ্টেম্বর) সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অন্য চার কমিশনার, ইসি সচিব ও ইসির উর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।
নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করেন, যেকোনো সময় মব সৃষ্টির আশঙ্কায় কমিশনকে সতর্ক থাকতে হবে। এ ধরনের পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে। কমিশনকে সাহসী হয়ে এবং মেরুদণ্ড সোজা করে স্বাধীনভাবে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়, যাতে একটি সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া যায়।
প্রবাসীদের জন্য আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও এর বিতর্কিত হওয়ার সুযোগ নিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে, নির্বাচনের আগে ও পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য, অপতথ্য ও এআই-জেনারেটেড তথ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য কৌশল হাতে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনো ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সচেতনতা তৈরি না করে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক পদ্ধতি চালু না করার পরামর্শ দিয়েছেন অনেকে।
এছাড়া, মাঠপর্যায়ে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) পরিবর্তে ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদের রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। জাতীয় প্রতীক শাপলা কোনো বিশেষ দলকে না দেওয়ার বিষয়ে ইসিকে অনড় থাকার জন্য অভিনন্দন জানানো হয়। একই সঙ্গে শুধু একক প্রার্থীর আসনেই নয়, সব আসনে না ভোট প্রবর্তন করা এবং নারী ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো ও নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএন নাসির উদ্দিন সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক চিন্তার অগ্রদূত হিসেবে এই সংলাপ আগামী নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে ভূমিকা রাখবে। তিনি বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু, সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে জানান এবং উপস্থিতদের পরামর্শকে ইসির কাজ-কর্মে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।
তিনি জানান, প্রবাসীদের জন্য আইটি-সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা এবার মাইলফলক হয়ে থাকবে।
নির্বাচনকে স্বচ্ছ করতে চাওয়ার কথা জানিয়ে সবার সহযোগিতা চান তিনি। সিইসি বলেন, কলের মাধ্যমে তথ্য ফাঁসের ভয়ে তিনি অনেকের ফোন ধরেন না। তবে ইসির দরজা খোলা এবং যেকোনো সময়ে সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবীর এবারের নির্বাচনকে দেশের জন্য একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে উল্লেখ করে ইসিকে উঁচু নৈতিক মানদণ্ড বজায় রেখে সোজা পথে বা সিরাতুল মোস্তাকিম ধরে হাঁটার আহ্বান জানান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রুবায়েত ফেরদৌস কমিশনকে স্বাধীনভাবে মেরুদণ্ড সোজা করে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতীতের কমিশনগুলো কার্যকরভাবে তা দেখাতে পারেনি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার বর্তমান পরিস্থিতিকে ভয়াবহ উল্লেখ করে বলেন, গতানুগতিক স্টাইলে নির্বাচন করলে কী হবে তা অনুমেয় এবং সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারলে ইসির নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]