
আন্দোলনরত এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) এক বিবৃতিতে এই সমর্থন ও সংহতি জানিয়ে চারটি দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি সরকারকে মেনে নিতে হবে। এ বছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া এবং আগামী অর্থ বছরে আরও ১০ শতাংশ হারে তা বাড়ানোর নিশ্চয়তা দিতে হবে; বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে অপর্যাপ্ত হলেও, চিকিৎসা ভাতা ন্যূনতম দেড় হাজার টাকা করা এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বাড়াতে হবে; আগামী অর্থবছর থেকে শিক্ষাখাতের জন্য জিডিপির শতকরা তিন ভাগ বরাদ্দ করতে হবে এবং পরের বছরগুলোয় ধীরে ধীরে তা শতকরা চার ভাগে উন্নীত করতে হবে; আন্দোলনরত শিক্ষক-কর্মচারীদের ওপর অযাচিত পুলিশি নির্যাতন ও সহিংসতার তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতিতে বলা হয়, ইউনেস্কোর সুপারিশ হলো, প্রতিটি দেশ যেন তার বাজেটের অন্তত ৫.৫ শতাংশ শিক্ষায় বরাদ্দ করে। বাংলাদেশ কখনোই তার ধারেকাছে যায়নি, বরং সবসময়ই তা ২ শতাংশর নিচে রাখা হয়। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, একটি গণআন্দোলন ও রক্তপাতের পরে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে, তাদের সময়ে এসে শিক্ষায় বরাদ্দ আগের চাইতেও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, কিন্তু শিক্ষা নিয়ে কোনো সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়নি। এতেই বোঝা যায় অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে শিক্ষা অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে আছে। অথচ তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ছিল ঠিক উল্টো।
এতে আরও বলা হয়, শিক্ষকদের শুরুতে মূল বেতন থাকে প্রায় ১২ হাজার টাকা। সঙ্গে ভাতাসহ বাড়তি কিছুটা সুবিধা যোগ হয়ে মোট অর্থ ২০ হাজার টাকার নিচেই থাকে। কিন্তু এই বেতন-ভাতা যে বর্তমান সময়ের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট এবং মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে জীবনযাপনের জন্য অতি সামান্য, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যেখানে বেতনের চল্লিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ শতাংশ পর্যন্ত অর্থ পান বাড়ি ভাড়া হিসেবে, সেখানে বেসরকারি শিক্ষকেরা পান হাজার টাকার থোক বরাদ্দ। সরকারি-বেসরকারি কাঠামোয় পার্থক্য থাকতে পারে, কিন্তু এখন যা আছে, তা হলো বৈষম্য। বেসরকারি শিক্ষকদের প্রতি এরকম অবমাননা পুরো জাতির জন্যই লজ্জাজনক। এ ধরনের ব্যবস্থার কারণেই শিক্ষকরা শিক্ষকতায় পূর্ণ মনোযোগী থাকতে পারেন না; প্রাইভেট পড়ানো-কোচিং থেকে শুরু করে দলীয় রাজনীতিসহ অন্যান্য অশিক্ষকসুলভ কাজে, এমনকি দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে একরকম বাধ্য হন তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, জানা যাচ্ছে, শিক্ষক–কর্মচারীদের বাড়িভাড়া ৫ শতাংশ দিতে রাজি সরকার। তবে শিক্ষক–কর্মচারীরা বলছেন, এটি তাঁরা মানবেন না। শুক্রবার থেকে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের দাবি, এ বছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ি ভাড়া এবং আগামী অর্থ বছরে আরও ১০ শতাংশ হারে তা বাড়ানোর নিশ্চয়তা দিতে হবে। নানান সূত্রে জানা যাচ্ছে, শিক্ষকদের এই দাবির ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নৈতিক সমর্থন থাকলেও তহবিল সংকট রয়েছে। একথা ঠিক, ছয় লক্ষ বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর সব দাবি মেটাতে কয়েক হাজার কোটি টাকা লাগবে। আবার, এ কথাও ঠিক যে, বিগত সময়ে রাজনৈতিক বিবেচনায় বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে, যার ফল এবারের এইচএসসি পরীক্ষাতেও প্রতিফলিত হয়েছে। কিন্তু, শুধু এ দুটি কারণে শিক্ষকদের ন্যায্য দাবির প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো (শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়) যথাযথ ইতিবাচক মনোভাব পোষণ না করলে সেটি একটি নতুন রাজনৈতিক সংকট তৈরি করবে বলে আমরা মনে করি।
‘‘আমরা মনে করি তাদের যে তিনটি দাবি – মূল বেতনের ২০ শতাংশ (ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা) বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ভাতা দেড় হাজার টাকা করা এবং কর্মচারীদের উৎসব ভাতা ৭৫ শতাংশ বাড়ানো – প্রত্যেকটিই ন্যায্য দাবি এবং এই দাবিগুলো অনতিবিলম্বে মেনে নেয়ার জন্য শিক্ষক নেটওয়ার্ক সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’’
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]