শিরোনাম
কোচিং সেন্টারের প্রশ্নপত্রেই বার্ষিক পরীক্ষা!
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৩:৪৫
কোচিং সেন্টারের প্রশ্নপত্রেই বার্ষিক পরীক্ষা!
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বাগেরহাট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর একটি বিষয়ে কোচিং সেন্টারে মডেল টেস্টে নেয়া প্রশ্নপত্রেই বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এই অভিযোগ ওই বিদ্যালয়ের প্রভাতি শাখার খণ্ডকালীন সহকারি শিক্ষক শেখ মো. বেল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে।


তার কোচিং সেন্টারের ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীর অবিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের সাথে জড়িত শিক্ষকদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা।


শেখ মো. বেল্লাল হোসেন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের প্রভাতি শাখার খণ্ডকালীন সহকারি শিক্ষক হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। দেড় বছর আগে তাকে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পর্ষদ নিয়োগ দেন।


মঙ্গলবার দুপুরে অভিযোগ পেয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘটনা তদন্তে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সকারি প্রধান শিক্ষক শেখ আমজাদ হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, বিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন সহকারি শিক্ষক শেখ মো. বেল্লাল হোসেন স্কুল শেষে নিজ বাড়িতে কোচিং সেন্টার খুলে তাতে তৃতীয় শ্রেণীর বেশকিছু শিক্ষার্থীকে ব্যাচ করে পড়ান। প্রায় পনেরো দিন আগে ওই শিক্ষক তার কোচিং সেন্টারে পড়া শিক্ষার্থীদের ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচিত’ বিষয়ে মডেল টেস্ট পরীক্ষা নেন। গত ৯ ডিসেম্বর তৃতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচিতি’ বিষয়ে দেয়া বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সাথে হুবহু মিল রয়েছে।


তারা আরো জানায়, তার কোচিং সেন্টারে পড়া শিক্ষার্থীদের মডেল টেস্ট পরীক্ষার এক নং প্রশ্ন থেকে তিন নং প্রশ্ন এবং প্রতিটি প্রশ্নের ক, খ, গ সব কিছু হুবহু মিল রয়েছে। ১০০ নম্বরের প্রশ্নপত্র সম্পূর্ণ একই। ওই শিক্ষক তার কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদের ভাল নম্বর পাইয়ে দেওয়ার জন্য স্কুলের করা প্রশ্নপত্র আগেই পেয়ে গিয়েছিলেন। ওই শিক্ষক পরীক্ষার আগেই কিভাবে ওই প্রশ্নপত্র পেলেন এবং অন্য কোন কোন শিক্ষক এই প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িত তা খুঁজে বের করতে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও জেলা প্রশাসকের কাছে দাবি জানিয়েছেন।


দুটি প্রশ্নপত্রে হুবহু মিল থাকার কথা স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মতিন হাওলাদার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে বলেন, পরীক্ষার আগেই তৃতীয় শ্রেণীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচিত’ ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রে বার্ষিক অনুষ্ঠিত হওয়ার অভিযোগ অবিভাবকদের কাছ থেকে পেয়েছি। যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তিনি এই বিদ্যালয়ের আইসিটি বিষয়ের অস্থায়ী খণ্ডকালীন শিক্ষক। তিনি স্কুল শেষে আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তার গড়ে তোলা কোচিং সেন্টারে পড়ান। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনা তদন্ত করতে বিদ্যালয়ের সকারি প্রধান শিক্ষক শেখ আমজাদ হোসেনকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে আগামী দুই কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই যারা জড়িত থাকবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রভাতি শাখার খন্ডকালীন সহকারি শিক্ষক শেখ মো. বেল্লাল হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টার করলেও তার ফোনটি বন্ধ থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের সভাপতি বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি। বর্তমান সরকারের অবস্থান কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তাদের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


বিবার্তা/ইমরুল/ইমদাদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com