আজ বৃহস্পতিবার ৭ ডিসেম্বর ‘নোয়াখালী মুক্ত দিবস’। ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর দখলদার পাকিস্থানী বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের হাত থেকে মুক্ত হয়ে ছিল অবিভক্ত নোয়াখালী।
এদিন প্রত্যুষে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলা বিএলএফ প্রধান মাহমুদুর রহমান বেলায়েত, ডিপুটি কমান্ডার মমিন উল্যাহ্ এবং সি জোনের কমান্ডার ক্যাপ্টেন মোশারেফ হোসেনের নেতৃত্বে জেলা শহর মাইজদী আক্রমণ করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এক যোগে তারা তিনটি রাজাকার ক্যাম্প দখল করেন। আত্মসমর্পণ করে পাকিস্থানীদের এ দেশীয় দালাল রাজাকাররা। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধের মুখে অবস্থা বেগতিক দেখে নোয়াখালী পিটিআই ট্রেনিং সেন্টার থেকে তড়িঘড়ি করে পালিয়ে যায় খান সেনারা।
নতুন প্রজন্মের কাছে ৭ ডিসেম্বরের স্মৃতিকে পরিচয় করিয়ে দিতে ১৯৯৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর পাকবাহিনীর ক্যাম্প হিসেবে পরিচিত নোয়াখালী পিটিআই ট্রেনিং সেন্টারের সম্মুখে স্থাপন করা হয় স্মরণিকা স্তম্ভ ‘মুক্ত নোয়াখালী’। আর মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর একই স্থানে বর্ধিত পরিসরে নোয়াখালী মুক্ত মঞ্চ স্থাপন করা হয়।
জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাম্মেল হক মিলন জানান, মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্ত মঞ্চে দুপুর ২টায় বিজয় র্যালি, একই স্থানে র্যালি পরবর্তী জাতীয় সঙ্গীত, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন নোয়াখালী মুক্ত দিবস উদ্যাপন পরিষদ।
এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখবেন নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ একরামুল করিম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মাহবুব আলম তালুকদার, জেলা পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফ, নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ্ খাঁন সোহেল।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালোরাত্রিতে পাকিস্থানী বাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর মুক্তিকামী ছাত্র, জনতা, পুলিশ ও ইপিআর ফেরৎ জওয়ানদের সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।২ ৩ এপ্রিল পর্যন্ত নোয়াখালী ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীতে পাকবাহিনীর হামলার মুখে মুক্তিযোদ্ধারা টিকতে না পেরে পিছু হটলে নোয়াখালীর নিয়ন্ত্রণ নেয় পাকিস্থানীরা।
নোয়াখালী পিটিআই এবং বেগমগঞ্জ সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে শক্তিশালী ঘাঁটি গড়ে তোলে পাকিস্থানী সেনাবাহিনী। তাদের সাথে দেশীয় রাজাকাররা মিলে শুরু করে লুটপাট। এরই মধ্যে নোয়াখালীর অসংখ্য ছাত্রজনতা প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারত থেকে এসে পাকিস্থানীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়।
কোম্পানীগঞ্জের বামনীর যুদ্ধ, বেগমগঞ্জের বগাদিয়াসহ অসংখ্য যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে। শহীদ হয় শত শত মুক্তিযোদ্ধা। শুধুমাত্র সোনাপুরের শ্রীপুরে তারা হত্যা করেছিলো শতাধিক ব্যক্তিকে। এছাড়া বেগমগঞ্জের চৌরাস্তায়, একই উপজেলার গোপালপুর ও সেনবাগেও গণহত্যায় লিপ্ত ছিল পাকিস্থানিরা। এখনও এসব স্থানে গণকবরের দেখা মেলে।
ডিসেম্বরের শুরুতেই নোয়াখালীর প্রত্যন্ত প্রান্তরে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্থানিদের পিছু হটিয়ে দেয়। ৬ ডিসেম্বর দেশের সর্ববৃহৎ উপজেলা বেগমগঞ্জ মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা। আর সাত ডিসেম্বর মুক্ত হয় গোটা নোয়াখালী জেলা।
বিবার্তা/সুমন/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]