শিরোনাম
ধানে পোকার আক্রমণে কৃষকের মাথায় হাত!
প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০১৭, ১২:৩৮
ধানে পোকার আক্রমণে কৃষকের মাথায় হাত!
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

জমির ধান গাছের বিবর্ণ চেহারা দেখে কৃষকের চেহারাও বিবর্ণ। কিছুদিন পরই ধান কেটে যেখানে ঘরে তুলতে হবে, চলছে সে প্রস্তুতি। এমন সময় রোপা আমন ধানে গাছফড়িং বা কারেন্ট পোকার আক্রমণে বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে ধানের গাছ। শেষ সময়ে ফসলের ক্ষেত্রে পোকার আক্রমনে কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। এর ফলে ধান উৎপাদন অনেক কমবে বলে চাষিদের আশংঙ্কা।


হঠাৎ করে ক্ষেতে পোকার আক্রমণে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বাজার থেকে ক্রয় করা ওষুধ এই পোকা দমন করতে পারছে না। হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় কীটনাশকের সংকটও সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় পোকা দমনে আলোক ফাঁদ ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ। তবে চাষিদের বেশির ভাগই আলোক ফাঁদ সম্বন্ধে অজ্ঞ। কৃষকদের আশংকা, পোকা দমন করতে না পারলে রোপা বোরো ও আমন উৎপাদন মারাত্মক ব্যাহত হবে।


কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার ৩৫ হাজার ২৮৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ৫৫৫, লোহাগড়া উপজেলায় ৯ হাজার ৭৮০ এবং কালিয়া উপজেলায় ৮ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এর মধ্যে লোহাগড়া ও সদর উপজেলায় ৮.৬৪ একর জমির ধান এই পোকার আক্রমনে নষ্ট হয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে সাড়ে ৩ হেক্টর জমিতে পেকার আক্রমণ হয়েছে।


কিন্তু কৃষকরা বলছেন ক্ষয়ক্ষতির পরিমান বহুগুণ বেশী। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, লোহাগড়া ও সদর উপজেলার অন্তত অর্ধশতাধিক গ্রামের কয়েক’শ কৃষকের অন্তত ৩ হাজার হেক্টর জমির ধান ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিদিনই এই পোকার আক্রমণ বিভিন্ন এলাকার বিলে ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানান ভুক্তভোগিরা। কৃষকদের অভিযোগ জমির ধান নষ্ট হয়ে গেলেও কৃষি বিভাগ কোনো সাহায্য করছে না। এমনকি কোন পরামর্শও দিতে আসেনি কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।


লোহাগড়া উপজেলার লাহুড়িয়া গ্রামের পঁচাশিপাড়ার কৃষক মোজাফফর হোসেন, ওসমান শেখ ও শাহাদৎ শেখ জানান, গত তিন-চার দিন ধরে এই এলাকার ধানক্ষেতে পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পোকার আক্রমণে ধান ক্ষেত বাদামি রঙ ধারণ করেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ক্ষেতের পোকা দমনে যে কীটনাশক ব্যবহার করতে বলছেন, তা চাহিদার তুলনায় বাজারে কম পাওয়া যাচ্ছে।


জয়পুর গ্রামের কৃষক জামাল ফকির ও পরেশ মল্লিক, সিংগার হুমায়ুন কবির, ইদ্রিস শেখ, চরকালনার মুন মীর, লাবলু মীর, মোচড়ার কামাল মোল্যা, পাঁচুড়িয়ার সোহেল লস্করের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বাদামি গাছফড়িং (বিপিএইচ) বা কারেন্ট পোকা রোপা বোরো ও আমন ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়েছে। ধান গাছে কাইচ থোড় আসার পর পোকার আক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। পোকার ডিম থেকে বেরিয়ে আসা বাদামি ফড়িংয়ের বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক উভয় পোকা দলবদ্ধভাবে ধান গাছের গোড়ার দিকে অবস্থান করে গাছ থেকে রস খেয়ে ফেলছে। আর এ কারণে গাছ দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। পোকার আক্রমণে ধান গাছ প্রথমে হলুদ ও পরে শুকিয়ে বাদামি রঙ ধারণ করছে।


সদর উপজেলার সীবানন্দপুর গ্রামের কৃষক ইশারত শেখ বলেন, হঠাৎ করে ধানে পোকার আক্রমণে আমাদের ফসল উৎপাদন কমে যাবে এতে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হবে।


লোহাগড়া বাজারের রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, প্রতিদিনই শত শত কৃষক কারেন্ট পোকা দমনের জন্য কীটনাশক কিনতে আসছেন। কিন্তু বাজারে কীটনাশকের সরবরাহ কম। ফলে কীটনাশক না পেয়ে অনেক কৃষকই হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন।


লোহাগড়া উপজলো কৃষি র্কমর্কতা সমরেন বিশ্বাস জানান, এই পোকার নাম বাদামি গাছফড়িং (বিপিএইচ)। স্থানীয়ভাবে এই পোকাকে কৃষকরা ‘কারেন্ট পোকা’ বলছেন। কৃষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য এরই মধ্যে এ সম্পর্কিত প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়েছে। এই পোকা দমনে ধানক্ষেতে আলোক ফাঁদ তৈরির জন্য কৃষকদের বলা হয়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা পোকা দমনে তৎপর রয়েছেন।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক বলেন, এ বছর জেলায় রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ হাজার ৮’শ ৯৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে ৩৫ হাজার ২’শ ৮৫ হেক্টর জমিতে।


পোকার আক্রমনের বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, সদর ও লোহাগড়ায় সাড়ে ৩ হেক্টর জমিতে পোকার আক্রমণ হয়। বিষয়টি জানার পর তাৎক্ষনিক ভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করায় সমস্যার সমাধান হয়েছে। এতে উৎপাদনের কোন সমস্যা হবে না বলেও জানান তিনি।



বিবার্তা/শরিফুল/ইমদাদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com