শিরোনাম
কুড়িগ্রামে চালের দাম উর্ধ্বগতি, বিপাকে নিম্ন-মধ্যবিত্তরা
প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১১:৩৪
কুড়িগ্রামে চালের দাম উর্ধ্বগতি, বিপাকে নিম্ন-মধ্যবিত্তরা
সৌরভ কুমার ঘোষ, কুড়িগ্রাম
প্রিন্ট অ-অ+

কুড়িগ্রামে চালের বাজার এখন উর্ধ্বমুখি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে লাফিয়ে উঠছে চালের দাম। কেজিতে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত। হঠাৎ চালের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে চাল ব্যবসায়ীরা দুষছেন মহাজনকে। আবার মহাজনরা বলছেন উল্টো কথা। এতে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষ। সরকারিভাবে কঠোর মনিটরিং ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকায় লাগাম টানা যাচ্ছে না এই চালের উর্ধ্বগতির। ফলে সাম্প্রতিক বন্যায় সব হারানো পরিবারগুলোর মাথায় এখন আকাশ ভেঙে পড়েছে।


কুড়িগ্রাম পৌরবাজারে চাল কিনতে এসে খেটে খাওয়া মানুষ নুরনবী, কাশেম ও ভোলা মিয়া জানান, ‘বাহে, গত সপ্তাত চাল কিনলং ৩৭ টেকাত। আইজ দেখি চাবার নাগছে ৪৫ টেকা। এমরা তো হামাক মারি ফেলবে। দেশোত গরীব মানুষ বাঁচবে ক্যামনে! এমন করি চাইলের দাম বাড়লে বউ-ছওয়া নিয়া না খায়া থাকা নাগবে।’


এদিকে গত বৃহস্পতিবার জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক চাল ব্যবসায়ীদের সাথে জরুরি মিটিং করেছেন। তিনি চাল ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেছেন কোনো অবস্থায় যেন চালের বাজার বৃদ্ধি করা না হয়। কিন্তু বাজারে চালের সরবরাহ কমে যাওয়ায় চতুর ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ইচ্ছেমত। সম্প্রতি দু’দফা বন্যা ও লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী অনুপ্রবেশ ইস্যু নিয়ে ব্যবসায়ীরা চালের অবৈধ মজুদ বাড়িয়েছে। ফলে সারাদেশে বেড়েছে চালের মূল্য।


সরেজমিন কুড়িগ্রাম শহরের আদর্শ পৌরবাজার ও পৌরচাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি করা হচ্ছে ৪৫ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগে যার মূল্য ছিল ৩৮ টাকা। মিনিকেট ৫২ টাকা থেকে দাঁড়িয়েছে ৫৮ টাকায়, স্বর্না ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা, আটাশ ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।


খুচরা বিক্রেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, বেশি দাম দিয়ে চাল কেনার ফলে লাভের মুখ দেখছেন না তারা। মহাজনরা বস্তা প্রতি তাদেরকে ৩৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চড়া দামে চাল বিক্রি করছে। ফলে লাভের মুখ দেখছেন না খুচরা বিক্রেতারা। অপরদিকে মহাজনরা পূর্বের কেনা দামের চালও বর্তমান বাজারদরে বিক্রি করায় মহাজনদের পোয়াবারো হলেও তারা চরম হতাশ এই উর্ধ্বমুখির কারণে।


কুড়িগ্রাম আদর্শ পৌরবাজারের খুচরা ও পাইকারী চাল ব্যবসায়ী বক্তার আলী জানান, এক সপ্তাহ আগে মোকামে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ হিসেবে মোকামের মহাজনেরা কম সরবরাহ এবং ট্রাকভাড়া ও লোডিং-আনলোডিংকে দায়ী করছেন। এছাড়াও মিলগুলোতেও বাড়তি খরচের কথা জানান এ্যানি স্টোরের মালিক আব্দুল হালিম।


পৌরচাল বাজারের মহাজন ও পাইকারী চাল ব্যবসায়ী হযরত আলী জানান, একদিকে ধানের মূল্য বৃদ্ধি ও ইমপোর্ট পয়েন্টে হঠাৎ করে চালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়া এবং আমদানী কমে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।


একই কথা জানালেন অপর চাল ব্যবসায়ী আতাউর রহমান আতা। তিনি জানান, দিনাজপুরের হিলি থেকে ইমপোর্টাররা ভারত থেকে চাল আমদানি করে। আমরা হিলির বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে চাল আমদানি করি। বর্তমানে পয়েন্টগুলোতে চালের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছি। তবে সরকারের ওএমএস চালু হওয়ায় বাজারে এর প্রভাব ফেলতে পারে বলে অপর ব্যবসায়ীরা জানান।


এদিকে সরকারি হিসেবে জেলার বন্যাকবলিত ৭২৪টি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত ৫ লাখ ১৭ হাজার ৭৬ জন মানুষকে এখন চড়া মূলেই চাল কিনতে হচ্ছে। ফলে বিশাল সংখ্যক মানুষ চালের উর্ধ্বগতির কারণে নাভিশ্বাস অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।


এ বিষয়ে জেলা মার্কেটিং অফিসার নাসির উদ্দিন জানান, চালের বাজার এখন কমতে শুরু করেছে। আজ থেকে জেলা খাদ্য বিভাগ কুড়িগ্রাম শহরের পাঁচটি পয়েন্টে ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে ৩০ টাকা দরে এক মেট্রিক টন চাল ন্যায্যমূল্যে বিতরণ শুরু করেছে। এছাড়াও সরকার চাল আমদানি করছে। পোর্টে জাহাজ ভিড়লেই চালের দাম কমে যাবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিভিন্ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অল্প সময়ের মধ্যে চালের দাম নিম্নমুখি হবে।


বিবার্তা/সৌরভ/প্লাবন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com