শিরোনাম
নওগাঁয় বেড়েছে চালের দাম
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৪:৫৮
নওগাঁয় বেড়েছে চালের দাম
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

খাদ্যে উদ্বৃত্ত নওগাঁয় সব ধরনের চালের দাম বেড়েছে। প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা করে। চালের দরবৃদ্ধির জন্য ভারতের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আগামীতে চালের বাজার আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।


ঈদের পর পাইকারি ও খুচরা বাজারে সব ধরনের চালের দাম আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিকেজি নাজিরশাইল ছিল ৫৪-৫৫ টাকা, বর্তমানে ৫৮-৬০ টাকা, বিআর-২৮ ছিল ৪৫-৪৬ টাকা, বর্তমানে ৫০-৫২টাকা, জিরাশাইল ছিল ৫০-৫২ টাকা, বর্তমানে ৫৫-৫৬ টাকা, পারিজা ছিল ৪০-৪২ টাকা, বর্তমানে ৪৪-৪৬ টাকা, স্বর্ণা ছিল ৩৫-৩৬ টাকা, বর্তমানে ৪০-৪২ টাকা, এলসি ছিল ৪০-৪২ টাকা, বর্তমানে ৪৪-৪৬ টাকা বিক্রি করা হয়েছে। গত ১৩ দিনে প্রতিকেজি চালের দাম ৩-৫ টাকা এবং ৫০ কেজি ওজনের বস্তা প্রতি ১৫০-২০০ টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।


সরকার চাল আমদানিকে উৎসাহিত করার জন্য ২৮ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এছাড়া বাকিতে ঋণপত্র খোলার সুযোগ দেয়া হলেও সরকারিভাবে আমদানির প্রভাব চালের বাজারে পড়ছে না। এসব পদক্ষেপ সত্ত্বেও গত দুই মাসের ব্যবধানে নওগাঁয় প্রতিকেজিতে গড় ৫-৮ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।


দেশের উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার হিসেবে পরিচিত এ জেলায় চালের দরবৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে।


চাল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিগত ইরি-বোরো মৌসুমে বন্যা এবং রোগ বালাইকের কারণে সারাদেশে প্রতিবিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। সর্বসাকুল্যে ইরি-বোরো মৌসুমে প্রায় ৫০-৬০ লাখ মেট্রিকটন ধানের উৎপাদন কম হয়েছে। পরবর্তিতে কৃষকরা বুক ভার আশা নিয়ে আমনের আবাদ শুরু করলে পর পর দুবার বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দেশে ধানের সংকট সৃষ্টি হয়। এতে বেশির ভাগই চালকল এখন বন্ধ হয়ে পড়েছে ধানের অভাবে।


রিক্সা চালক সাইফুল ইসলাম বলেন, সারাদিন রিক্সা চালিয়ে ২৫০-৩০০ টাকা আয় করি। প্রতিদিন চাল আর তরকারি কিনতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। মাছ বাজারেতো যাওয়াই যায়না। এভাবে চলতে থাকলে আমরা বাচুম কেমনে।


দিনমজুর সুফিজান বলেন, ১৫দিন আগে যে চাল ৩৮ টাকায় কিনছি। এখন সেটা ৪৫ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আর পারতাছি না। সরকার যদি আমাগো কথা চিন্তা কইরা কোনো একটা ব্যবস্থা নিতো আমরা বাইচা যাইতাম।


পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তম সরকার বলেন, হাওর অঞ্চলে ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগেই দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এখন কৃষকের ঘরে ও হাটে বাজারে ধান নাই। ধান ব্যবসায়ীরা হাটে গিয়ে ধান পাচ্ছেন না। যে এলসির চাল আমদানি করা হয়েছে তা মানসম্পন্ন না। দামও বেশি। ফলে দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।


নওগাঁ জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘সরকার আমদানিকে উৎসাহিত করার জন্য ২৮ শতাংশ শুল্ক থেকে কমিয়ে ২ শতাংশে নিয়ে আসছে। কিন্তু দুংখজনক হলেও সত্য সরকার দেশে শুল্ক প্রত্যাহর করলেও প্রতিবেশি দেশ ভারত চালের দাম বৃদ্ধি করে। চালের আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চালের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সমস্যা থেকে উত্তোরণের জন্য একটা উপায় ভারতকে চালের দাম কমাতে হবে। নচেৎ এ থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব নয়।’


তিনি আরো বলেন, ‘আগামীতে যদি ইরি-বোরো মৌসুমে শতভাগ ফসল উৎপাদন হয় তাহলে বাজার স্থিতিশীল হবে। অন্যথায় বাজার নিন্ত্রয়ণ হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম। মূল্য সমস্যা হচ্ছে- ভারত দফায় দফায় চালের দাম বৃদ্ধি করছে। মোট কথা চালের বাজার ভারতের হাতে। তারাই এটি নিয়ন্ত্রণ করছে। ভারত যেভাবে চালের দাম রাখছে, আমাদের এখানে সেভাবেই চালের বাজার বহাল থাকবে।’


নওগাঁ জেলা প্রশাসক ড. মো. আমিনুর রহমান বলেন, নওগাঁ একটি খাদ্য উৎপাদন উদ্বৃত্ত জেলা। বন্যার কারণে এ জেলায় প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর ফসলের ক্ষতি হয়। বর্তমানে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে বাজার স্থিতিশীল রাখতে বাজার কর্মকর্তাকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এবং মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছি। আশা করছি শিগগিরই চালের দাম বৃদ্ধির কারণটা উৎঘাটন করতে পারব।


বিবার্তা/নয়ন/নাজিম

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com