শিরোনাম
কব্জির দিয়ে লিখে শাহ আলমের দারুণ সাফল্য
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০১৭, ২১:৩১
কব্জির দিয়ে লিখে শাহ আলমের দারুণ সাফল্য
জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না
প্রিন্ট অ-অ+

শারীরিক প্রতিবন্ধকতা তাকে দমাতে পারেনি।আঙ্গুল বিহীন হাতেই এইচএসসিতে দারুণ সাফল্য এনেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী শাহ আলম। হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী হিসেবে বাণিজ্য বিভাগ থেকে এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩.৬৭ পেয়েছেন। তার বাড়ি লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার পূর্ব বিছনদই গ্রামে।


জানা যায়, উপজেলার পূর্ব বিছনদই গ্রামের একরামুল-মরিয়ম দম্পতির ছেলে শাহ আলম। বাবা বর্গা চাষী, মা গৃহিনী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সে চতুর্থ। শিশুকালে তার দুই হাতের কবজি পর্যন্ত আগুনে পুড়ে যায়। দরিদ্র বাবা-মা চিকিৎসার ব্যয় বহন করতে না পারায় শেষ পর্যন্ত দুই হাতের সবগুলো আঙ্গুলই হারাতে হয় শাহ আলমকে। কিন্তু ছোট বেলা থেকে পড়াশোনার অদম্য ইচ্ছা ছিলো তার। স্থানীয় একটি ব্রাক স্কুল থেকে লেখাপড়া শুরু। এরপর সমাপনী পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করায় পড়ালেখার ইচ্ছে শক্তি আরো বেড়ে যায়। তবে পরিবারের অভাব-অনাটন প্রায় সময় বাঁধ সাধলেও থেমে যাননি শাহ আলম। খেয়ে না খেয়ে পড়াশোনা চালিয়ে পিএসসি, জেএসসি ও এসএসসিতে ভালো ফলাফল করে এবার এইচএসসি পরীক্ষাতেও পাশ করেছেন।


বাবা একরামুল বলেন, তার ছেলে আগুনে দুটো হাতের সবগুলো আঙ্গুল হারালেও মনোবল হারায়নি কখনো। আর তাই সে এখন লেখাপড়া করে ব্যাংকের চাকরি করবে বলে স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সাত সদস্যের অভাব-অনাটনের সংসারে চাহিদা মেটাতে গিয়ে ছেলের সেই স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত পূরণ হবে কি না? এমন শঙ্কা বাবা একরামুলের।


শাহ আলমের মা মরিয়ম বেগম বলেন, এক বছর বয়সে হঠাৎ একদিন হামাগুড়ি দেয়ার সময় উঠানের ভূষির আগুনে পড়েছিল শাহ আলম। টাকার অভাবে ওই সময় ভালো চিকিৎসা করতে না পারায় তার সবগুলো আঙ্গুল হারাতে হয়। তবে পাঁচ বছর বয়সে দু‘হাতের আঙ্গুল হারানো শাহ আলম পড়ালেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। তাই সন্তানের ইচ্ছা মেটাতেই বাধ্য হয়ে স্কুলে ভর্তি করে দেই। আজ সেই ছেলে আমার এইচএসসি পাশ করেছে। আবেগে আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, সন্তান পাশ করাতে আমার যে কি ভালো লাগছে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না।


শাহ আলম জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার চেয়েও সংসারের অভাব-অনাটনই তার পড়ালেখায় সবচেয়ে বেশি বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবে সব বাধা পেরিয়ে ভবিষ্যতে ব্যাংকার হওয়ার স্বপ্ন দেখছে অদম্য মেধাবী শাহ আলম।


হাতীবান্ধা আলিমুদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ সরওয়ার হায়াত খান এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, শারীরিক আর সাংসারিক প্রতিবন্ধকার সাথেই যুদ্ধ করে শাহ আলম কৃতিত্বের সাথে পাশ করেছে। সমাজের বিত্তবানরা তার পাশে দাঁড়ালে ভবিষ্যতে শাহ আলম আরো ভালো করবে বলে জানান তিনি।


বিবার্তা/জিন্না/মোয়াজ্জেম

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com