শিরোনাম
দিনাজপুরে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু মাহমুদা!
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০১৭, ০৪:২৭
দিনাজপুরে বিরল রোগে আক্রান্ত শিশু মাহমুদা!
শাহ্ আলম শাহী
প্রিন্ট অ-অ+

৮ বছরের শিশু মাহমুদা। যে বয়সে হেসে খেলে বেড়ানোর কথা, সে বয়সে যন্ত্রণা নিয়ে অস্থির সে। সারা শরীরে দগদগে ঘা। সেই ঘায়ে হাত ও পায়ের ২০টি আঙ্গুলই গলে পড়ে গেছে তার। হাত দিয়ে যেমন কিছু ধরতে পারে না, তেমনি পায়ে ভর দিয়ে ঠিকভাবে হাটতে পারে না মাহমুদা। বিরল এই রোগে আক্রান্ত মেয়ের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে পারছে না দরিদ্র ভ্যানচালক বাবা। তাই বাড়িতেই রেখেছেন মেয়েকে। সহযোগিতা চেয়েছেন সরকার ও বিত্তবানদের।


দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের কামদেবপুর গ্রামের দরিদ্র ভ্যানচালক আব্দুর রহিমের মেয়ে মাহমুদা। আব্দুর রহিমের ২টি মেয়ে সন্তান মাহাফুজা ও মাহামুদা। বড় মেয়ে মাহাফুজা বনগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী।


৮ বছর আগে জন্মের পর থেকেই মাহমুদার শরীরে দেখা দেয় ফসকা পড়া রোগ। পরে তা ঘা’য় পরিণত হয়। এখন তার সারা শরীরে দগদগে ঘা। দিনের পর দিন ঘা’র ফলে মাহমুদার হাত ও পায়ের আঙ্গুল গলে পড়ে গেছে। এখন হাতের মধ্যে শুধু তালু। তাই হাত দিয়ে সে কিছুই ধরতে পারে না, আবার পায়ে ভর দিয়ে চলতে পারে না ঠিকভাবে। হেসে খেলে বেড়ানোর এই বয়সে সে সবসময় ব্যস্ত থাকে চুলকানো ঘায়ের যন্ত্রণায়। ঘা ও পুষ্টিহীনতার ফলে ঠিকভাবে বেড়েও উঠেনি শিশুটি।


মাহমুদার মা সাহিদা খাতুন জানায়, জন্মের পর থেকেই তাদের মেয়ের এই ধরনের সমস্যা। অনেক চিকিৎসা করালেও কোন লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। এখন সহায়-সম্বল শেষ করে অর্থের অভাবে চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।


স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যরা জানায়, জন্মের পর থেকেই চলছে শিশুটির চিকিৎসা, কিন্তু কোন উন্নতি হয়নি। সরকারের সহযোগিতা পেলে শিশুটির চিকিৎসা সম্ভব বলে জানিয়েছেন তারা।


মা সাহিদা খাতুন বলেন, তাঁদের দ্বিতীয় সন্তান মাহামুদা ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর জন্মের পর থেকেই শরীরে দেখা দেয় ফঁসকা পড়া রোগ। তখন তার হাত-পায়ের আঙ্গুল স্বাভাবিক ছিল। পরে তা ঘা’য়ে রূপ নেয়। দিনের পর দিন ঘা’য়ের ফলে মাহমুদার হাত ও পায়ের আঙ্গুল পরে গেছে। এখন হাতের মধ্যে শুধু তালু। হাত দিয়ে সে কিছুই ধরতে পারে না, আবার পায়ে ভর দিয়ে ঠিকভাবে হাটতেও পারে না। এখন তার সারা শরীরে দগদগে ঘা।


বাবা আব্দুর রহিম জানান, দিনাজপুরে অনেক চিকিৎসা করালেও কোন লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় করতে পারেনি। এখন সহায়-সম্বল শেষ করে অর্থের অভাবে চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।


মা সাহিদা খাতুন জানান, বড় মেয়ে মাহাফুজা স্কুলে যায়, মাহামুদারও স্কুলে যাবার বয়স হয়েছে। কিন্তু তার এই এমন অবস্থা তাকে স্কুল যাওয়া থেকে বঞ্চিত করেছে। গ্রামের সমবয়সী ছেলে-মেয়েরা স্কুলে যাওয়া-আসা করে সামনে দিয়ে সে শুধু তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে আর দীর্ঘ নিঃশ্বাস নেয়। মাহমুদার সারাদিন কাটে তার নিজ বাড়িতে ও বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পূণর্ভবা নদীর বাধের পাড়ে বাঁশের তৈরি মাচানের উপর বসে।



ওই এলাকার ব্র্যাকের স্বাস্থ্যকর্মী মর্জিনা বেগম জানান, জন্মের পর থেকেই চলছে শিশুটির চিকিৎসা, কিন্তু কোন উন্নতি হয়নি। সরকারের সহযোগিতায় শিশুটির সু-চিকিৎসা হলে তার সুস্থ হয়ে উঠা সম্ভবনা রয়েছে।


বিরল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলুর রহমান জানান, বাবা-মা একই পরিবারের হওয়ায় জেনেটিক সমস্যার কারণে মাহামুদা এই বিরল “এপিডার্মোলাইসিস” রোগে আক্রান্ত হয়ে পঙ্গুত্ববরণ করেছে। যে বয়সে মাহামুদার হেসে খেলে বেড়ানো বা সহপাঠিদের সাথে স্কুলে যাওয়ার কথা, সে এখন সারা শরীরে দগদগে ঘায়ের যন্ত্রণায় নিথর হয়ে পড়েছে। রোগে আক্রান্ত মাহামুদার হাত ও পায়ের আঙ্গুল ঘায়ের কারণে নতুন করে চামড়ার আবরন তৈরি হয়েছে। ফলে হাত দিয়ে যেমন কিছু ধরতে পারে না, তেমনি পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে না সে। বাবা-মা একই পরিবারের অর্থাৎ মামাতো-ফুপাতো ভাই-বোন হওয়ায় জেনেটিক সমস্যার কারনে মাহামুদা এই বিরল “এপিডার্মোলাইসি” রোগে হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে।


এদিকে বিরল রোগে আক্রান্ত নিষ্পাপ শিশু মাহামুদা’র সরকারিভাবে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হলে সে সুস্থ হয়ে অন্য শিশুদের মত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে এমন প্রত্যাশা এলাকাবাসী ও স্বজনদের।


সকলের একটু সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হলে বদলে যেতে পারে শিশু মাহমুদার জীবন। আবারো হতে পারে হাসিখুশি মন। তাই মাহমুদার চিকিৎসায় সমাজের সকল পর্যায়ের মানুষ ও সরকারের প্রতি সাহায্য চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন তার বাবা-মা ও স্বজনরা।


তাকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা-ডাচ্ বাংলা ব্যাংক, দিনাজপুর শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর- ১৭২.১৫১.১৫২৩৯৬ এবং ডিবিবিএল মোবাইল ব্যাংকিং- ০১৭৫১-৩০০১৭৮৩ নম্বরে সাহায্যের জন্য সকলের প্রতি আবেদন করেছেন। আব্দুর রহিমের সাথে যোগাযোগের মোবাইল নম্বর-০১৭৫১৩০০১৭৮।


বিবার্তা/শাহী/পলাশ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com