শিরোনাম
১৬ বছর ধরে গৃহবন্দী লিয়াকত!
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০১৭, ০৩:০৭
১৬ বছর ধরে গৃহবন্দী লিয়াকত!
তানভীর আঞ্জুম আরিফ
প্রিন্ট অ-অ+

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে লিয়াকত আলী নামে এক যুবকের যৌবনের ১৬টি বছর কেটে গেছে শিকল আর গৃহবন্দী অবস্থায়। আজও তার দিন কাটছে তালাবদ্ধ ছোট একটি টিনসেড ঘরে। শিক্ষিত টগবগে ওই যুবকের বাড়ি কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বিক্রমকলস গ্রামে।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পৈত্রিক সম্পত্তির লোভে মুন্সীবাজার ইউনিয়নের বিক্রমকলস গ্রামের মরহুম বারহাম আলীর পঞ্চম ছেলে মো. লিয়াকত আলীকে মানসিকভাবে অসুস্থ সাজিয়ে চিকিৎসা না করিয়ে বরং একটি ঘরে গৃহবন্দী করে রেখেছে তার আপন ভাইয়েরা। বাড়ির আঙ্গিনার পশ্চিম অংশে নির্মাণ করা পাকা জেলখানার মতো তৈরি টিনসেডের ছোট ঘরটিতে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে অমানবিকভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে লিয়াকত। অসুস্থ সাজানোর শুরু থেকে দীর্ঘদিন লিয়াকত শিকলবন্দী ছিলো। বর্তমানে তাকে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। সংসারে ভাই-বোনের যৌথ পরিবারের অনেক সদস্য থাকা সত্বেও কেউ তার চিকিৎসা করাতে আগ্রহী নয়। এ অবস্থায় এখন কেবল মৃত্যুই তার একমাত্র গন্তব্য।


শনিবার বিক্রমকলস গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পৈত্রিক সম্পত্তির তার ভাগের অংশে ছোট পাকা টিন সেটের ঘরটিতে অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে বিবস্ত্র অবস্থায় গ্রীলের সামনে দাড়িয়ে রয়েছে লিয়াকত আলী। সম্পূর্ণ বিবস্ত্র অবস্থায় থাকলেও অনেক বুঝিয়ে গায়ে একটি গেঞ্জি পরানো সম্ভব হয়েছে। ওই ঘরটিতেই চলে তার আহার, নিদ্রা ও প্রাকৃতিক কাজ। পরিবারের সদস্যরা তার কাছে প্রতিদিন খাবার পৌঁছে দেয়। মলমূত্রের মাঝেই কাটছে তার অনিশ্চিত জীবন।


বিক্রমকলস গ্রামের মরহুম বারহাম আলী ও মা মৃত আমিরা বেগমের ৬ ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে ৫ম সন্তন লিয়াকত। ৬ ভাইয়ের মধ্যে তিন ভাই ব্যবসা করছেন। আর দুই ভাই মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করেন। বাড়িতে থাকা লিয়াকত সুস্থ ও স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠেন।


পরিবারের সদস্যরা জানান, ১৯৯৭ সালে সে মৌলভীবাজার টাউন সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করে। ২০ বছর বয়সে লিয়াকত বিয়ে করে উপজেলার কালাছড়ায়। বিয়ের কিছুদিনের মধ্যে স্ত্রী তাকে রেখে বাবার বাড়িতে চলে যায়। এরপর ওই বছরের শেষের দিকে লিয়াকত মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।


লিয়াকত আলীর বড় ভাই স্থানীয় মুন্সীবাজারের ব্যবসায়ী আয়ুব আলী বিবার্তাকে জানান, দীর্ঘ প্রায় ১৫-১৬ বছর থেকে সে অসুস্থ। তাকে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে একাধিবার চিকিৎসা করানো হয়েছে। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. খালিকুজ্জান ও ডা. আর কে এস রয়েলের কাছেও দীর্ঘদিন চিকিৎসা করা হয়েছে তার। কিন্তু কোন সুফল না পাওয়ায় তার সুস্থ হওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছি।


পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা হলে তারা জানান, নিজের ভাইকে কখনো শিকল দিয়ে কিংবা গৃহবন্দী করে কেউ রাখতে চাইবে না, আমরাও চাইনি। কিন্তু ছাড়া পেলে সে মানুষের উপর চড়াও হয়, কামড় দিয়ে জখম করে। কাপড় পরিয়ে দিলেও সে টেনে-হিছড়ে ছিড়ে ফেলে। সেজন্য বাধ্য হয়ে তাকে এভাবে রাখতে হয়েছে। চিকিৎসা ব্যয় বহন করা সম্ভব না বলে তাকে পাবনা মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়নি বলে জানান তারা।


তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলেন, পৈত্রিক সম্পত্তির লোভে লিয়াকতকে মানসিকভাবে অসুস্থ সাজানো হয়েছে। সুষ্ঠু চিকিৎসার অভাবে দীর্ঘদিন যাবৎ তার এ অবস্থা। তাকে উন্নত ও সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা হলে এবং তার প্রতি যত্নবান হলে সে সুস্থ হয়ে উঠবে বলে তারা মনে করেন।


এ ব্যাপারে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাম্মদ মাহমুদুল হক বিবার্তাকে জানান, বিষয়টি আমারও জানা ছিলো না। গৃহবন্দী বা শিকলবন্দী বিষয়টি সত্যিই অমানবিক। এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।


বিবার্তা/আরিফ/পলাশ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com