শিরোনাম
শেরপুরে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড়
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০১৭, ২০:৩৯
শেরপুরে পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে উপচে পড়া ভিড়
সানী ইসলাম, শেরপুর
প্রিন্ট অ-অ+

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ভ্রমনপিয়াসীদের পদভারে মুখরিত শেরপুরের পর্যটন কেন্দ্রগুলো। জেলার মধুটিলা ইকোপার্ক, গজনি অবকাশ, পানিহাতাসহ বেশ কয়েকটি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।


জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে পোড়াগাঁও ইউনিয়নে ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনায় মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের সমসচূড়া বন বীটের আওতায় ৩৮০ একর বনভূমিতে গারো পাহাড়ের মনোরম পরিবেশে সরকারীভাবে বিগত ২০০০ সালে নির্মিত হয় ‘মধুটিলা ইকোর্পাক’ তথা পিকনিক স্পট। মঙ্গলবার সকাল থেকেই এখানে সব বয়সী মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।


পরিবার নিয়ে ঘুরতে এসেছেন আব্দুস সালাম। তিনি বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। পরিচয় দিয়ে কথা হলো তার সাথে। তিনি বলেন, কাজের চাপে খুব একটা সময় পাই না। ঈদের এই ছুটিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। জায়গাটা সত্যিই খুব চমৎকার।



মধুটিলা ইকো পার্কটির প্রধান ফটক পেড়িয়ে ভেতরে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়বে সারি সারি গাছ। রাস্তার ডান পাশে খোলা প্রান্তর আর দু-পাশে রকমারি পণ্যের দোকান। সামনের ক্যান্টিন পার হলেই পাহাড়ী ঢালু রাস্তা। এর পরই হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ ও পাখির ভাষ্কর্য। পাশের আঁকাবাঁকা পথে ঘন গাছের সারি লেকের দিকে চলে গেছে। তারপর স্টার ব্রিজ পেরিয়ে পাহাড়ের চুড়ায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে আরোহণ করলেই নজর কেড়ে নেয় ভারতের উঁচু নিচু পাহাড় আর সবুজের সমারোহ। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন ভ্রমন পিয়াসীরা।


অন্যান্য সময়য়ের মতোই ঈদের মতো ছুটির দিনগুলো পর্যটকদের ভিড় বেশি হয়। ইকোপার্কে ঢুকতে জনপ্রতি ১০ টাকা, বড় বাস ৬০০ টাকা, মিনিবাস ৪০০ টাকা, মাইক্রোবাস ২০০ টাকা, মোটরসাইকেল ৩০ টাকায় টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে আলাদা আলাদা ফি দিয়ে প্যাডেল বোট চালানো, পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে উঠা, শিশু পার্কে প্রবেশের সুযোগও রয়েছে। এখানে একটি রেস্ট হাউজও আছে। ভ্যাটসহ ৪ হাজার ৭০২ টাকার বিনিময়ে পাহাড়ের চূড়ায় চার কক্ষ বিশিষ্ট শীতাতাপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) সুসজ্জিত মহুয়া নামের রেস্ট হাউজটি শুধুমাত্র দিনের বেলায় ব্যবহার করা যাবে। এ রেস্ট হাউজ ব্যবহার করতে চাইলে মধুটিলা রেঞ্জঅফিস, ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিসে বুকিং দিতে হয়। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ী পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, মিনি চিড়িয়াখানা, বন্য প্রাণীর বিরল প্রজাতি পশু-পাখির ভাস্কর্য। আরো আছে জীবন্ত হরিণ, ঔষধি ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির বৃক্ষ এবং ফুলসহ বিভিন্ন রঙ্গের গোলাপের বাগান।


এদিকে সবুজের মাঝে হারিয়ে যেতে অনেকে ছুটে এসেছেন নালিতাবাড়ী উপজেলার রামজচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের পানিহাতায়। গারো পাহাড়ে অবস্থিত পানিহাতায় আসলে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কিছু অংশ দেখা যায়। এ স্থানটিতে এখনো পর্যটকদের জন্য কোন পার্ক গড়ে না উঠলেও এখান সবুজ প্রকৃতি সবার মন কেড়ে নিবে।


বন্ধুদের সাথে ঘুরতে এসেছেন স্নিগ্ধা। তিনি বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক করছেন। পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, আমরা ১০ বন্ধু এখানে এসেছি। জায়গাটা সত্যি খুব সুন্দর। খুব উপভোগ করছি। সত্যি চোখে না দেখলে এর সুন্দর বর্ণনা করা কঠিন।
শেরপুরের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটক কেন্দ্র গজনি অবকাশ। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন শেরপুরের জেলা প্রশাসক আতাউর রহমান মজুমদার গজনীর গহিন জঙ্গলের এই পাহাড়ি চূড়ায় গজনী অবকাশ কেন্দ্রের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। শেরপুর জেলা সদর থেকে অবকাশ কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। গাড়িতে অবকাশ কেন্দ্রে পৌঁছাতে প্রায় ৪৫ মিনিট সময় লাগে। যানজটমুক্ত যাতায়াতের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ উন্নত। পুরোটাই পাকা রাস্তা। তাই পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে গজনি। ঢাকা থেকে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টার রাস্তা।


দুই মেয়ে আরিফা ও লিজাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন আসলাম চৌধুরী। গজনি অবকাশ কেন্দ্রের বেশ প্রশংসা করে তিনি জানালেন, জায়গাটা তার বেশ পচ্ছন্দ। তাই সময় পেলেই তিনি এখানে চলে আসেন।


কথা হলো পলাশ চন্দ্রের সাথে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে স্নাতক করছেন। বাবা, মা ও ছোট বোন পূজাকে নিয়ে ঘুরতে এসেছেন পলাশ।


তিনি বলেন, রোযার সময়ই পূজা আমার কাছ আবদার করেছিলো। তাকে এখানে নিয়ে আসতে হবে। তাই ওর আবদার রাখতেই এখানে আসা। জায়গাটা খুবই সুন্দর। সময়টা ভালোই কাটছে।


অবকাশ কেন্দ্রের বিভিন্ন স্পটে দর্শনার্থীদের জন্য নান্দনিক কারুকার্য ও শৈল্পিকতার স্পর্শে নির্মিত হয়েছে বন্যহাতী, ডাইনোসর, জিরাপ, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, মৎস্য কুমারী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতি, দৃষ্টিনন্দন পদ্মশিরি, গারো মা ভিলেজ, মাটির নিচে সুড়ঙ্গেপথে পাতাল পুরী। এছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ভাস্কর্য। পাহড়ের মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখার জন্য পাহাড়ের চূড়ায় নির্মিত হয়েছে সুউচ্চ পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। পাহাড়ের নিচ থেকে টওয়ারের উচ্চতা প্রায় ১৬৫ ফুট। টাওয়ারে উঠলে দেখা যাবে বাংলাদেশ ও ভারতের মেঘালয় প্রদেশের রাশি রাশি পর্বত মালাসহ দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ বনভূমির ছোট বড় পাহাড়ি টিলা।


এখানে শিশুদের জন্য রয়েছে, চুকুলুপি চিলড্রেন পার্ক। পার্কে রয়েছে গজনী এক্সপ্রেস ট্রেন, নাগর দোলা, মেরী গো রাউন্ড। অবকাশ কেন্দ্রের ৩ তলা ভবনের ৮টি গেস্টরুমে আগত অতিথিদের জন্য সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভাড়া দেয়া হয়। এখানকার পাহাড়ি ঝরনাকে কৃত্রিম লেকে পরিণত করা হয়েছে।


বিবার্তা/সানী/নাজিম

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com