শিরোনাম
থামছে না সুন্দরবনের হরিণ শিকার
প্রকাশ : ০৫ মে ২০১৭, ২০:২৬
থামছে না সুন্দরবনের হরিণ শিকার
সেলিম হায়দার, সাতক্ষীরা
প্রিন্ট অ-অ+

‘বাঘের লাফ বিশ হাত, হরিণের লাফ একুশ হাত’—সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় এই প্রবাদ বাক্যটি বহুল প্রচলিত। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাঘের থাবা থেকে রেহাই পেলেও শিকারির ফাঁদ ও গুলি থেকে রেহাই পাচ্ছে না সুন্দরবনের মায়াবী চিত্রল হরিণ।


সম্প্রতি সুন্দরবনে হরিণ শিকারিরা আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সুন্দরবনের আশপাশের এলাকাগুলোতে তাই নিয়মিতই বিক্রি হচ্ছে হরিণের মাংস। দিন দিন এই প্রবণতা বাড়ছেই। তবে বন বিভাগের দাবি, শিকারিদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান অব্যাহত আছে।


স্থানীয়রা বলছেন, এক শ্রেণির ভোজনবিলাসী মানুষের কাছে হরিণের মাংসের ব্যাপক কদর রয়েছে। তাছাড়া, কেউ কেউ শৌখিনতার নামে হরিণের চামড়া ও শিং নিজেদের সংগ্রহে রাখতে, বিশেষ করে বাড়ির দেয়ালে টাঙিয়ে রাখতে পছন্দ করেন। এর জন্য তারা চড়ামূল্য দিতেও দ্বিধাবোধ করেন না। ফলে শিকারিরা অর্থের লোভে হরিণ শিকারে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে।


৩ মে, বুধবার ভোরে সুন্দরবন সংলগ্ন কয়রা ও আংটিহারা এলাকা থেকে দু’টি নৌকাসহ ৫১ কেজি হরিণের মাংস ও হরিণ শিকারের ফাঁদ জব্দ করেছে কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন (মংলা সদর দফতর)।


কোস্টগার্ডের অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার এম ফরিদুজ্জামান বলেন, ‘হরিণের মাংস ও হরিণ শিকারের ফাঁদ জব্দ করা হলেও এর সঙ্গে জড়িতরা পালিয়ে যায়। তাদের ধরা যায়নি।’ পরে জব্দ করা হরিণের মাংস বন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয় বলেও জানান তিনি।


বনসংলগ্ন এলাকায় স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হরিণের মাংস ব্যবসায়ীরা পেশাদার শিকারিদের অগ্রিম দাদন দিয়ে মাংস এনে নানা কৌশলে বিক্রি করছে। স্থানীয় কয়েকটি গ্রামে নিয়মিতই বসছে হরিণের মাংস বেচাকেনার গোপন হাট। এসব হাটে প্রতিকেজি হরিণের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৩শ থেকে ৪শ টাকায়।


মংলার জয়মনি, চিলা, বাঁশতলা, বৌদ্ধমারী, কাটাখালী, মোড়েলগঞ্জ, শরণখোলা, ধানসাগর, বগি, দাকোপের ঢাংমারী, বানিশান্তা, খাজুরা, সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ, খুলনার কয়রা, আংটিহারাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন গ্রামগুলোতে সুযোগ বুঝে শিকারিরা অনেক সময় প্রকাশ্যেই হরিণের মাংস বিক্রি করে থাকে।



মংলার জয়মনির স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফাঁদ, বিষ, টোপ, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেও হরিণ শিকার চলছে। কোনো কোনো সময় শিকারি চক্র জেলেদের ছদ্মবেশে বনের গহীনে গিয়ে হরিণ শিকার করে তা গোপনে লোকালয়ে নিয়ে আসে। পরে হরিণের মাংস, চামড়া, শিং কৌশলে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার করা হয়।’


নজরুল ইসলাম আরো বলেন, ‘সংঘবদ্ধ শিকারি চক্রের লোকালয়ে নির্দিষ্ট এজেন্ট নিয়োজিত রয়েছে। এসব এজেন্টের মাধ্যমে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে হরিণের মাংস সংগ্রহ করা যায়। অনেক সময় টাকার পরিমাণ বেশি হলে এজেন্টরা সরাসরি রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে হরিণের মাংস পৌঁছে দিয়ে আসে।’


খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা চৌধুরী আমির হোসেন বলেন, ‘আমরা হরিণের মাংস বিক্রি বা পাচারের খবর পেলে সঙ্গে সঙ্গেই তাদের আটক করে আইনের আওতায় নিয়ে আসছি।’


তিনি বলেন, ‘বনকর্মীদের কাজের গতি ও বন ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়নের জন্য সুন্দরবনকে গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) আওতায় এনে ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। এরই মধ্যে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শিগগিরই সব রেঞ্জে এই ব্যবস্থা চালু হবে। এর ফলে বনকর্মীদের কাজের গতিবিধি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। শিকারি চক্রের গতিবিধি শনাক্ত করাও সহজ হবে।’


বিবার্তা/সেলিম/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com