শিরোনাম
রাউধাকে হত্যার ফের অভিযোগ বাবার
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০১৭, ১৩:৩১
রাউধাকে হত্যার ফের অভিযোগ বাবার
রাজশাহী ব্যুরো
প্রিন্ট অ-অ+

রাজশাহীর ইসলামী ব্যাংক মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও মালদ্বীপের মডেল রাউধা আতিফকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে আবারো অভিযোগ করেছেন তার বাবা ডা. মোহাম্মদ আতিফ। রবিবার সকালে রাজশাহী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ অভিযোগ করেন। ডা. আতিফের দাবি, তার মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।


লিখিত বক্তব্যে ডা. মোহাম্মদ আতিফ বলেন, ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করলে যেসব চিহ্ন চোখে-মুখে ও শরীরের ফুটে ওঠে তার কোনোটিই পাওয়া যায়নি রাউধার শরীরে। আবার শ্বাসরোধ করে হত্যা করলে যেসব আলামত ফুটে ওঠে তার সবগুলোই রয়েছে রাউধার শরীরে।


তিনি বলেন, তার মেয়ে যে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে তার কোনো প্রমাণই নেই। আদৌ তার মেয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে ছিল কি না সেটাও পরিষ্কার নয়। কারণ, একজনও দেখেনি যে সে ফ্যানে ঝুলে আত্মহত্যা করেছে। তার মৃত্যুর পর যে ছবি পাওয়া যায়, তা বিছানায় শোয়ানো অবস্থায়। ছবি না থাকলে কীভাবে বাবা হিসেবে আমি বিশ্বাস করবো যে আমার মেয়ে ফ্যানে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা করেছে?


আতিফ বলেন, ‘আত্মহত্যা করলে স্যালিভা বেরিয়ে আসে। মূত্র বেরিয়ে আসে। হাত-পা ছড়ানো থাকে। কিন্তু রাউধার হাত মুষ্টিবদ্ধ ছিল। সাধারণত শ্বাসরোধ করা হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। এছাড়া রাউধার গলায় হাতের আঙ্গুলের স্পষ্ট ছাপ রয়েছে। তার গলায় যে দাগ রয়েছে, তা সুতি কাপড়ের ওড়নার নয়। ফলে সুতি কাপড়ের যে ওড়না দিয়ে রাউধা গলায় ফাঁস দিয়েছে বলে মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছে তা মিথ্যা।’


আতিফ সুনির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন তুলেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে। তিনি বলেন, রাউধার গলায় যে চিহ্ন রয়েছে তা প্রকৃতপক্ষে কিসের তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য এক্স-রে এমনকি এমআরআই করা প্রয়োজন। কিন্তু তা করা হয়নি। এটা ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকদের গাফিলতি এবং প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা।


ড. আতিফ সংবাদ সম্মেলন থেকে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি বলেন, সাধারণ পুলিশ ও ডিবি তদন্তে গাফিলতি করেছে। তবে পুলিশের অপরাধ বিভাগ (সিআইডি) গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। প্রকৃত ঘটনা বের করতে গণমাধ্যমেরও সহযোগিতা প্রয়োজন।


গত ২৯ মার্চ দুপুরে রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ছাত্রী হোস্টেলের ২০৯ নম্বর কক্ষ থেকে রাউধার লাশ উদ্ধার করা হয়। তখন পুলিশ জানিয়েছিল, সিলিং ফ্যানের সঙ্গে কাপড় বেঁধে গলায় ফাঁস দিয়ে রাউধা আত্মহত্যা করে। তবে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই তার সহপাঠীরা রাউধার ঝুলন্ত লাশ নামিয়ে ফেলে।


গত ৩০ মার্চ রাউধার লাশ দেখতে রাজশাহীতে আসেন মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত আয়েশাথ শান শাকির এবং তার মা-বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। ৩১ মার্চ মেডিক্যাল বোর্ড গঠনের মাধ্যমে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। রাউধা আত্মহত্যা করেছে উল্লেখ করে বোর্ড ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। পরে রাজশাহীতেই রাউধার লাশ দাফন করা হয়।


মালদ্বীপের নাগরিক রাউধা আথিফের জন্ম ১৯৯৬ সালে ১৮ মে। তিনি রাজশাহী ইসলামী ব্যাংক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। রাউধা পড়ালেখার পাশাপাশি মডেলিং করতেন। ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে বিশ্বখ্যাত ‘ভোগ’ ম্যাগাজিনের ভারতীয় সংস্করণে আরও পাঁচ মডেলের সঙ্গে রাউধাও ছিলেন।


রাউধার বাবা তার মেয়েকে হত্যার অভিযোগে মামলা করলেও ময়নাতদন্ত এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাউধা আত্মহত্যা করেছেন। এমনকি মালদ্বীপের দুই পুলিশ কর্মকর্তা রাজশাহীতে এসে ঘটনা তদন্ত করে গেলেও তারা রাউধাকে হত্যার কোনো প্রমাণ পায়নি।


এ অবস্থায় রাউধার লাশের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে সিআইডি। এ জন্য সোমবার কবর থেকে রাউধার লাশ তোলার সম্ভাবনা রয়েছে। ময়নাতদন্ত করতে এরই মধ্যে তিন সদস্যর একটি মেডিকেল বোর্ডও গঠন করা হয়েছে।


বিবার্তা/রিমন/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com