শিরোনাম
ছত্রাক : বোরো ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০১৭, ১৫:১১
ছত্রাক : বোরো ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা
যশোর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

যশোরে বোরো ধানের ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। যশোরের মণিরামপুর, কেশবপুর, শার্শা ও অভয়নগর উপজেলায় ছত্রাকজনিত ব্লাস্ট রোগের আক্রমণে পরিপক্কতা আসার আগেই জমির ধানের থোড় শুকিয়ে চিটা ধরেছে। ক্ষেতের ধান নষ্ট হওয়ায় ধার-দেনা করে আবাদ করা কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।


স্থানীয় কৃষি অফিস বলছে, তাপমাত্রা ওঠা-নামা করায় এমনটি হয়েছে। আগে ছত্রাক লাগা ধান নিয়ে কিছু করা না গেলেও নতুন করে যাতে এই রোগ না লাগে সেজন্য তারা কাজ করছেন। এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ- সংশ্লিষ্ট কৃষি অফিসের আগাম পরামর্শ পাননি তারা।


কেশবপুর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আছানুর রহমান, নজরুল ইসলাম, মজনুর রহমান ও প্রকাশ বিশ্ব জানান, এ রোগের লক্ষণ হলো- ধান গাছের প্রথম পত্রফলকে অতি ছোট ডিম্বাকৃতির দাগ পড়া, শীষ বের হওয়ার সময় শীষের গোড়ায় কালো দাগ পড়া। এ রোগে আক্রান্ত ধানের শীষ খাদ্য গ্রহণ ক্ষমতা হারিয়ে শীষ সাদা হয়ে মরে যায়। এ রোগের কারণে জমির সমস্ত ধান নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে সময়মত ছত্রাকনাশক স্প্রে করে এ রোগ সহজেই দমন করা যায়। দিনে গরম আর রাতে শীত থাকায় এ রোগ দেখা দেয়। এর প্রতিরোধে প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলার ৮ উপজেলায় এবার এক লাখ ৫১ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে মণিরামপুর উপজেলার ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ হয়েছে। এতে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু ব্লাষ্ট রোগের আক্রমণে ধানের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস পাবে।
সরেজমিনে উপজেলার নেহালপুর, কুলটিয়া ইউনিয়নের কাজিয়াড়া ও আম্রঝুটা বিলে ধানের থোড় শুকিয়ে যাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে। কৃষি অফিসের লোক ভেবে আশে-পাশের একাধিক ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক এসময় হাজির হন।
কাজিয়াড়া গ্রামের ওলিয়ার রহমান বলেন, তিনি এনজিও থেকে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে চাষকৃত তার প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমির ধানের থোড় নষ্ট হয়ে গেছে। ধান বিক্রি করে ঋণ শোধ করবেন বলে তিনি আশায় বুক বেঁধেছিলেন। এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করা নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তিনি। শুধু ওলিয়ার নয়, ওই এলাকার ইকবাল, জালাল, জব্বারসহ অসংখ্য কৃষকের একই অবস্থা।


এরপর আম্রঝুচটা মাঠে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। এ সময় মাঠে উপস্থিত সাতগাতি গ্রামের আমির হোসেন বলেন, এই মাঠের বারো আনা (চার ভাগের তিন ভাগ) ধানের থোড় শুকিয়ে ধানে চিটা ধরেছে। একই গ্রামের বিভূতি পাল অভিযোগ করেন, এমন ক্ষতি হলেও আজ পর্যন্ত কৃষি অফিসের কারো দেখা মেলেনি। অবশ্য উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার তরফদার এ অভিযোগ স্বীকার করেননি। তার দাবি, কৃষকদের অনেক আগে থেকেই সতর্ক করা হয়েছিল। তিনি ক্ষেতে নাটিভো, ফিলিয়া, ট্রোপার, প্রভিফেন জাতীয় ছত্রাকনাশক ওষুধ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।


স্থানীয় কৃষকরা আরও জানান, উপজেলার তারুয়াপাড়া, প্রতাপকাটি, ঢাকুরিয়া, সুবোলকাটিসহ কয়েকটি গ্রামের মাঠের ধানের একই অবস্থা।


শার্শায় চলতি বোরো মৌসুমে ২১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ধান আবাদ করা হয়েছে। এরমধ্যে এক হাজার ২০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি বাসমতি ধান রয়েছে। ‘ব্লাস্ট’ নামে এক ধরনের ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে বিঘা বিঘা জমির বাসমতি ধান নষ্ট হয়ে গেছে।


উপজেলার বেনাপোল, বাহাদুরপুর, লক্ষ্মণপুর, ডিহি, শার্শা ও উলাশীর বিভিন্ন এলাকায় রোগাক্রান্ত জমি বেশি। ধান গাছের পাতায় ফোটা ফোটা কালো দাগ পড়ে এবং পাতা লালচে হয়ে যাচ্ছে।



লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের চাষি ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, ‘তিন বিঘা জমিতে বাসমতি ধান চাষ করেছি। পুরোটাই আক্রান্ত হয়েছে ছত্রাকে। কোনো ওষুধ দিয়েও সুফল পাচ্ছি না। স্বরুপদহ গ্রামের চাষি মজিবর রহমান, বাবলু, শাজাহান, গয়ড়া গ্রামের শওকত আলী বাসমতি ধানের আবাদ করেছেন। তাদের প্রত্যেকের জমিতে ‘ব্লাস্ট’ ছত্রাকের আক্রমণ ঘটেছে।
এদিকে অভয়নগর উপজেলায় একই রোগে ধানগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। উপজেলার ধোপাদী গ্রামের জালাল হোসেন জানান, বিঘা প্রতি সেচ দিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। অথচ ধানে চিটা হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু আমার জমির ধান নয়, আশপাশের বেশিরভাগ জমির ধানগাছ শুকিয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি স্বীকার করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ ফজলুর রহমান জানান, কিছু জমিতে ছত্রাক লেগেছে। তবে আর যাতে না লাগে সে জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। সতর্ক করে লিফলেট বিতরণ করছি আমরা।


এ ব্যাপরে যশোর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক চন্ডি কুমার দাস জানান, যশোর জেলায় মোট আবাদকৃত জমির মধ্যে মাত্র ১২ থেকে ১৫ হেক্টর জমিতে ছত্রাক লেগেছে। আবহাওয়া জনিত কারণে এমনটি হয়েছে। তবে নতুন করে আর যাতে না লাগে সেজন্য কৃষি বিভাগ কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছে। মাঠে মাঠে সতর্কতামূলক লিফলেট বিতরণ চলছে।


বিবার্তা/তুহিন/পলাশ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com