লক্ষ্মীপুরের ৪টি আসনে নৌকার সামনে আ.লীগের ‘শক্তিশালী’ স্বতন্ত্র প্রার্থী
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৮:১৯
লক্ষ্মীপুরের ৪টি আসনে নৌকার সামনে আ.লীগের ‘শক্তিশালী’ স্বতন্ত্র প্রার্থী
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনের তিনটি আসনে আওয়ামী লীগ নেতারা দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে লড়ছেন। বাকী একটি আসন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে মহাজোটের শরীকদের। ওই আসনেও নৌকা প্রতীকে ভোট করছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের (ইনু) প্রার্থী।


তবে সবগুলো আসনেই নৌকার বিপরীতে রয়েছে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। এদের মধ্যে একাধিক প্রার্থী রয়েছে নৌকার প্রার্থীর থেকেও শক্তিশালী। আর আওয়ামী লীগের একটি অংশও কাজ করছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হয়ে। ফলে জেলার এ চারটি আসনে নৌকার জয়ে বাধা হয়ে দাঁড়াবে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।


বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর-৩ এবং লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় চলছে নতুন হিসেবে-নিকেশ।


লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে নৌকা নিয়ে লড়ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. আনোয়ার হোসেন খাঁন। তার বিপরীতে ঈগল প্রতীক নিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন। যুবলীগ নেতা হওয়ার সুবাদে উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের যুবলীগের বড় একটি অংশ থাকছে পবনের পক্ষে। অন্যদিকে জেলা এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সাবেক বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতাও তাকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এদের অনেকেই মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে পবনকে সমর্থন যোগাচ্ছেন। পবনের নির্বাচনী জনসভায় যোগ দিচ্ছেন তারা। আর স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে ভেদাভেদ থাকায় পবনের হয়ে ভোটের মাঠে থাকবেন দলের একটি অংশ। ফলে নৌকার বিজয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কিছুটা বাঁধা হয়ে দাঁড়াবেন।


লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদর আংশিক) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। তিনি বর্তমান সংসদ সদস্য। এ আসনে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন আলোচিত অর্থ ও মানব পাচার মামলায় কুয়েতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলের স্ত্রী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম। পাপুল এ আসনের স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ছিলেন। তখন তৃণমূল আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ ছিল তার সমর্থনে। সংসদ সদস্য থাকাকালীন এলাকায় জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তার স্ত্রী সেলিনাও ছিলেন তার সাথে। ফলে তিনিও কিছুটা জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। সেটাকে কাজে লাগানোর উদ্দেশ্যে এবার স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন সেলিনা ইসলাম। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচনী মাঠে শক্ত অবস্থান জানান দিয়েছেন।


পাপুলের কারাদণ্ডের পর এ আসনটি শূন্য হলে বর্তমান সংসদ সদস্য নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন উপনির্বাচনে নৌকা নিয়ে জয়ী হন। এবার পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হওয়ায় কপালে চিন্তার ভাঁজ নয়নের। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পক্ষে দলীয় নেতাকর্মীরা কাজ করলে নির্বাচনের পর তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ারও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য রাখছেন।


লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু ভোট করছেন নৌকা প্রতীক নিয়ে। তার সামনে রয়েছে শক্ত একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী। মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ সাত্তার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় ‘দুশ্চিন্তায়’ ফেলে দিয়েছে পিংকুকে। ফলে পিংকু তার নির্বাচনি জনসভায় সাত্তারকে স্বতন্ত্র প্রার্থী না বলে দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী আখ্যা দিচ্ছেন। দলীয় যে সকল নেতাকর্মীরা সাত্তারের পক্ষ নিয়ে নির্বাচনি মাঠে আছেন, তাদের বিরুদ্ধেও দলীয় ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।


সাত্তার জেলা বা থানা আওয়ামী লীগের নেতা না হলেও এলাকায় তার একটি জনসমর্থন রয়েছেন। স্থানীয় বেশ কয়েকজন বর্তমান এবং সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ভোট করছেন তার পক্ষে। রয়েছেন বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও। নিজের নামে গড়ে তোলা একটি ট্রাস্টের মাধ্যমে এলাকার গরিব-দুঃখীদের দান-অনুদান করায় জনসমর্থন রয়েছে তার। সাত্তার ট্রাক প্রতীক নিয়ে এখানে নৌকার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।


লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলীকে। কিন্তু জোটগত কারণে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদের (ইনু) প্রার্থী মোশাররফ হোসেনের নৌকা ছড়ার সৌভাগ্য হয়। ফলে নির্বাচনী মাঠ ছেড়ে সরে দাঁড়াতে হয়েছে লাইলীকে। এ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। ফরিদুন্নাহার লাইলী প্রথমে নৌকার মনোনয়ন নিয়ে মাঠে নামলেও তৃণমূল আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তাকে সমর্থন না দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহকে সমর্থন জুগিয়েছেন। ছিলেন দুই উপজেলার বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিও। নৌকার মাঝি পরিবর্তন হওয়ায় জাসদের এ নেতার পক্ষে তেমন একটা সমর্থন জোগাতে দেখা যায়নি তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। আর উপকূলীয় এলাকার নদী বাঁধ নিয়ে কাজ করায় সাধারণ লোকজনের সমর্থন রয়েছে তার প্রতি। সবমিলিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল্লাহর পক্ষে নির্বাচনি বাতাস বইছে। আর একই আসনে আওয়ামী লীগের আরেকজন নেতা ইস্কান্দার মির্জা শামীমও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে মাঠে আছেন। এতে নৌকায় ছড়ে বসা জাসদ নেতা মোশাররফ হোসেনের জয়ে বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়াবেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র দুই প্রার্থী।


একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি ছিল মহাজোটের আরেক শরীক বিকল্প ধারার মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নানের কাছে। এবার তার প্রার্থীতা বাতিল হয়ে যায়। উচ্চ আদালতে গিয়েও প্রার্থীতা টিকাতে পারেননি তিনি।


লক্ষ্মীপুরের চারটি আসনে আওয়ামী লীগ এবং জোটের প্রার্থীসহ মোট ৩১ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।


৪টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৬ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে নারী ভোটার ৭ লাখ ২২ হাজার ৩৯৯ ও পুরুষ ভোটার ৭ লাখ ৭৪ হাজার ১৯৩, হিজড়া ভোটার রয়েছে ৪ জন। ভোট কেন্দ্র সংখ্যা ৪৭৭ টি। ১৪৪০.৩৯ বর্গ কিলো মিটারের আয়তনে গঠিত ৪টি পৌরসভা ও ৫৮ টি ইউনিয়ন নিয়ে ৪টি আসন।


নির্বাচনে ৪টি আসনে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণায় জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ। দিন রাত ভোটারদের ধারে ধারে ছুটছেন প্রার্থীরা।


বিবার্তা/সুমন/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com