দু’দিনের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ধুয়ে গেলো কৃষকের স্বপ্ন
প্রকাশ : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৬:২১
দু’দিনের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ধুয়ে গেলো কৃষকের স্বপ্ন
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের প্রভাবে চুয়াডাঙ্গায় টানা দু’দিনের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির কারণে মাঠের ফসলি জমিতে পানি জমে গেছে। ফলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন এ অঞ্চলের চাষীরা।


গত বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত অবধি বিরতিহীন বৃষ্টি চলতি মৌসুমের বোরো বীজতলা, আলু, সরিষা, ভুট্টা ও পেঁয়াজের ক্ষেত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


জানা গেছে, জেলার কৃষকরা বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ করেছিল। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টিতে ধুয়ে গেছে তাদের সে স্বপ্ন। টানা বৃষ্টিতে আলু চাষে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আলুর ক্ষেতে পানি জমে আছে। ফলে ক্ষেতের আলু অর্ধেক অংশ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যা থেকে ফলনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।


পানি জমে নষ্ট হয়ে হচ্ছে মাঠের পেঁয়াজ। বৃষ্টির প্রভাবে পেঁয়াজ মাটিতে নুয়ে পড়েছে। এতে পেঁয়াজে ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কৃষকরা এখন রয়েছে দুশ্চিন্তায় এখন।


কয়দিন পরই বোরো বীজতলা প্রস্তুতের কাজ শেষ করে তা রোপণ করা হবে জমিতে। কিন্তু এই বৃষ্টির আঘাতে বোরো বীজতলা এখন পানির নিচে ডুবে আছে। এমন ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষক তার ভাবনার কুল কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না।


ফলন কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ভুট্টা ও সরিষা আবাদেও। এ ফসল কৃষকের ঘরে উঠতে উঠতে কাঙ্খিত লাভের আশা ছেড়ে দিয়েছেন তারা।


আলিম নামের এক কৃষক বলেন, এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ ছিল। মাঠে এসে দেখছি বৃষ্টির পানিতে সব পেঁয়াজের গাছ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। এতে পেঁয়াজের ফলন কম হবে। বাজারে ভালো দাম পাবো না। সবই লোকশান।


মফিজুল নামের আরেক কৃষক বলেন, এই বৃষ্টিতে আলুতে ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। আলু জমিতে নষ্ট হয়ে চারা ফুটবে না। ফলন কম হবে ভুট্টা ও সরিষায়। বোরো বীজতলায় পানিতে ডুবে গেছে। এতে চারা রোপনের সময় দুর্ভোগ হবে। এ অসময়ের বৃষ্টিতে মাঠ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে গেল।


এছাড়া এই বৃষ্টির প্রভাবে অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি কাটানো এখন দুষ্কর কৃষকদের পক্ষে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার জীবননগর উপজেলার হাসাদাহ ইউনিয়নের বৈদ্যানাথপুর, বাঁকা ইউনিয়নের মিনাজপুরসহ ৮টি ইউনিয়নে তিন দিনের বৃষ্টিতে আলুর খেতে প্রচুর পানি জমে গেছে। এছাড়া ফসলের মাঠগুলোতে সরিষা, বোরো ধানের বীজতলা, পেয়াজ, ভুট্টাসহ শীতকালীন সবজি খেতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।


হাসাদহ ইউনিয়নের বৈদ্যানাথপুর গ্রামের এক কৃষক জানান, ৫ বিঘা জমিতে তিনি আলুচাষ করেছেন। বুধবার থেকে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় জমিতে হাটু পানি বেধে থাকায় সব শেষ হয়ে যাবে।


বাঁকা ইউনিয়নের এক কৃষক জানান, চলতি বছরে ২ একর জমিতে আলু, পেয়াজ চাষাবাদ করেছেন তিনি। সার-ওষুধের দাম বেশি হওয়ায় খরচ হয়েছে ব্যাপক। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে ক্ষেতে পানি জমে গেছে। পেয়াজ বীজ ও আলু বীজ পঁচে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধারদেনা করে চাষাবাদ করেছি।


চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রতিবারই কিছু না কিছু ক্ষতি হয়। প্রতিবারের মতো এবারও কৃষকদের ফসল উৎপাদন কিছুটা কম হবে। এ তাছাড়া ক্ষতি কাটাতে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।


বিবার্তা/আসিম/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com