চট্টগ্রাম জুড়ে যত্রতত্র পার্কিং, ভোগান্তিতে নগরবাসী
প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:৫৭
চট্টগ্রাম জুড়ে যত্রতত্র পার্কিং, ভোগান্তিতে নগরবাসী
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পণ্যবাহী ট্রাক ও অন্যান্য গাড়ি রাখার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই টার্মিনাল ও পার্কিং। সড়কের ওপরই পার্ক করে রাখা হয় বন্দরের কাজে ব্যবহৃত অসংখ্য ট্রাক। এছাড়া নগরীতে যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে অবৈধ বাজার। বাজারের পাশেই গাড়ি পার্কিং। মহানগরীতে মোট সড়কের পরিমাণ প্রায় ৬০০ কিলোমিটার প্রায়।


দেখা গেছে, বহদ্দারহাট-শাহ আমানত সেতু সংযোগ সড়কের দুপাশে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অস্থায়ী বাজারের কারণে ছোট ও স্বল্প গতির যানবাহনকে মূল সড়কে চলাচল করতে হচ্ছে। চট্টগ্রামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা আরাকান সড়ক। কালুরঘাট বিসিক, কালুরঘাট ভারী শিল্প এলাকা ও মোহরা ভারী শিল্প এলাকার যানবাহন চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। সড়কটির উভয় পাশে অস্থায়ী বাজার বসে প্রতিদিন। এ বাজারের কারণে সপ্তাহের দুইদিন তীব্র যানজট লেগে থাকে। সম্প্রতি সম্প্রসারণ ও সংস্কার করা সত্ত্বেও বাজারটির কারণে সড়কটি দ্রুত নষ্ট হচ্ছে বলে দাবি করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রকৌশলীরা।


চট্টগ্রাম শহরের প্রধান ধরা হয় শেখ মুজিব রোডকে। সড়কটির উভয় পাশে বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলোর অধিকাংশেরই নিজস্ব পার্কিং না থাকায় সড়কই ব্যবহার হচ্ছে পার্কিং স্পট হিসেবে। এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পণ্য সড়কের ওপর রাখায় এবং মোটর পার্টস ও গ্যারেজ মালিকরা সড়কের পাশে যানবাহন রেখে কাজ করায় নিত্য যানজট লেগেই থাকে। জিইসি মোড় থেকে বহদ্দারহাট পর্যন্ত সিডিএ এভিনিউ সড়কের উভয় পাশে গাড়ির শো-রুম ও গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কারণে চার লেনের এ সড়কের অধিকাংশই বেদখল হয়ে পড়েছে। এ কারণে স্বল্প দূরত্বের পথ পেরোতেও দীর্ঘ সময় লাগছে।


এছাড়াও চট্টগ্রামের শতাধিক বড় শপিং মলের অধিকাংশের নিজস্ব পার্কিং সুবিধা নেই। পার্কিংয়ের স্থলে দোকান করে রাখায় শপিং মল বা বাণিজ্যিক স্থাপনাগুলোয় আসা যানবাহন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করে। এদিকে চট্টগ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬ হাজার পণ্যবাহী ভারী যানবাহন চলাচল করলেও পর্যাপ্ত ট্রাক টার্মিনাল নেই। এ কারণে চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি সড়ক ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের দখলে থাকে। সমন্বিত ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া চট্টগ্রামের সড়ক ব্যবস্থাপনা সুশৃঙ্খল হবে না বলে হতাশা প্রকাশ করেছেন একাধিক সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।


দুই বছর আগে নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকায় নিজস্ব বিপণিবিতান শাহ আমানত সিটি করপোরেশন সুপার মার্কেটের গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান নির্মাণ করছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এ উদ্যোগে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিপণিবিতানের ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায় দোকান হলে রাস্তায় গাড়ি পার্কিং বেড়ে যাবে। এতে তীব্র যানজট সৃষ্টি হবে নগরীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা আমতল-জুবিলী রোডে। ঠিকই এখন এ সড়কে যানজট।


এরমধ্যে গত বছরে চট্টগ্রাম নগরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ‘টাকার বিনিময়ে পার্কিং’ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। পরে সিএমপি ট্রাফিক বিভাগের আপত্তিতে সরে আসেন। কেননা, সড়কে এমন পার্কিং হলে আরও বাড়বে নগরীর যানজট। বাড়বে ভোগান্তি। কারণ আগে পরিকল্পনা নেয়া দরকার বলে মনে করেন সিএমপি। না হয় যেখানে সেখানে গাড়ি পার্কিং করবে চালকেরা। ফলে ‘পে-পার্কিং’ ব্যবস্থা বাড়িয়ে দেবে সড়কের বিশৃঙ্খলা।


এ বিষয়ে সিডিএর অথরাইজড কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইলিয়াস বলেন, ‘ভবনের অনুমতি না নিয়ে অনেকেই ভবন করেন। আবার মার্কেট ও ভবন করলেও গাড়ির জন্য পার্কিং এর জায়গা রাখেন না। বলা যায়, সকল সংস্থার সমন্বয় নেই বলে নগরীতে যানজট দিন দিন তীব্র হচ্ছে।’


বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘দুর্নীতি আর অপেশাদারিত্বের কারণে অনুমোদিত নকশায় কার পার্কিংয়ের স্থানে অবৈধ দোকানপাট বা অন্যান্য স্থাপনা গড়ে উঠেছে।’ আর আইনজীবীরা বলছেন, ‘হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়ন হলে কমতে পারে যানজট।’ যদিও সাধারণ নাগরিকরা বলছেন, ‘চসিক, সিডিএ, বিআরটিএ যানজটের দায় এড়াতে পারে না। কেননা, এসব বিষয় পুরোটা ট্রাফিকের নিয়ন্ত্রণে নেই।’ যদিও গত দুই বছরে সিএমপি ট্রাফিক একাই লড়ছেন যানজটের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক উত্তর জোনের উপ-কমিশনার (ডিসি) জয়নুল আবেদীন টিটুর বেশ কিছু উদ্যোগ প্রশংসা কুড়িয়েছে নগরবাসীর। এর সুফল গত দুই বছর থেকে পাচ্ছেন নগরবাসী। হয়তো একটু মোড় ঘুরে যেতে হয় বলে ভোগান্তির কথাও জানান নানাজনে। তবুও বর্তমানে একটা শৃঙ্খলায় এসেছে নগর ট্রাফিক।


সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল মান্নান মিয়া জানান, ‘নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ সড়ক যানজটমুক্ত রাখতে নিয়মিত ব্যবস্থা নিচ্ছে। বিভিন্ন স্থানের অবৈধ বাজার, পার্কিংসহ অবৈধ অবকাঠামো সরিয়ে নিতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।’


চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘নগরীতে যানজটকে সবচেয়ে বড় সমস্যা। যানজট সমস্যা অসহিষ্ণু মাত্রায় পৌঁছে গেছে। যানজটের ফলে কর্মব্যস্ত নাগরিকের মূল্যবান কর্মঘণ্টার অপচয় হচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব জাতীয় অর্থনীতিতে পড়ছে। যানজট সমস্যা সমাধানে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বন্দর কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ প্রশাসনের ট্রাফিক বিভাগের সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।’


বিবার্তা/জাহেদ/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com