বঙ্গবন্ধুকে এখনও খুঁজে বেড়ান আব্দুস সাত্তার নড়াইল থেকে
প্রকাশ : ১৬ আগস্ট ২০২৩, ১২:১৭
বঙ্গবন্ধুকে এখনও খুঁজে বেড়ান আব্দুস সাত্তার  নড়াইল থেকে
এস এম শরিফুল ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

সদ্য স্বাধীন বাংলার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে খুলনার সার্কিট হাউজ মাঠে এক জনসভায় নাম দেন বেদুইন সাত্তার। তিনি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার মোল্যা (৯৬)।


নানা সংগ্রাম আর প্রতিবাদের মধ্যে কাটানো সাত্তার মোল্যা বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগে অনেকটা স্মৃতিশক্তিহীন। একা চলতে পারেন না। হুইল চেয়ারে বসে কখনও ছেলে, কখনও ছেলের বৌয়ের হাত ধরে ঘরের বাইরে যান তিনি।


স্মৃতিতে সবই আছে, কিন্তু বয়সের ভারে কথাবার্তা কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর দেওয়া বেদুইন উপাধি নিয়ে আজও চারিদিকে বঙ্গবন্ধুকে এখনও খুঁজে বেড়ান এ মুক্তিযোদ্ধা।


তৎকালীন নড়াইল মহাকুমার বিষ্ণুপুর গ্রামের ব্রিটিশ আন্দোলনের নেতা নোয়াই মোল্যার ছেলে আব্দুস সাত্তার মোল্যা। তিনি ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলীমলীগ প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুর ভক্ত হয়ে যান। ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু তাকে নড়াইল সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই যেখানেই বঙ্গবন্ধুর সভা সেখানেই ছুটে যেতেন তিনি। সেটি খুলনা হোক অথবা চট্টগ্রাম, কিছুই তাকে থামিয়ে রাখতে পারতো না। বঙ্গবন্ধুর বেদুইন সাত্তার নড়াইলের নিভৃত একজন রাজনীতিবীদ। ৬ ফুটের বিশাল দেহের অধিকারী যুবক সাত্তারকে সবাই একটু সমীহ করতেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধে যোগ দেন। তাকে হত্যা করার উদ্দেশে বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দেয় পাক হানাদার বাহিনী। ঘরে ঢুকে রাজাকাররা গুলি করে হত্যা করে আপন ছোটভাই গোলাম সরোয়ারকে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন বড়ভাই জাফর আহম্মেদ। কিন্তু তখন তিনি বাড়ি না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। পরে পালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কাজ করতেন তিনি।


মুজিব প্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে নড়াইল শহরে ফিরে জানতে পারেন, স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার খবর। এটি শুনে তিনি মনে প্রচন্ড আঘাত পান। পরদিনই পত্রিকায় খবর ছাপা হয়, তা থেকে তিনি জানতে পারেন নিজের বাড়ির সিড়িতেই বুলেটে শেষ হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। সিঁড়িতে খালি পায়ে বঙ্গবন্ধুর মরদেহ পড়ে থাকার কাহীনি শুনে প্রতিজ্ঞা করেন জীবনে আর কখনও স্যান্ডেল পায়ে দিবেন না, কম্বল গায়ে দেবন না, রোদ বৃষ্টি যা-ই হোক ছাতা ব্যবহার করবেন না। যেমন প্রতিজ্ঞা তেমনই কাজ। এরপর থেকে খালি পায়ে হেঁটে বেড়াতেন বেদুইন সাত্তার। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর ৫ খুনির ফাঁসি কার্যকরের খবর শুনে ৩৫ বছর পরে স্যান্ডেল পায়ে দেন এই বঙ্গবন্ধু ভক্ত।


কালিয়া উপজেলার কলিমন খালী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা সরোয়ার শেখ বলেন, আগরতলা মামলার সময় আমাদের এলাকা থেকে টাকা চাঁদা তুলে তা বঙ্গবন্ধুর কাছে পৌঁছে দিতেন ছাত্তার। বঙ্গবন্ধু তাকে খুবই স্নেহ করতেন। খুলনায় এক জনসভায় তার নাম দিয়েছিলেন বেদুইন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে তিনি খালি পায়ে হেঁটেছেন বহুদিন।


বেদুইন সাত্তারের ছেলে চাচুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হীরক বলেন, ২০১৬ সালে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করে আমার পরিচয় দেই। তিনি তাৎক্ষণিক বাবার খোঁজ খবর নেন। বাবাকে তিনি ছোটবেলা থেকেই চিনতেন জানিয়ে বলেন, চাচাকে আমার জন্য দোয়া করতে বলবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী বাবার জন্য কিছু উপহার সামগ্রী দেন আমার কাছে।


নড়াইল জেলা মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ডেপুটি কমান্ডার অ্যাডভোকেট এস এ মতিন বলেন, সাত্তার ভাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ একজন সহচর। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পরে তিনি বহুদিন জুতা-স্যান্ডেল পায়ে দেননি। তিনি একজন প্রকৃত শেখ মুজিব প্রেমী


বিবার্তা/শরিফুল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com