‘মিন্নির ষড়যন্ত্রে রিফাত খুন হইছে, ওর ফাঁসি দেখে শান্তিতে মরতে চাই’
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৩, ১৮:০২
‘মিন্নির ষড়যন্ত্রে রিফাত খুন হইছে, ওর ফাঁসি দেখে শান্তিতে মরতে চাই’
বরগুনা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

২৫ জুন, রবিবার। বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের চার বছর পূর্ণ হলো আজ।


আজও রিফাত প্রসঙ্গে কথা বলতেই কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে তাঁর মা ডেইজি আক্তারের। শাহনেওয়াজ শরীফ রিফাতের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর ছেলের শোক কিছুতেই কাটাতে পারছেন না। এর পর থেকেই মা ডেইজি আক্তার অসুস্থ।


রিফাতের কথা জানতে চাইতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন মা ডেইজি। তিনি বলেন, ‘আমার পোলারে যারা কোপাইয়া মাইরা হালাইছে, আমি ওগো সবের ফাঁসি কার্যকর দেখতে চাই। মিন্নির ষড়যন্ত্রে আমার পোলা খুন হইছে, আমি ওর ফাঁসি দেইখ্যা শান্তিতে মরতে চাই।’
ডেইজি আরও বলেন, ‘আমার কলিজার টুকরা বাবারে ওরা মেরে ফেলল। আল্লাহ যেন এমন পরিস্থিতিতে আর কোনো মা-বাবাকে না ফেলে। আমরা আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। এখন শুধু দ্রুত দণ্ড কার্যকরের দাবি রইল।’


বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড় লবণগোলা এলাকায় রিফাত শরীফের বাড়ি। বাড়িতে প্রবেশের পথেই রিফাতের কবরস্থান। টাইলস দিয়ে বাঁধাই করে রেখেছেন। বাবা দুলাল শরীফ হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত। একমাত্র ছেলে হারিয়ে অসুস্থ রিফাতের মা-বাবার দিন কাটছে অতি কষ্টে। পরিবারের আয়ের উৎস বলতে একমাত্র পৈতৃক সম্পত্তি।


ছেলেকে হারিয়ে আশার আলোও নিভে গিয়েছে দুলাল-ডেইজি দম্পতির। একমাত্র মেয়ে ইসরাত জাহান মৌ একদিকে পড়াশোনা অপর দিকে মা-বাবার সংসারের কাজকর্ম সামাল দেন। নিহত রিফাতের পরিবারের দাবি মামলার বিচারিক কার্যক্রম দ্রুত শেষ করা হোক।


২০১৯ সালের এই দিনে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির সামনে সন্ত্রাসীরা রিফাতকে কুপিয়ে জখম করে। তাঁকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে বিকেলে তিনি মারা যান। পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। মামলার প্রধান আসামি সাব্বির আহম্মেদ ওরফে নয়ন বন্ড ওই বছরের ২ জুলাই পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।


২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আলোচিত এই মামলার রায় দেন আদালত। রায়ে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির মধ্যে রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকাসহ ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।


মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৩), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২১), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (১৯), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২২), মো. হাসান (১৯) ও আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি (১৯)।


এছাড়া একই বছরের ২৭ অক্টোবর অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। রায়ে ৬ আসামিকে ১০ বছর করে, ৪ আসামিকে ৫ বছর করে এবং ১ আসামিকে তিন বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি ৩ আসামিকে খালাস দেন আদালত।


নিয়ম অনুযায়ী, আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের জন্য একই বছরের ৪ অক্টোবর (ডেথ রেফারেন্স) মামলার যাবতীয় কার্যক্রম উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়। ২০২০ সালের ৬ অক্টোবর মিন্নিসহ আসামিরা উচ্চ আদালতে খালাস চেয়ে ফৌজদারি আপিল করেন। সেটি জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জরিমানাও স্থগিত করেন। একই বছরের ১৬ অক্টোবর মিন্নি জামিন চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন। এরপর ২০২১ সালের ১৯ জানুয়ারি খালাস চেয়ে আপিল করেন আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। এ বছর ১১ জানুয়ারি বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি বিশ্বজিৎ দেবনাথের হাইকোর্ট বেঞ্চ মিন্নির জামিন আবেদন শুনতে অপারগতা প্রকাশ করেন।


এরপর ২০২৩ সালের ৮ মে ফের জামিন আবেদন করেন শরীফ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আয়শা সিদ্দিকা মিন্নি। বর্তমানে জামিন আবেদন শুনানির জন্য হাইকোর্টের কার্যতালিকায় এসেছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী মো. শাহীনুজ্জামান খান। তিনি জানান, নিজের আইনজীবী জেড আই খান পান্না ও এ এম জামিউল হক ফয়সালের মাধ্যমে জামিন আবেদনটি জমা দিয়ে মিন্নি জানিয়েছিলেন, তিনি এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। বরং তার স্বামী রিফাতকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন।


২০১৯ সালের ২৬ জুন ভরদুপুরে বরগুনা জেলা শহরের কলেজ রোডে প্রকাশ্যে কোপানোর ঘটনার একটি রোমহর্ষক ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, ২৬ জুন সকাল ১০টার দিকে স্ত্রী মিন্নিকে আনতে বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে যান রিফাত। কিছুক্ষণ পর কলেজগেটে বন্ড বাহিনীর সদস্যরা তাকে প্রকাশ্যে কোপানো শুরু করে। দুই যুবক রামদা হাতে রিফাতকে একের পর এক আঘাত করে চলেছেন। আর তাঁর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি এসে স্বামীকে বাঁচানোর জন্য হামলাকারীদের ঠেকানোর চেষ্টা করছেন।


পরে রিফাতকে উদ্ধার করে বরগুনা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ওই দিন বিকেলে মৃত্যু হয় তার।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com