শিরোনাম
তাজমহলের অসম্মান : বেন্টিঙ্ক থেকে আদিত্যনাথ
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০১৭, ১৬:২৯
তাজমহলের অসম্মান : বেন্টিঙ্ক থেকে আদিত্যনাথ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

তাজমহল বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্য, ভারতের গর্ব। কিন্তু দেশটির উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তর সম্প্রতি তাদের এক বুকলেটে দেশি-‌বিদেশি পর্যটকদের কাছে রাজ্যের কী কী আকর্ষণীয়, ছবিসহ তার তালিকা প্রকাশ করেছে, যেখানে তাজমহলের নামটি পর্যন্ত নেই।


অথচ আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিদের ভারত সফরে তাজমহল থাকে ‘‌মাস্ট ভিজিট'‌-‌এর তালিকায়। তবে যোগী আদিত্যনাথ যে-রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, সে রাজ্যে মুসলমান সম্রাটের পত্নীপ্রেমের অনন্য নিদর্শন তাজমহলের যে উল্লেখ থাকবে না, এ তো স্বতঃসিদ্ধ। আদিত্যনাথ সরকারের একটি উক্তিতেই এটা পরিষ্কার। গত বছর জুন মাসেই তিনি বলেছিলেন, ‘‘‌‌ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতীক গীতা ও রামায়ণ, তাজমহল নয়।'‌'‌ বিদেশি পর্যটকদের তাজমহলের রেপ্লিকা উপহার দেয়ারও সমালোচনা করেছিলেন তিনি। বলেছিলেন, ‘‌‘‌এটা ভারতীয় সংস্কৃতির অংশ নয়।'‌'‌


তবু তো ভালো যে ২০১৭ সালের ইউপি'‌র ট্যুরিজম বুকলেটে তাজমহল কেবল অনুপস্থিত। কিন্তু এর বদলে কেউ যদি আস্ত তাজমহলটিই বিক্রি করে দিতেন অথবা দিতে চাইতেন?‌


পাঠক, এ প্রশ্ন শুনে কি মনে মনে হাসছেন আর ভাবছেন, এও কি সম্ভব? কিন্তু আপনি যা-ই ভাবুন, এ রকম অপচেষ্টা একবার অন্তত হয়েছিল। ১৮৩১ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর জেনারেল, যাঁকে আমরা সতীদাহ রদ করার জন্য অত্যন্ত ‘‌প্রগতিশীল'‌ মনে করি, সেই উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক এই তাজমহলকেই নিলামে চড়িয়েছিলেন।


এই সত্য ঘটনার কথার সূত্র একটি বই—‌‘ দ্য জার্নাল অফ ফ্যানি পার্কস : বেগমস, থাগস অ্যান্ড ইংলিশম্যান' সম্পাদনা করেছেন উইলিয়াম ডালরিম্পল, ২৬ জুলাই, ১৮৩১। ''কলকাতার বিশেষ খবর'' উল্লেখ করে তিনি লিখেছেন, গভর্নর জেনারেল আগ্রা দুর্গের ভেতরের অত্যন্ত সুন্দর মোতি মসজিদ বিক্রি করে দিয়েছেন। বিক্রি করে ভারত সরকার পেয়েছে ১,২৫,০০০ টাকা (‌প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পাউন্ড)‌। এখন মসজিদটি ভাঙার কাজ চলছে। তাজমহলও বিক্রির জন্য নিলামে চড়েছিল, কিন্তু সরকার যে দাম আশা করছিল, তা জোটেনি বলেই বিক্রি হয়নি। দু'‌লাখ টাকা দর হেঁকেছিলেন একজন ব্যবসায়ী।
শুধু দরে বনেনি বলেই নয়, ফ্যানি লিখছেন, তাজমহল বিক্রি করলে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের ক্ষেপে যাওয়ার আশঙ্কাও ছিল।


এরপর ফ্যানি লিখেছেন, এ ঘটনা সত্য হলে তা কি লজ্জাজনক হতো না?‌ যদি ইংল্যান্ডের বর্তমান রাজা মাত্র সাড়ে বারো হাজার পাউন্ডের জন্য ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে রাজা সপ্তম হেনরির চ্যাপেলটি বেচে দেন, তাহলে যে কাণ্ড হতো, তাজমহল বিক্রির অপচেষ্টাও কি তার তুল্য নয়?‌


এরপরই দিনলিপিতে ফ্যানির প্রশ্ন,‌ কোন অধিকারে গভর্নর জেনারেল তাজমহল বিক্রির কথা ভাবলেন?‌ তাঁর কি মৃতকে অসম্মান করার অধিকার আছে?‌ উনি কোন সমাধি স্তম্ভটি বেচার কথা ভেবেছিলেন, যা এক অনন্যসুন্দরী সম্রাজ্ঞীর স্মৃতিতে নিবেদিত, স্থাপত্যে বিশ্বের বিস্ময়‌। এটা অসম্ভব যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির পরিচালক সমিতি কোর্ট অফ ডিরেক্টর্স তাজমহলের পাথরের জন্য বেচার কথা চিন্তাও করতে পারে। শুনেছি, এক হিন্দু তাজমহলের মার্বেল পাথর দিয়ে বৃন্দাবনে তার আরাধ্য দেবতার মন্দির বানাবে। সে তাজের জন্য দু'‌লাখ টাকা দিতে চেয়েছিল।



স্যার যদুনাথ সরকারের দেয়া হিসাব অনুযায়ী, তাজমহল গড়তে শাহজাহানের খরচ হয়েছিল পঞ্চাশ লাখ টাকা৷ এবং তা হয়েছিল লাট সাহেব উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক-এর তাজমহল বিক্রি অপচেষ্টার দু'‌শ' বছর আগে।


আর তারও বহু বছর পর এসে এক হিন্দু মৌলবাদী মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, ''তাজমহল ভারতের ঐতিহ্য নয়।'' এও তাজমহলকে বিক্রি বা অদৃশ্য করে দেয়ার একটা সুস্পষ্ট অপচেষ্টা বৈ আর কিছু নয়। এ সম্বন্ধে ইতিহাসবিদ অশোক মিশ্র বলেন, ‘‌‘‌বিজেপি-‌শাসিত যোগী আদিত্যনাথ সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তা না হলে এমন হাস্যকর কাণ্ড কেনইবা ঘটানো হবে? পর্যটকদের কাছে তাজমহল একটি অবশ্যদর্শনীয় স্থান। পর্যটকরা তাজের সৌন্দর্য উপভোগ করলে উত্তরপ্রদেশ তথা ভারত লাভবান হয়। তাজের সম্মানহানির চেষ্টা আগেও বহুবার হয়েছে। এবার পর্যটনতালিকা থেকে তাজমহলের নাম বাদ দিয়ে বিদেশের কাছে ভারতের সম্মান ক্ষুন্ন করা হলো মাত্র।'' সূত্র : ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com