সুরো কৃষ্ণ চাকমা বাংলাদেশের সেরা বক্সার
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:৩১
সুরো কৃষ্ণ চাকমা বাংলাদেশের সেরা বক্সার
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

হতে চেয়েছিলেন ফুটবলার, তবে হয়ে গেলেন দেশ সেরা পেশাদার বক্সার। রাতে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের রিংয়ে কঠিন লড়াই করে এশিয়ান বক্সিং ফেডারেশনের সুপার লাইটওয়েটের শিরোপা জিতেছেন সুরো কৃষ্ণ চাকমা। পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লেখানোর পর এখন পর্যন্ত ৬টি ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাঙ্গামাটি থেকে উঠে আসা এই বক্সার। নেপালের মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদকে আট রাউন্ডে হারিয়ে চারদিক থেকে অভিনন্দন বার্তা পাচ্ছেন।


শুরুতে বিকেএসপিতে ফুটবল ডিসিপ্লিনে ভর্তি হতে চাইলেও থিতু হতে হয়েছে বক্সিংয়ে। এ নিয়ে আফসোস থাকলেও এখন বক্সিংয়ের বিশ্ব মঞ্চে নিজেকে দেখতে পেয়ে ফুটবলার হতে না পারার আক্ষেপ অনেকটাই ঘুচেছে।


২০০৭ সালে বিকেএসপিতে ভর্তির সময় ফুটবলে জায়গা না পেয়ে অনেক খারাপ লেগেছিল সুরোর। দেশের ফুটবলে যে অর্থ ও গ্ল্যামার, তা তাকে সেই বয়সেই বেশ টানতো। কিন্তু ভাগ্য সহায় না হওয়ায় বক্সিংয়ে যেতে হয়েছে। মন খারাপ হলেও আস্তে আস্তে পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। ২০১৮ সালে প্রথম পেশাদার বক্সিংয়ে নাম লেখান। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এখন তো টানা ছয়টি ম্যাচ জিতে এশিয়ান বক্সিং ফেডারেশনে আলাদা করে নিজের নাম তুলে ধরেছেন।


সুরো সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ফুটবলার না হতে পেরে এখন আর মনের মধ্যে কোনও আফসোস নেই, শুরুতে অনেকটাই ছিল। হয়তো ফুটবলার হতে পারলে অর্থ ও যশ অনেক থাকতে পারতো। তবে এখন বক্সিংয়ে এসে নিজের আলাদা জগত হয়েছে। এখানে আন্তর্জাতিক স্তরে ভালো করছি। দেশের নাম উজ্জ্বল হচ্ছে। সামনে অনেক দূর যাওয়ার সুযোগ আছে। তাই পেছনে ফিরে তাকাই না।


রাতে নেপালের মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদের বিপক্ষে লড়াইটি ছিল তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। কিন্তু আট রাউন্ডের বাউটে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অপরাজেয় থাকার ছন্দটা ধরে রাখেন সুরো। লড়াইয়ে এক পর্যায়ে তার মনে হচ্ছিল নক আউট না হয়ে যান!


সুরো নিজেই বলছিলেন, নেপালের বক্সার খুব রাফ অ্যান্ড টাফ খেলছিল। সে চাইছিল কোনোভাবে আমাকে ইনজুর্ড করে ম্যাচ তার পক্ষে নিয়ে যেতে। আমি ইনজুর্ড হয়ে খেলতে না পারলে তখন সে জিতে যাবে। যদিও তার পয়েন্ট কমবে। কিন্তু তাতে কী। আমার রক্ত পড়া চলতে থাকলে তো শেষ পর্যন্ত সে জিতে যাবে। তাই আমাকে অনেকটাই দেখেশুনেই খেলতে হয়েছে। আমি মহেন্দ্র বাহাদুরকে সেই সুযোগটা দিতে চাইনি। শেষ পর্যন্ত দেখে শুনে লড়াই করে ম্যাচ জিতেছি।


বর্তমানে রাশিয়ান কোচের অধীনে অনুশীলন করছেন সুরো। তার অধীনে বেশ উন্নতি হচ্ছে। ব্যাংককে দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে রাশিয়ান কোচ অনেক টেকনিক শিখিয়েছেন। এখন অনলাইনে চলছে তার অধীনে প্রশিক্ষণ। একসময় সুরো বলেছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের বেল্ট জিততে চান। সেই স্বপ্ন এখনও আছে ৩০ বছর বয়সী বক্সারের।


সুরো বলেন, দেখুন আমি পেশাদার ও অপেশাদার বক্সিং চালিয়ে গেছি গত বছর পর্যন্ত। এখন শুধু পেশাদার খেলছি। দুটো এক সঙ্গে চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। এখন পর্যন্ত ৬টি ম্যাচ খেলে সবকটিতেই জিতেছি। যদি ১০ থেকে ১২টি ম্যাচ জিতে যেতে পারি, তাহলে বিশ্ব মঞ্চে আরও বড় আকারে খেলার সুযোগ আছে। প্রথমার এশিয়ান বক্সিং ফেডারেশনের বেল্ট পেয়েছি। সামনে সুযোগ হবে ইউরোপসহ অন্য মহাদেশের বক্সারের সঙ্গে খেলার। আমার যা বয়স তাতে করে ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে বিশ্ব মঞ্চে বড় আকারে নিজেকে দেখার সুযোগ রয়েছে।


রাঙামাটি শহর থেকে নৌপথে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পেরিয়ে সুর কৃষ্ণ বাড়ি জোড়াছুড়ি যেতে হয়। নৌকাই নাকি যাওয়ার একমাত্র পথ। সেই প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠে এসে সুর কৃষ্ণ এখন বাংলাদেশের বক্সিংয়ের আলোচিত নাম। তাঁর পরিবারের কেউ বক্সিং করেননি।সুরোর স্বপ্ন আকাশের মতো বিশাল। সেই স্বপ্নের ডালপালা এখনই মেলে ধরতে পেরেছেন। সামনে নিশ্চয়ই কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে পারবেন সেই আশা বুকের মাঝে লালন করে এগিয়ে চলেছেন।


৩০ সেপ্টেম্বর, শনিবার রাতে শেষ হওয়া প্রো-বক্সিং চ্যাম্পিয়নশিপ ২.০ ফাইট নাইটে আটটি বাউটের মধ্যে এটিই ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় বাউট। যার জন্য হলভর্তি আমন্ত্রিত অতিথি আর দর্শকেরা মধ্যরাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতেও রাজি ছিলেন। ঢাকার ইন্টার কন্টিনেন্টাল হোটেলের বিশাল বলরুমের আলোঝলমলে রিংয়ে নামলেন সুরো কৃষ্ণ চাকমা। তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাতে নামেন নেপালের মহেন্দ্র বাহাদুর চাঁদ। সুরো কৃষ্ণ নিরাশ করেননি। এশিয়ান বক্সিং ফেডারেশনের সুপার লাইটওয়েট ইন্টারকন্টিনেন্টাল চ্যাম্পিয়নশিপে ঠিকই বাজিমাত করেছেন। হারিয়ে দিয়েছেন নেপালের বক্সারকে।


জয়ী ঘোষণার পর সুরো কৃষ্ণকে পরিয়ে দেওয়া হয় পেশাদার বেল্ট। পেশাদার বক্সিংয়ে যেটি প্রথম কোনো বাংলাদেশি বক্সার হিসেবে পেলেন তিনি। আর সেই বেল্ট পরে উচ্ছ্বসিত সুরো কৃষ্ণ রাত প্রায় ১২টার দিকে রিংয়ে দাঁড়িয়ে একের পর এক ছবি তোলার জন্য পোজ দিচ্ছিলেন। চারপাশে করতালির শব্দ। প্রতিক্রিয়া জানানোই কঠিন হয়ে যাচ্ছিল সুরো কৃষ্ণের জন্য।


বিবার্তা/পুলক/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com